#তৃতীয় পর্ব # শিরোনাম-:কৃষ্ণবর্ণ কলমে-:মমতা শঙ্কর সিনহা(পালধী)

#তৃতীয় পর্ব #
শিরোনাম-:কৃষ্ণবর্ণ
কলমে-:মমতা শঙ্কর সিনহা(পালধী)

“কৃষ্ণবর্ণ”এর তৃতীয় পর্বে আমি এবার “শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের” এর কথায় আসি।গদাই ঠাকুর কিন্তু “মা” ভবতারিনীর “কৃষ্ণকালী” রূপ দর্শন করেই তন্ত্র মতে দীক্ষা নিতে আগ্রহী হন এবং দক্ষিণেশ্বরের পূজার ভার গ্রহণ করেন।জাত,ধর্ম, বর্ণ, অহংকার,মিথ্যেচার, ব্যাভিচারের গ্লানি দূর করার জন্যই ভগবান “শ্রীকৃষ্ণ” “রামকৃষ্ণ দেবের” শরীর ধারন করে এই কলিযুগে “যুগাবতার” হয়ে জন্মগ্রহণ করে ছিলেন। “মা ভবতারিনী” একই অঙ্গে “কৃষ্ণকালী” রূপে দর্শন দিয়ে গদাই ঠাকুরকে চেয়েছেন যে ” কৃষ্ণ” তিনিই আবার “মা কালী”।অর্থাৎ একই অঙ্গে ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। আর যেরূপেই তুমি ঈশ্বরকে পূজো করনা কেনো তিনি এক ও অবিনশ্বর।রামকৃষ্ণ দেব যথার্থই বলেছেন–“ডুব ডুব রূপসাগরে আমার মন”।
কালো এই বর্ণের মধ্যেই রয়েছে এক ব্যঞ্জনা। “কালো”মানে ঘোর “কৃষ্ণবর্ণ” বা “ঘননিকষ অন্ধকার’কে” সহজ-সরল ভাষায় বুঝি। রাত্রি কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন বলেই রাতের তারারা খচিত, চন্দ্রলোকাকিত, স্নিগ্ধ প্রকৃতির এক নয়নাভিরাম মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি।বিশ্ব কবি তাই বলেছেন–” চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে,উছলে পড়ে আলো,ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধসুধা ঢালো”।প্রাকৃতির রূপ বর্ণনা ছেড়ে যদি ভগবানের কৃষ্ণবর্ণের আলোচনা করি তাহলে দেখব প্রেমের ঠাকুর,প্রাণের ঠাকুর “শ্রীকৃষ্ণ” ও “মা-কালী” উভয় “কালো”।রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব তাঁর মাতৃবন্দনায় বলেছেন—“শ্যামা মা কী আমার কালো রে—-
কালো রূপে দিগম্বরী হৃদপদ্ম করে আলো রে”।
অর্থাৎ “মা ভবতারিনীর ” কালো রূপ যে ভূবনমোহিনী। সেই রূপই আমাদের হৃদয়পদ্মকে শূচিতার শুভ্রলোকে আলোকিত করে।এখানে আরও গূঢ় তত্ত্ব হল—– দূর,তাই কালো,অন্ধকারাচ্ছন্ন,পৌঁছানো বা নাগাল পাওয়া অসম্ভব এমন কিছু বিষয়।কিন্তু জানতে পারলে কালো আর নাগাল পাওয়া অসম্ভব বিষয়গুলি বোঝা বা করা সম্ভব। কালো তখন আর কালো নয়,আঁধার তখন আর আঁধার নয়—সে তখন সহজলভ্য, জলের মতই স্বচ্ছ হয়ে যায় সবই আকাশ আমাদের কাছ থেকে বহুদূর—তাই তো সে নীলবর্ণ। কাছ থেকে দেখলে সবই স্ফটিক স্বচ্ছ,সমুদ্রের জলও দূর থেকে নীল—কাছে গিয়ে আঁজলা করে হাতে তুলে দেখলেই বর্ণহীন।
(ক্রমশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *