উপন্যাস ঘটনা রটনা এবং তারপর! পর্ব(২)
উপন্যাস
ঘটনা রটনা এবং তারপর!
পর্ব(২)
যাজ্ঞসেনী বেডরুমের দরজা খুলে,বেরিয়ে এসে দেখল,বাবা ডাইনিং টেবিলে বসে নিউসপেপারে চোখ বোলাতে বোলাতে ব্রেকফাস্ট খাচ্ছেন!
তার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলেন,”মাম!শরীর ঠিক আছেতো সোনা! কাল না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লি,
আজ অ্যাতো দেরী করে উঠলি!”
কথার উত্তর না দিয়ে, যাজ্ঞসেনী টাওয়েলটা টেনে বাথরুমে ঢুকে পড়লো…..
মেয়ের হঠাৎ করে এরকম উন্নাসিক বিহেভিয়ার দেখে,
বিস্মিত চোখে পারমিতা এবং যুগান্তিক দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলেন!
:
:
মেয়েটা আজ অন্যদিনের চাইতে বেশিই সময় নিচ্ছে বাথরুমে__কিছুক্ষণ উসখুস করার পর পারমিতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আর না থাকতে পেরে হাঁক দিলেন,
“মাম,আর কতোক্ষণ বাথরুমে থাকবে তুমি? আমার বেরোবার সময় হয়ে গেল! একঘন্টা ধরে কি করছো তুমি বাথরুমে?”
_”ওয়েট করছো কেন? বেরিয়ে যাও তুমি!” শাওয়ারের আওয়াজের সাথে ভেসে এলো যাজ্ঞসেনীর কন্ঠস্বর,
_”আমি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, তোমাকে ড্রপ করে দিতাম!”
ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ নেই!
রক্তের পারদ চড়ছে,পারমিতার! এরকম বেয়াড়া আচরণ করছে কেন মেয়েটা! প্রেমে পড়লো নাকি ড্রাগ অ্যাডিক্ট হলো!
একটা ফয়সালা করেই,আজ বের হবেন তিনি!
বাপের আদরে উচ্ছনে যাচ্ছে দিন দিন!
ঘড়ির কাঁটার সাথে সাথে চলতে ভালোবাসেন পারমিতা।
সুস্থ,সুন্দর, স্বাবলম্বী, সফল,সার্থক তাঁর জীবনের মূলমন্ত্রই হলো নিয়মানুবর্তিতা।
দীর্ঘ, ঋজু, সুঠাম, তাঁর দেহের গড়ন।
এই শহরে ‘ছন্দম’ আর ‘ঝঙ্কার’ বলে দু’খানা নাচের স্কুলের মালকিন এবং শিক্ষিকা তিনি!
একটা সময় নাচ এবং মডেলিং এই তাঁর ধ্যানজ্ঞান ছিল।
ইদানীং গালের উপর মেচেতার দাগ আর বয়সের কারণে,মডেলিং থেকে সরে এসে,আরও বেশি করে নাচে মনোনিবেশ করেছেন! এছাড়াও রোটারী ক্লাব, লাইন’স ক্লাব, এন জি ও নিয়ে ব্যস্ত থাকেন পারমিতা!
যাজ্ঞসেনী চান সেরে বেরোনোর পর, পারমিতা টানটান স্বরে, “মাম! তুমিতো জানো, আমি ডিসিপ্লিন ব্রেক করতে একদম পছন্দ করিনা!”
_”এই কথাটা আমাকে শোনাচ্ছো কেন?” চুল ঝাড়তে ঝাড়তে উত্তর দিল যাজ্ঞসেনী।
কোমর ছাপানো ভাঙা ভাঙা একমাথা চুল তার,
যুগান্তিকের পছন্দে মেয়ের এই লম্বা চুল রাখা।
এবার উষ্মার সাথে বললেন পারমিতা,
“তুমি কি আমার সঙ্গে যাবেনা? পাবলিক ভেহিকেলসে কিন্তু কষ্ট হবে তোমার!”
_”ফো!আমার কষ্ট! নিজের সংসার আর,নিজের প্রতি এবার খেয়াল দাও!আর শোনো,তোমাদের সব্বাইকে আমি ঘৃণা করি!”
_”কি হয়েছে তোর, অ্যাতো রুড কেন তুই? বল,বল আমায়!” যাজ্ঞসেনীর কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন পারমিতা।
_”কিছু হয়নি, তুমি কাজে যাও, আমি আজ কলেজ যাবোনা।” হঠাৎই ভীষণ নির্লিপ্ত শান্ত স্বরে কথাগুলো বলে, বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো যাজ্ঞসেনী।
গতকাল,বাংলার লেকচারার অমিয় মুখার্জীর মৃত্যুর খবরে কলেজ ছুটি ছিল।
তানিয়া, বৈষ্ণবীদের সাথে আড্ডা না মেরে,সে বাড়ি চলে এসেছিল দুপুরবেলা। অসময়ে আসাটাই বুঝি কাল ছিল তার!
বন্ধ দরজাটা খুলে, নিজের রুমে যাবার আগে, বাবা মায়ের রুম থেকে এক অসোয়াস্তিকর আওয়াজ কানে আসতেই যাজ্ঞসেনী ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়েছিল সেইদিকে….
ভেজানো দরজাটা হালকা করে ঠেলে,আবছা আলো আঁধারে দুটো সঙ্গমরত মানুষকে ডিভানের উপর দেখে, একটু থতমত, একটু কেমন কেমন হয়ে গিয়েছিল যাজ্ঞসেনী! শিরশিরে অনুভূতি মাথা থেকে মেরুদণ্ড বেয়ে নীচের দিকে বইতে শুরু করেছিল!
সে ভেবেছিল_ সে নাহয় অসময়ে কলেজ থেকে ফিরে এসেছে, মা-বাবাও সময়ের আগে ঘরে হাজির!
যাজ্ঞসেনী,ছোটোতে মা বাবাকে ,লিপ-লক না হলেও হালকা পুলকা কিস-মিস করতে দেখছে, কিন্তু এরকম শারীরিক মিলন, নৈব নৈব চ!
দরজাটা ভেজিয়ে সে বেরিয়ে আসতে আসতে শুনলো_ খালি দুষ্টুমি না! যেটা করতে বারণ করবো, সেটাই বেশি বেশি চায় তোমার! তার সাথে সঙ্গত দিচ্ছে মহিলা পুরুষ, দুজনের আরামের গোঙানি!
চমকে উঠলো যাজ্ঞসেনী!
এ তো তার মায়ের গলার আওয়াজ নয়!
( ক্রমশঃ)