ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে (চতুর্দশ পর্ব) সায়ন্তন ধর
ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে (চতুর্দশ পর্ব)
সায়ন্তন ধর
দশমীতে বাঙালির মন খারাপ হয়ে গেলেও একাদশী থেকেই ‘আসছে বছর আবার হবে’ মনে করে নতুন উদ্যম এসে যায়। আমিও সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম অফিসের উদ্দেশ্যে। জুনিয়র কলিগ বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাই অফিসে আসবে না। পরিবর্তে আজ এক কলিগ দাদা ও অফিসের সেকেণ্ড বস আসবেন। গড়পড়তা অফিসিয়াল কাজ শেষ হলো সন্ধ্যা ছ’টায়। স্থানীয় কলিগ দাদা বাইকে করে পৌঁছে দিল আমিনগাঁও চেক গেটে। আমি বাস ধরে চলে যেতে পারবো বললেও যতক্ষণ না বাস আসছে দাদাও দাঁড়িয়ে থাকলো। পরদিন এখানেই অপেক্ষা করতে বললো সকালে, তাহলে আই আই টির ভিতরে দীর্ঘ পথ আর হাঁটতে হবে না। খানাপাড়া পৌঁছাতে আটটা বেজে গেলো। রাস্তায় ভয়ানক জ্যাম। একবারে খেয়ে নিলাম। খানাপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে সায়েন্স সেন্টারে যাওয়ার ৫০০ মিটার রাস্তাটা সন্ধ্যার পর থেকে ওয়াকিং জোনে পরিণত হয়। রাস্তাটির দুটি এন্ট্রান্সে নো এন্ট্রি করে দেওয়া হয়। ট্রাফিক পুলিশ থাকে। সাধারণ মানুষ এখানে হাঁটতে, জগিং করতে, দৌড়াতে আসেন। এই পথ দিয়েই ফিরছি। চওড়া রাস্তা জুড়ে প্রমাণ সাইজের ব্যাডমিন্টন কোর্ট রয়েছে। সেখানে নেই কোন গাড়ির গর্জন বা টু হুইলারের চোখ রাঙানি। সবাই কি নিশ্চিন্তে খেলে চলেছে। এভাবেই ফিরে এলাম গেস্ট হাউসে। পরদিন আবার সেই পথেই। আমিনগাঁও চেক গেটে নেমে অপেক্ষা করছি। সঠিক সময়ে দাদার বাইকে করে চলে এলাম অফিসে। গলি রাস্তায় শর্টকাটে চলে এলাম বেশ। টিফিনের পর স্যার একটু আমাকে নিয়ে বেরোলেন কিছু প্ল্যান্ট স্পেসিমেন জোগাড়ের জন্য। হঠাৎ দেখা মিললো শিরিষ ফুলের। শিরিষ ফুল দেখতে একদম পাউডার পাফ ক্যালিয়েণ্ড্রার মতো। আগেও দেখেছি অনেক। কিন্তু এত নীচে কখনো দেখিনি। যারফলে ছবিও নেওয়া হয়নি কখনও। এদিকে মোবাইলটা অফিসেই ফেলে এসেছি। স্যারকে বললাম, “একটা ছবি তুলতাম, মোবাইলটা একটু দেবেন?” স্যার নিজেই ছবি তুলে দিলেন। তারপর একটা প্লেগ্রাউণ্ড চোখে পড়লো। একধারে কাশ জাতীয় ফুলে সাদা হয়ে আছে। পড়ন্ত সূর্যের আলো পড়ে কিছু অংশ সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। এবারও ছবি তুললাম। এই ফুলগুলোকে কাশের সাথে তুলনা করলেও এগুলো মোটেও কাশ নয়। এদের বিজ্ঞান সম্মত নাম তো ইম্পেরাটা সিলিণ্ড্রিকা, কিন্তু সাধারণ নাম আমি কখনোই পাইনি। স্যারকে জিজ্ঞেস করায় বললেন উলু ঘাস। হায়! কত শুনেছি উলু বনে মুক্তা ছড়ানো… অথচ এই প্রথম জানলাম এগুলোই উলু ঘাস। যাই হোক এই পাওনার সাথে সাথে আরও কিছু পাওনা হয়েছিল সেই বিকেলে। একজন সিনিয়র কলিগ তথা স্যার যখন বন্ধুর মতো মেশেন তখন একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। একটা বিলের পাশে কাঠের বসার জায়গায় বসলাম। জলের ওপর দিয়ে আসা বাতাসেরা ঠাণ্ডার ঝাপটা দিতে লাগলো যেন। স্যার কিছু গাছ চেনালেন। তারপর আবার ফিরে এলাম অফিসে। আজ অফিসে শেষ দিন। এরপর ব্রহ্মপুত্রের পাড় থেকে বরাক পাড়ে যাওয়ার পালা। একই ভাবে ফিরে এলাম অস্থায়ী আস্তানায়। লাগেজ গুছিয়ে গেস্ট হাউসের বিল পেমেন্ট করে ক্যাব বুক করে সোজা গুয়াহাটি স্টেশন। গুয়াহাটি শিলচর এক্সপ্রেসের অপেক্ষা। বরাক উপত্যকার গল্প এই সিরিজে বলবো না। ওটা অন্য কখনও হবে। তবে ব্রহ্মপুত্র নিয়ে লেখার রসদও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। নদ বন্ধু যদি আবার ডাক দেয়, আবার তার গল্পের ডালি উজাড় করে দেয় আমার কাছে, তখন আবার গল্প হবে।