ট্রামের গল্প ** অন্তিম পর্ব ** কাবেরী বোস

ট্রামের গল্প
অন্তিম পর্ব
কাবেরী বোস
কলকাতার ট্রাম এক স্বপ্ন , একটা আবেগ , অনেক টুকরো বিকেল , সন্ধ্যে কিম্বা অর্ধেক সন্ধ্যে রাতের মিশেল গল্প নিয়ে চলা এক বড় সুখের সফরনামা… সেরমই এক বিকেলে ট্রামে চেপে বসেছিলো সুধাময় আর তার পুত্র অপূর্ব। সুধাময় বহুদিন এ শহরে কাটিয়েছে তার স্ত্রী নমিতার সাথে এরপর কর্মসূত্রে সেই মুম্বাই তে পাড়ি , সেখানেই অপূর্বর জন্ম বেড়ে ওঠা সবকিছু। এ শহর বড় টানতো তাদের আসতোও তারা কিন্তু আবার চলে যেতে হতো। এভাবেই বছর গুলো কিভাবে যেনো শেষ হয়ে গিয়ে আজ পঁচাত্তর এর বৃদ্ধ সুধাময় , নমিতা পাড়ি দিয়েছে ওপারে তাকে ছেড়ে , ছেলের সাথে একদম বনেনা তার , ছেলে, বৌ কে নিয়ে পুনাতে থাকে, আজ এখানে এই শহরে এসেছে কারণ সুধাময়ের একটা পুরোনো প্রপার্টি ছিলো এখানে সেটা বিক্রি হয়ে গেলো তাই ছেলের সাথে আসা। পরশু ফিরে যাবে দুজনেই গিয়ে সুধাময় থেকে যাবে তার বাড়িতে ছেলে চলে যাবে পুণাতে… ট্রামের জানলার পাশে বসলো সুধাময় আয়েস করে নমিতার সাথে তার আলাপ হয়েছিলো এই ট্রামেই ! তারপর কত কত যে মধুর স্মৃতি ভরা আছে এই শহর এই ট্রামে তার ইওত্তা নেই!! অপূর্ব চুপচাপ সে দেখছে বাবা কে , বাবা অল্প অল্প হাসছে , বহুদিন পর সত্যি ভালো লাগছে , অল্প অল্প হাওয়া মুখে এসে লাগছে, হঠাৎ বাবা প্রশ্ন করলো , আচ্ছা অপু তোমার সাথে মিত্রার কিভাবে আলাপ হয়েছিলো !! অপু একটু অবাক হয়েই বললো , কলেজে আমরা সেইম ব্যাচ ছিলাম বাবা , মনে নেই!! সুধাময় মাথা নাড়লো অল্প অল্প ,তারপর বললো জানো তোমার মা নমি এই ট্রামে চেপে রোজ অফিস যেতো যাবার সময় তো দেখা হতোনা কিন্তু ফেরার সময় হতো! খুব ভালো লাগতো সেইই সময় নমিকে , খুব সপ্রতিভ , ব্যাক্তিত্বময়ী এক মহিলা ছিলো তোমার মা, জানো আমি একবার পরিচয়ের আগে তার টিকিট কেটে দিয়েছিলাম বলে সে আমায় খুব বকেছিলো!! বলেই বাবা প্রায় ছেলে মানুষের মতো হেসে উঠলো!! অপূর্ব খুব মন দিয়ে দেখছিলো তার বাবাকে !! সত্যি কর্মসূত্রে কখনো এতো কাছাকাছি বোঝার জানার সময় হয়নি বাবাকে!! কি করে যে বাবা এতো বুড়ো হয়ে গেলো কে জানে!! বাবা অনেক বার বলেছে পুণাতে না থেকে তার কাছে মুম্বাই তে চলে আসতে!! কিন্তু মিত্রার থেকে তার আপত্তিটাই বেশী ছিলো মনে হয় !! বাবা না না কথা বলে চলেছে এ শহর ,এই ট্রাম আর মা র কথা!! কত অজানা কথা বেড়িয়ে আসছে যা অপূর্ব কখনো জানতে পারেনি , জানতে চায়নি !! আজ নতুন করে বন্ধু হচ্ছে সে তার বাবার!! বাবা বলছে ,”অপু আমি একবার ট্রামে চেপে ঘুমিয়ে নিজের জায়গা ছেড়ে অনেকদুর চলে গিয়েছিলাম আর তোর মা বলেছিলো তোর মাসির বাড়ি পার্শে মাছ পৌঁছে দিতে সেইই রান্না পৌঁছেছিলো রাত সাড়ে দশটায়!! বলেই বাবা হো হো করে হাসতে লাগলো !! অপূর্ব মিশে যাচ্ছে তার বাবার সাথে , এই শহরের সাথে এই ট্রামের সাত পাকের বাঁধনের সাথে !! এইভাবে আর কি ফেরা হবে কখনো !!কে জানে!! ট্রাম এগিয়ে চলেছে শহরের বুক চিরে !! বাবা ভীষণ হাসছে তখনো জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে!!
#নীলবৃষ্টি
স্বত্ব সংরক্ষিত