স্বর্গীয় গুল ** নিরঞ্জন ঘোষ

স্বর্গীয় গুল
নিরঞ্জন ঘোষ।

সকাল সাতটা দশ। কোয়ার্টারের দরজায় তালা মেরে তিনজনে বেরোলাম। আমি, স্বপন আর জীবন। সাড়ে ছটার মধ্যে ডাল ভাত রান্না কমপ্লিট। স্নান করে গরম গরম ডাল ভাত আলু চোখা সাঁটিয়েছি আমি আর জীবন। স্বপন সকাল বেলায় ভাত খেতে পারে না। ও গত কালের রেখে দেওয়া দুটো রুটি আর ডেলা গুড় খেয়েছে, দুপুরে এসে ভাত খাবে। এখন গন্তব্যস্থল অফিস, ভায়া প্রধানবাবার চায়ের দোকান। আজকে অফিসে খুব একটা জরুরী কাজ কিছু নেই, তাই ধীরে সুস্থে যাওয়া। যতই খাই না কেন, সকাল বেলা পরধান বাবা কে দুকান সে পাও ভর জালেবী ঔর গ্লাশ ভর চায় নেহি মিলনেসে দিনটা ঠিক মতো কাটে না।

এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। বাংলা চৈত্র চলছে। সাল ঊনিশশো চুয়াত্তর। স্থান বরওয়াডীহ, জেলা পলামৌ, তদানীন্তন বিহার। কটা বাঙালী ছেলে বছর খানেক আগে এসেছি রেলের কনস্ট্রাকশনের কাজে চাকরি নিয়ে। গতানুগতিক জীবন।

আমাদের মেস যে কোয়ার্টারে উছিল সেখান থেকে বেরিয়ে খানিকটা দূর গেলেই একটা বড়সড় খেলার মাঠ। ওখান থেকেই দেখা যায় মাঠের উল্টো দিকের রেলের হেল্থ ইউনিটটা। আমরা সবাই হসপিটাল বলি। ওখান থেকেই দেখতে পেলাম হেল্থ ইউনিটের কাছে বেশ ভীড় জমেছে। কি হল রে বাবা? সকাল সকাল কোন এ্যাকসিডেন্ট হল নাকি? না কেউ দুম করে মরে গেল?
মাঠ পেরিয়ে হসপিটালের মুখে পৌঁছে দেখি গ্রামের সমস্ত দেহাতি লোকের ভীড়। রেলের লোকজন খুবই কম রয়েছে। আমরা তখন মোটামুটি হিন্দি বুঝতে শিখে গেছি, তবুও কিচির মিচির দেহাতি ঠিক মতো বোধগম্য হলো না। দেখলাম ডাগডার সাহেব তখনও আসেননি তার কোয়ার্টার থেকে। এক দেহাতি মহিলা মেঝেতে শুয়ে রয়েছে, কাপড় ঢাকা অবস্থায়। কি হল রে বাবা?
ঠিক সেই সময়ই দেখলাম গোবিন্দদা আসছে। আমাদের গডফাদার দি গ্রেট গোবিন্দ দা। হাতে একটা কাঁচা শালপাতার দোনা। অনেক বছর এখানে থাকার ফলে দেহাতি হিন্দিতে সে তুখোড়। আমার হাতে দোনাটা ধরিয়ে দিয়ে লোক গুলোকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে।
সেই সময় ডাগডার সাহেব ঢুকলেন। বিশিষ্ট বাঙালি ভদ্রলোক। তাঁর একটা দোষ আছে, তিনি বাঙালিদের সঙ্গে হিন্দিতে আর বিহারীদের সঙ্গে বাঙলাতে কথা বলেন। গোবিন্দদাকে বিলক্ষণ চেনেন। গোবিন্দদাকেই জিজ্ঞাসা করলেন, এ গোবিন্দ্, ক্যা হুয়া রে?
কি হয়েছে গোবিন্দদা এর মধ্যেই জেনে নিয়েছে। গোবিন্দদাই ডাক্তার সাহেব কে জানিয়ে দিল, এই দেহাতি মহিলা ভোর বেলা জঙ্গলে মহুয়া কুড়োতে গিয়েছিল। একমনে কুড়িয়ে যাচ্ছিল কোন দিকে খেয়াল না করে। কোথা থেকে এক ভাল্লুক এসে এই মহিলা কে কোলে তুলে নেয। মহিলাটি সাথে সাথেই ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। কতক্ষণ ভাল্লুক কোলে করে বসেছিল জানা যাচ্ছে না। তবে দূর থেকে আরও দু একজন মহুয়া চুননেবালি ব্যাপারটা দেখতে পেয়ে চেঁচামেচি শুরু করে। লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তাদের দেখে ভাল্লুকও মহিলাটিকে ছেড়ে দিয়ে জঙ্গলে চলে যায়। সব থেকে আশ্চর্যের কথা, মহিলাটির শরীরে কোথাও সামান্য আঁচড়ের দাগটুকুও নেই। ডাক্তার বাবুও আশ্বস্ত হলেন। মেন্টাল শক, ঠিক হো জায়েগা।
গোবিন্দদা তখন আমার হাত থেকে শালপাতার দোনাটা নিয়ে তার ভেতর থেকে একটা বুঁদিয়ার লাড্ডু বের করে ঐ দেহাতি লোকগুলোর মধ্যে একজনকে ধরিয়ে দিয়ে দেহাতি হিন্দিতে যা বলল, তার অর্থ, এটা দেওতার পরসাদ আছে। উসি ঔরৎ কো খিলা দেনা। তারপর পকেট থেকে একগাদা খুচরো দশ, পাঁচ, দু পয়সা গুণে এক টাকা পঁয়ষট্টি পয়সা লোকটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, এগুলো ঐ ঔরৎটার জন্য। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বলল, “চল, যাওয়া যাক।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ওরা তো রেলের লোক নয়, তো রেলের হসপিটালে এসেছে কেন?”
গোবিন্দ দা গম্ভীর স্বরে বলল, “আর উপায় কি? এখানে গ্রামের ব্লকের হেলথ ইউনিটগুলো তে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর না আছে ডাক্তার না আছে ওষুধ। কোথায় যাবে লোক গুলো? পয়সাই বা কোথায় পাবে ওষুধ কেনার? আমাদের ডাক্তার বাবু কিন্তু লোক গুলোকে দেখেন। হাতের কাছে ওষুধ থাকলে দিয়েও দেন।”

প্রধানবাবার দোকানের কাছে এসে আমাদের তিনজনের হাতে একটা একটা লাড্ডু ধরিয়ে শালপাতার দোনাটা ফেলে দিয়ে বলল, “নে খেয়ে নে, বজরংবালীর প্রসাদ।”
আমি বললাম, “হঠাৎ?”
গোবিন্দ দা বলল, “হঠাৎ নয়। আমি তো মাঝে মাঝে পাহাড়ে চড়ি, মন্দিরে যাই। আজ সকালবেলা গিয়েছিলাম। বোধ হয় আজ সকালে পূজারি জি যায় নি ওখানে। আমি দেখলাম শালপাতার দোনায় ছটা লাড্ডুর প্রণামী চড়েছে। সাথে এতগুলো খুচরো পয়সা, কালকের প্রণামী। নিয়ে চলে এলাম, আসল ভগবানের পুজোর জন্য। দেখলি, ঠিক আসল ভগবান পেয়ে গেল।”
মনটা গোবিন্দদার প্রতি শ্রদ্ধায় ভরে গেল। যতই লম্বা চওড়া গুল গল্প হাঁকাক না কেন, লোকটার মনটা দরাজ। আজ আপ বিডিএম প্যাসেঞ্জারে জীবনের ডালটনগঞ্জ যাবার প্রোগ্রাম। বেশি কাজ নেই। ফেরবার ডাউন জিজিসি প্যাসেঞ্জার পেয়ে যাবে। জীবন কে বললাম দু কেজি মাংস ডালটনগঞ্জ থেকে নিয়ে আসার জন্য। বরওয়াডীহতে শুক্রবার ছাড়া মাংস পাওয়া যেত না। ডালটনগঞ্জে রোজ পাওয়া যায়। গোবিন্দদাকে বলে দিলাম তোমাকে আজ রাতে আর তোমার কোয়ার্টারে রান্না করতে হবে না। তুমি আজ রাতে আমাদের কাছে খাবে। তবে সাঙ্গ পাঙ্গ কাউকে আনবে না, তুমি একা।

অফিসে গত তিন দিন ধরে এ্যাকাউন্টস ইন্সপেকশন চলছিল। গতকালই শেষ হয়ে গেছে। আজ খালি সইসাবুদ করাতে হবে। এ্যাকাউন্টস পার্টি কাল কোলকাতা ফিরে যাবে। চার জন ভদ্রলোক। ওরা ইন্সপেক্টর রেস্ট হাউসে উঠেছে। তিন জন বেশ বয়স্ক। আর একজন আমাদের বয়সী। আমার সঙ্গে আগে থেকেই তার বন্ধুত্ব আছে। তাকে জানিয়ে দিলাম তুমি আজ রাতে আমাদের সঙ্গে খাবে। তাকে নিয়ে রাতে আমাদের খাওয়ার লোক হল মোট পাঁচজন।

স্বপনের রান্না ভালই। সবাই হাত চেটে খেলাম। তারপর চৌকিটায় বসে গোবিন্দদা যখন বিড়ি ধরাল, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “গোবিন্দ দা, সকালে ভালুক টা মেয়েটাকে আঁচড়ে কামড়ে না দিয়ে শুধু কোলে করে বসেছিল কেন? কোন ক্ষতি করেনি কেন?”
গোবিন্দদা বিড়িতে একটা লম্বা টান দিয়ে বলল, “তোরা কি ভাবিস বল তো? জানোয়ার মানেই হিংস্র হতে হবে? যে মানুষটা তাকে সামান্যতম আঘাতও করেনি, তার পেট ফালাফালা করে দেবে?”
আমি বলতে গেলাম, “না মানে….”
“মানে আবার কি? দেহাতি বৌটা বিরাট লম্বা চওড়া তো কিছু নয়। বেঁটেখাটো ছোট পারা একটা মানুষ। ভাল্লুকটা হয়তো তাকে ভেবেছে কোন জন্তুর বাচ্চা। কোলে নিয়ে বসে পড়েছে, ব্যস। তোরা সবসময়ই ভাবিস, জানোয়ার মানে মানুষের ক্ষতিকারক জীব। আশ্চর্য!”
“না মানে এইরকম কোন কিছু আমি কোন দিন শুনিনি তো, তাই।“
“তাই তো কি হয়েছে শুনি? তোর জানার বাইরে পৃথিবীর অনেক কিছু আশ্চর্য আছে, জানিস সেটা? ওদেরও বোধ শক্তি আছে, ওরাও মানুষের ভাষা বোঝে। ওরাও মানুষ কে দেখলে বুঝে যায় সে ক্ষতি করবে কিনা। আরে, আমার সঙ্গেও একবার এইরকম হয়েছিল। সেটাও ভাল্লুক।“
পরিতোষ, কলকাতা এ্যাকাউন্টসের ছেলেটা সাথে সাথে বলে উঠল, “দাদা আপনিও ভাল্লুকের পাল্লায় পড়েছিলেন?”
“সেটা বলা মুস্কিল।“ গোবিন্দদার জবাব, “কে কার পাল্লায় পড়েছিল তা বলতে পারব না। তবে আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম।“
“কি রকম?” পরিতোষের আশ্চর্য হওয়া জিজ্ঞাসা।
“বছর তিন আগের কথা, তোরা তখন কেউ বরওয়াডীহতে আসিসনি।“ গোবিন্দদা আমার দিকে চেয়ে শুরু করল। “ঠিক এমনি সময়ই হবে। আমার সেদিন ছুটি ছিল। দুপুরে কৃপালের বাড়ি নেমন্তন্য ছিল, মানে সেদিন রান্না করতে হবে না। আর আমাকে পায় কে?
তোরা তো জানিস, আমার পাহাড়ে চড়া বাতিক আছে। সকাল বেলাই হেভী নাস্তা করে পাহাড়ে চড়লাম। মন্দিরে বজরংবালীকে একটা স্যালুট ঠুকে মন্দিরের পাশের পাকদন্ডী দিয়ে পাহাড়ে উঠে গেলাম। তোরা কেউ গেছিস পাহাড়ের উপরটায়?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম “আমি বার তিনেক উঠেছি।“
“তাহলে তো তুই জানিস”, গোবিন্দদা বলল, “এখান থেকে দেখে বোঝা যায় না। কিন্তু পাহাড়ের মাথাটা যথেষ্ট চওড়া। জিপ দৌড়তে পারে। চৈত্র মাস, কিছুদিন আগে পাহাড়ের মাথায় ঝরা পাতায় আগুন জ্বালানো হয়ে গেছে, পুরো পরিষ্কার। আমি নানারকম গাছপালা দেখতে দেখতে পাহাড়ের যেদিকে সেদুপ জঙ্গলের ঢাল, সেইদিকে এগোতে লাগলাম। উপর থেকে আমাদের কলোনী, রেল লাইন, লেদগাঁই দেখা যায়। খুব সুন্দর লাগে।
আনমনে ছিলাম। যদিও উচিৎ হয়নি। জঙ্গলে ঘুরতে গেলে সবসময় চোখ কান খোলা রাখা উচিৎ। এই কথাটা আমিই সবাইকে শেখাই, আর সেদিন আমি নিজেই ভুলে গিয়েছিলাম।
একটা খসখস আওয়াজে হুঁশ ফিরল। কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই। হাত কুড়ি দূরে তিনি দাঁড়িয়ে মূর্তিমান যমের মতো। বিশাল একটা ভাল্লুক।“
“বিশাল কোথায়, ভাল্লুক তো খুব একটা বড় হয় না।“ পরিতোষ দুম করে বলে ফেলল।
নতুন লোক বলে এতক্ষণ গোবিন্দদা আপনি আপনি করে কথা বলছিল পরিতোষের সঙ্গে। এবার নেমে এল সরাসরি তুমি তে।
“তুমি ভাল্লুক কোথায় দেখেছ? ঐ যারা ডুগডুগি বাজিয়ে খেলা দেখায়, তাদের কাছে?”
“না, না, তা কেন? আমি চিড়িয়াখানায় দেখেছি।“
“ধুর। ওগুলো তো আধপেটা খাওয়া আধমরা ভাল্লুক। কোনদিন জঙ্গলের ভাল্লুক দেখেছ?”
হেসে ফেলল পরিতোষ। “কোলকাতায় সে সুযোগ কোথায়?”
“তবে চুপ করে থাক। জঙ্গলে একটা জোয়ান ভাল্লুক কত বড় হয় সেটা কল্পনাতেও আনতে পারবে না। আমি অনেকবারই দেখেছি, অবশ্য দূর থেকে। মানে বিপদ সীমার বাইরে থেকে। সেই প্রথম আমি ভাল্লুকের পাল্লায় পড়লাম। অত কাছ থেকে দেখলাম।“
পরিতোষ প্রায় রুদ্ধস্বরে জিজ্ঞাসা করল, “তারপর?”
গোবিন্দ দা আবার একটা বিড়ি বার করে, তার সামনে পেছনে ফুঁ দিয়ে ধরিয়ে নিল। তারপর একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলল, “আমার তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া। আমি ভাল্লুকের সঙ্গে দৌড়ে পারব না। তারপর দৌড়বই বা কোনদিকে একদিকে খাড়া পাহাড়, আর একদিকে সেদুপের জঙ্গল। পাহাড় থেকে নামার রাস্তা তো মন্দিরের পাশ দিয়ে, আর সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সাক্ষাৎ যম। আমি তথন দর দর করে ঘামছি। মাথাটা কাজ করছে না। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। ঠিক তখনই দেখলাম ভাল্লুকটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।
আমার কিছু করার নেই। হাতে কোন অস্ত্র নেই। অবশ্য অস্ত্র থাকলেই চালাতে পারব, তার কোন উপায় নেই। আমি ছ ফুট লম্বা। জানোয়ারটা আমার থেকেও বড়ো, আর চেহারায় আমার তিনগুন। আমি দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে আমার মৃত্যু এগিয়ে আসছে। ঠিক তখনই মনে মনে ঠিক করে নিলাম, মরব তো বটেই, কিন্তু হেরে যাব না। গায়ের জোরে আমি পারব না। তার উপর ওর থাবার বিশাল বিশাল নখ। যা হয় হবে, হাতে দুটো বড় সাইজের পাথরের টুকরো তুলে নিলাম।“
আমরা নির্লিপ্ত হয়ে শুনে যাচ্ছি। পরিতোষের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। সে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে গোবিন্দদার দিকে।
“ভাল্লুকটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমি কিন্তু পেছোলাম না, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় হাত দশেক দূরে এসে সে ব্যাটা দাঁড়িয়ে গেল।“
কয়েক মুহুর্তের স্তব্ধতা। পরিতোষের ঘষা আওয়াজ কানে এল, “তারপর?”
“আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি তার দিকে। হঠাৎ চোখে পড়ল, ভাল্লুকটার চোখে যেন জল।“
আমি আর থাকতে পারলাম না। বলে ফেললাম, “ভাল্লুক কাঁদে নাকি?”
আমার দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে গোবিন্দ দা বলল, “ওরে ব্যথা পেলে পৃথিবীর সব জানোয়ারই কাঁদে, আমাদেরটা সবাই দেখতে পায়, আর ওদেরটা কেউ দেখে না। কিন্তু ওরাও ব্যথা পেলে কাঁদে।“
“যাকগে, তারপর কি হল বল”, স্বপন বলল।
“আমি দেখলাম”, গোবিন্দদা শুরু করল, “ভাল্লুকটা হাঁ করে কিছু দেখানোর চেষ্টা করছে। আমি হাত থেকে পাথর দুটো ফেলে দিলাম আর আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম ভাল্লুকটার দিকে।
তোরা বললে বিশ্বাস করবি না, আমি কাছে যেতেই ভাল্লুকটা মুখটা হাঁ করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। আমি বুঝলাম ওর মুখে কিংবা দাঁতে কোথাও ব্যথা লেগেছে। আমার কাছে সাহায্য চাইছে। চোখে আকুতি।
তোরা তো জানিস, দাঁতের যন্ত্রনা আমাকে কি রকম কাবু করে দেয় মাঝে মাঝে। খেতে পারি না, ঘুমুতে পারি না। তাই তো সবসময় পকেটে কোডোপাইরিন রাখি। মনে পড়ে গেল পকেটে তো ওষুধ রয়েছে।
আমার তো একটা ট্যাবলেটেই কাজ দেয়, কিন্তু এই ব্যাটা ভাল্লুকের কটা লাগবে কে জানে। দেখলাম ছ টা পড়ে আছে। ছটাই একসঙ্গে ভাল্লুকের হাঁ করা মুখে চালান করে দিলাম। ভাল্লুকটা একবার আমার মুখের দিকে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকিয়ে চোখ বুজল। আমি তার পাশ কাটিয়ে আস্তে আস্তে মন্দিরের দিকে এসে পাহাড় থেকে নামতে শুরু করলাম।“

খানিকক্ষণের নিস্তব্ধতা। পরিতোষের মুখটা হাঁ হয়ে গেছে। তার বিস্ময় এখনো কাটেনি। জীবন বলে উঠল, “তারপরে আর কোনদিন ভাল্লুকটার খোঁজে পাহাড়ে ওঠোনি?”
“পাগল? আমি কি তাকে চিনে বসে আছি নাকি? অনেক রাত হল, এবার আমি উঠছি। পরিতোষ চল, তোমাকে ইন্সপেক্টর রেস্ট হাউস পর্যন্ত এগিয়ে দিই।“
গোবিন্দ দা গাত্রোত্থান করলেন।
=================

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *