রিম্পাদের ভবিষ্যৎ, #মৌসুমি

রিম্পাদের ভবিষ্যৎ,

#মৌসুমি

“ওমা ও কি রিম্পি,বইয়ের ব্যাগটা ওইভাবে ছুঁড়ে শুয়ে পড়লি কেন? শরীর খারাপ লাগছে নাকি? লাগলে এখনি বল তোর বাবা কে বলে দেবো অসুধ নিয়ে আসবে।” না মা আমার কিছু হয়নি।।ভাবছি তোমার থেকে মুড়ি ভাজাটা শিখে নেবো।। তোমার হাতে হাতে সাহায্য করবো।।তাতে কাজের সুবিধা হবে আর ঘরে দুটাকা বেশি আয় হবে।। কথাগুলো বলার সময় রিম্পির দুচোখে টলটল করছে জল।।

রিম্পির মা জয়া মন্ডল,মুড়ি ভেজে দোকানে দোকানে সাপ্লাই করে আর বাবা দিলীপ ভ্যান গাড়ি চালায়।।রিম্পি ওদের ছোট মেয়ে।।বড় মেয়ে এবং মেজ মেয়েকে তেমন ভাবে লেখাপড়া শেখাতে পারেন নি। অভাবের কারণে।।রিম্পি খুব মেধাবী ছাত্রী, রেজাল্ট ভাল করে।।সে এখন ক্লাস এইটে পড়ছে।।অঙ্কে কাঁচা ছিল।। কিছুই পারতো না।। কিন্তু যেদিন থেকে তমাল স্যারের ক্লাস করছে সেদিন থেকে রিম্পির অঙ্কে মন এসেছে।।

রিম্পি ওর মা কে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে উঠলো।।”মা, তমাল স্যার আর স্কুলে আসবে না।। শনিবার থেকে ফার্স্ট সেমিস্টার শুরু হচ্ছে।। স্যারের থেকে কিছু অঙ্ক জানার ছিল।। কিন্তু স্যার আর আসবে না।। কতবার স্যারের পড়ানোর সময় গেছি স্যারের ভাড়া বাড়িতে।। কখনো বিরক্ত হননি,টাকাও চাননি।। ভালো করে অঙ্ক বুঝিয়ে দিয়েছেন। স্যার চলে যাবেন এখান থেকে পুরোপুরি।।কার কাছে অঙ্ক শিখবো মা।। স্যার, বললেন ওঁনাদের চাকরি চলে গেছে।”

জয়া ক্লাস ফাইভ অবধি পড়েছে।। ওদের পড়াশোনায় তেমন লক্ষ্য রাখতে পারতো না।। কিন্তু তমাল স্যারের নাম বহুবার শুনেছে রিম্পির থেকে।। জয়া ভাবছে, উনি তো সরকারী চাকরী করতেন,তবে চাকরি চলে গেল কিভাবে? মেয়ে কে জিজ্ঞেস করলো,”তা মা তোর স্যারের চাকরি চলে গেল কিভাবে?রিম্পি চোখের জল মুছে বলল “জানি না মা সবটা।।অত বুঝিনি, তবে সবাই বলা কওয়া করছিল যোগ্য অযোগ্যদের মধ্যে বাছাই করা হবে।।। আচ্ছা মা, তমাল স্যারের মতো অমন অঙ্ক স্যার কেও যদি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয় তবে আমরা কি করবো?”

স্যার বলতেন”রিম্পি তুই ভালো করে পড়াশোনা কর।।তোর মাথা ভালো।। অনেক দুর যাবি তুই।।তাতে কি হয়েছে তোর মা মুড়ি ভাজে আর বাবা ভ্যান চালায়!সবটাই নিজের উপর।। আমার মা তো আমাকে একা মানুষ করেছেন।।আর আমি এখন তোদের শিক্ষক।। আমি আছি তোর পাশে, তুই পড়াশোনা ভালো করে কর রিম্পি “।। মা, আমি আর স্কুলে যাবো না।। স্যার নেই, ভূগোলের দিদিমনি শুভ্রা ম্যাডাম নেই,বাংলার দিদিমনি কনিকা ম্যাডাম নেই।। আমাদের কারুর ভালো লাগছে না আমি আর স্কুলে যাবো না”।।

“লেখাপড়া করে যদি মানসম্মান খোয়াতে হয়,তবে মুড়ি ভেজে দোকানে দোকানে বিক্রি করাই ভালো।।”রিম্পি অঝোরে কাঁদছে।।জয়া চুপ করে মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে।।কি বলে ওকে বোঝাবে?ওর শিক্ষক শিক্ষিকারাই তো ওর অনুপ্রেরণা ছিল,মনের বল ছিল।।রিম্পির কিশোরী মনে যে গভীর ঘা হলো তা কি কখনো সারবে?

জানি না আরও কত রিম্পি,তিশা,অরিত্র, রেজোওয়ানুর রা স্যার ম্যাডাম দের জন্য কাঁদছে।। তাদের প্রিয় স্যার ম্যাডামরা আর কখনো স্কুলে আসবে না,ওরা কেউই কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।। এই নতুন প্রজন্ম কি শিখলো? আবার ওদের কি শিক্ষার উপর আগ্ৰহ আসবে?
কারণগুলো ওদের শুধুমাত্র ওদের বোঝানো যাবে?

স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই হয়।।আর ছাত্রছাত্রীদের মনই যদি ভেঙে যায় তবে কাদের নিয়ে চলবে স্কুল?

হয়তো আগামীর কাছেই আছে এর উত্তর।।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *