জীবনবিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু কথা- পর্ব ১১ ✍️ডরোথী দাশ বিশ্বাস

জীবনবিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু কথা- পর্ব ১১
✍️ডরোথী দাশ বিশ্বাস
ওহ্! খাতা দেখতে দেখতে হাসবো না কাঁদবো- আমি যদি হেসেও থাকি তা কি কেউ দেখতে যাচ্ছে? ছোটবেলায় যখন ক্ল্যাসিকাল গানে আ— আ—আ—আ —- করে বিস্তার হতো গলা কাঁপিয়ে, মীড় গমকের দোলায় গান, না কান্না বুঝতে না পেরে কখন যে মুখটা হাসি লুকোতে ব্যর্থ হতো তেমনি আর কি! তেমনি আজও হেসেই যাচ্ছি খাতা দেখতে দেখতে আপন মনে। পাঠকও হাসবেন, হাসতে বাধ্য। ৩.৯ নং প্রশ্ন ছিলো মানববিকাশের বয়ঃসন্ধি দশায় যে যে পরিবর্তন ঘটে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করো:- তালিকা তৈরি করতে গেলে লিখতে হবে: ১৷ছেলেদের ক্ষেত্রে শুক্রথলি, পেনিস বৃদ্ধি পায়, ২৷বিভিন্ন গৌন যৌন লক্ষণ যেমন: দেহের বিশেষ বিশেষ অংশে রোম গজায়, ব্রণ হয়, কন্ঠস্বরে পরিবর্তন আসে, দেহ পেশিবহুল হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৷রজঃচক্র শুরু হয়, ২৷ স্তন ও নিতম্ব আকারে বাড়ে। ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। এতগুলির মধ্যে দুটি বা চারটি পয়েন্ট লিখলেই তো ফুল মার্কস। তাও ছেড়ে দিলাম। কেউ যদি “গৌন যৌন লক্ষণ প্রকাশ পায় ও যৌনাঙ্গের বিকাশ ঘটে”- এই দুটি কথাই শুধু লেখে তাও ফুল মার্কস। ওরা কি আর তালিকা বা ফর্দ তৈরি করে বাজারের ফর্দের মতো? ওরা যা বুঝেছে লিখেছে।একাধারে সবাই লিখেছে “১২-২০ বছর সময়কাল বয়ঃসন্ধি।” সে তুমি যতোই Teen-age (13-19) বোঝাও। তারপরে তালিকা হিসেবে লিখেছে: “এই সময়ে ছেলেমেয়েরা যৌন ভাবনা চিন্তায় ডুবে যায়। যৌনাঙ্গ বড় হয়। শক্তি বাড়ে। ওজন বাড়ে। উচ্চতা বাড়ে।- আমি গালে হাত দিয়ে ভাবতে শুরু করলাম, কোন্ জীবনবিজ্ঞান বইএ এসব লেখা আছে!!!
৪.২ এর বিকল্প প্রশ্নটি ছিলো – কোনো দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির নিম্নলিখিত শারীরিক কাজগুলো ব্যাহত হলো। কাজগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের অংশগুলোর নাম লেখো: ●বাকশক্তি●ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও নিদ্রা●দেহভঙ্গী ও দেহের ভারসাম্য●জিহ্বা সঞ্চালন ও খাদ্য গলাধঃকরণ। উত্তর হবে: ●বাকশক্তি- সেরিব্রাম/গুরুমস্তিষ্ক, ●ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও নিদ্রা- হাইপোথ্যালামাস● দেহভঙ্গী ও দেহের ভারসাম্য- সেরিবেলাম/মেডালা অব লঙ্গাটা●জিহ্বা সঞ্চালন ও খাদ্য গলাধঃকরণ- মেডালা অব লঙ্গাটা। কিইইইইই কঠিন গোওওওও!!!! না পড়লে হবেএএএ??? তবে না পড়েই একজন পরীক্ষার্থী কি লিখেছে দেখুন। লিখেছে- “একটি মানুষ তার মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হন। তিনি তার মোটরসাইকেল চালাতে চালাতে বেশ কিছু দূরে চলে যান। এরপর একটি লরির সাথে ধাক্কা লেগে পথ দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে সেই বাইকচালক গুরুতর আহত হন। তাঁর মাথাতে আঘাত লাগে। ফলে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, প্রচন্ড জল তেষ্টা পায়।
মন দিয়ে ভালো করে প্রশ্ন পড়ার ধৈর্য্য যে পরীক্ষার্থীদের নেই তা খাতা দেখতে গিয়ে খুব বুঝেছি। ৩.২নং প্রশ্ন ছিলো: “মায়োপিয়া ও হাইপারোপিয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো”- উত্তরে ৭৫ জনের মধ্যে ৭২ জনই লিখেছে মায়োপিয়া ও হাইপারোপিয়ার সংজ্ঞা ও ত্রুটি সংশোধনের উপায় লিখে রেখেছে। ফ্লো চার্ট, শব্দচিত্র- এসবের মাধ্যমে উত্তর দিতে বলা হলে সেটাই দিতে হবে। যেমন: ৪.৪ নংএর বিকল্প প্রশ্ন ছিলো “শব্দচিত্রের মাধ্যমে সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন পদ্ধতিটি দেখাও”- সে ক্ষেত্রে যা খুশি তাই লিখে পাতা ভরিয়ে ফেলেছে, পর পর খাতায় একই ভুল তথ্যসম্বলিত অথবা অপ্রাসঙ্গিক উত্তর, অথচ পরীক্ষকের কি দুর্ভাগ্য এতোটা লিখেছে এরা তবু নম্বর দিতে পারছেন না। এবারে আসি ৩.১৭ নং এর প্রশ্নে। প্রশ্নটি হলো: ‘কোনো কোনো ফিনোটাইপের একাধিক জিনোটাইপ এবং অপর কোনো কোনো ফিনোটাইপের একটিই জিনোটাইপ থাকতে পারে।’- মটরগাছের ক্ষেত্রে দ্বিসংকর জননের পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে বক্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করো: নম্বর বিভাজন- ১/২+১/২+১/২+১/২=২. উত্তর: কোনো কোনো ফিনোটাইপের একাধিক জিনোটাইপ যেমন:
ফিনোটাইপ ১- হলুদ গোলাকার- জিনোটাইপ- RRYY, RRYy, RrYY, RrYy; ফিনোটাইপ- ২ হলুদ কুঞ্চিত- জিনোটাইপ- rrYY, rrYy
ফিনোটাইপ-৩ সবুজ গোলাকার- জিনোটাইপ RRyy, Rryy
কোনো কোনো ফিনোটাইপের একটিই জিনোটাইপ- যেমন ফিনোটাইপ- সবুজ কুঞ্চিত জিনোটাইপ- yyrr.
ব্যাস, এটুকুই। অথচ তা না লিখে, যেই না দেখেছে ফিনোটাইপ, জিনোটাইপ- অমনি T/t দিয়ে কি কি অর্থহীন আঁকিবুকি রেখা, বৃত্ত, ছক- পর পর সবার খাতায় এই এক লেখা। ফিনোটাইপ জিনোটাইপ মানেই কি T/t? এক সংকর জনন না দ্বি সংকর জনন- সেটা দেখবে না? সব্বাই একসংকর জননের TT×tt থেকে চেকারবোর্ড পর্যন্ত অবলীলায় লিখে যাচ্ছে। এই এতবড় এবং একই ভুল উত্তর দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমার চোখ, ক্লান্তিহীন ওদের কলম। অতই সহজ রে বেটা? হাতে প্রশ্ন, কিন্তু চোখ অন্যের খাতার দিকে। আবারও সেই একই কথা, পরীক্ষা হলে প্রবেশের পরই সতেজ মস্তিষ্কে প্রশ্ন ভালো করে খুঁটিয়ে পড়ার জন্য পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা ঐ সেই পনেরো মিনিটের সদগতি না করে “ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে,” আর ওদিকে যে “জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়!”- অনর্গল কথাবার্তা, হাসাহাসি- আরে, এতো ক্লাস রুম নয়, নিজের স্কুলের পরিচিত পরিবেশও নয়, কর্তব্যরত স্যর ম্যামদেরও চিনিস না, এ হলো পরীক্ষার হল। আর ঐ যে ১৫ মিনিট, সেটা হলো পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবার প্রস্তুতিপর্ব। প্রস্তুতিপর্ব মানেই স্থিরতা, দ্যাট ইজ ইন্টারফেজ দশা। এসব কে শেখায়, কেই বা শেখে! কতটা অস্থিরতা যে সর্বশেষপ্রায় পরীক্ষার দিনও খাতা পেয়েই বিষয়ের জায়গায় নিজের নাম লিখে রেখেছে, কেটেছে।
২.৪ নং প্রশ্ন ছিলো:- _ একটি পতঙ্গপরাগী পুষ্প। জানি, এর সম্ভাব্য উত্তর অনেক, আর যা লিখবে তাতেই নম্বর দিতে হবে। তবু যদি কেউ কচুফুলের উদাহরণ দেয়, বা ধানফুল লেখে, তাহলে তো উত্তর ভুল। তাই হাতের কাছে সমস্ত বই ঘেঁটে এবং অবশ্যই নির্দেশিকা মেনে অনেক বিকল্প উত্তর মাথায় রাখলাম, যেমন :- আম, লিচু, স্যালভিয়া, পদ্ম, বোগেনভেলিয়া। এ সব ছাপিয়ে উত্তর লিখেছে সূর্যমুখী, একই উত্তর চললো পরপর ২০ টি খাতায়, তারপর সেটা হয়ে গেলো সূর্যশিশির, চললো পরপর দশ জনের খাতায়, সূর্যশিশির তো পতঙ্গভূক। সে কবে থেকে পতঙ্গপরাগী হলো? এরা মানুষের মতো নয় রে বেটা যে উপকারীকে ধরে ধরে খেয়ে নেবে। এরপর পেলাম জবা, সে উত্তর চললো পরপর পনেরো জনের। ধান এলো, “এমন ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে”- মনে পড়ে না? এতেই তো বোঝা যায় ধানফুল বাতাসপরাগী, এলো টিউলিপ- এই ফুলের নাম জেনেছে থার্মোন্যাস্টিতে, এরপর হঠাৎ সেটা হয়ে গেলো শিমূল, পলাশ। সূর্যমুখী জবা মেনে নিলাম। কিন্তু, শিমূল বা পলাশ মানতে পারলাম না। যদ্দূর জানি, শিমূল পলাশ মাদার পক্ষীপরাগী ফুল। যুক্তি হলো: পতঙ্গ বলতে তো প্রধান মৌমাছি, সেই মৌমাছি লাল বর্নান্ধ। খোঁজ পাবে কি করে, “লাল লাল পলাশ ফুটেছে”? শিমূল মাদার পলাশের যা উচ্চতা সেই উচ্চতা পতঙ্গ অ্যাচিভ করতে পারে না। গন্ধহীন ফুল পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে না। সবচেয়ে বড় কথা, এসব শীতকালের ফুল, যে সময়ে পতঙ্গের ডানা মেলাই ভার। শিমূল পলাশেই শেষ নয়, আরো গল্প আছে। এবারে এলো ড্রাগন ফ্লাওয়ারের দল। হা হা হা- পরীক্ষক জানে Aa- পৃথিবীতে জীবের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম বিজ্ঞানসম্মত নাম, সেও উদ্ভিদ, তবে সেই গাছের ফুল পতঙ্গপরাগী কিনা, জেনে বসে নেই রে বেটা, তো ড্রাগনফ্লাওয়ার। পরীক্ষকের তো জ্ঞান শেষ। গুগল সার্চ করে বুঝলাম, ওরা অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়েছে, টুক্ করে লেগেছেও। পরীক্ষক শিখলেন। এখানেও শেষ নয়, এবার এলো একদল যারা নির্বিচারে লিখে যাচ্ছে “প্রজাপতি একটি পতঙ্গপরাগী পুষ্প”। জলপরাগী, পক্ষীপরাগী, বাতাসপরাগী, শামুকপরাগী- এত ব্যতিক্রমী প্রশ্ন থাকতে এমন একটি সহজ প্রশ্ন সেট করার একটাই উদ্দেশ্য, কমজোরী পরীক্ষার্থীদের একটি নম্বর খুব সহজে পাইয়ে দেওয়া। নইলে “পক্ষীপরাগী ফুলের উদাহরণ দাও:-” এই ছিলো বহিরাগতদের প্রশ্ন।
Wow … How cute!!! আমরা জানতাম, সাইন্যাপস্ ও সাইন্যাপসিসের মধ্যে পার্থক্য, সাইটোকাইনিন ও সাইটোকাইনেসিসের মধ্যে পার্থক্য, এখন দেখছি পার্থক্য না বুঝেই থাইমিন-থাইরক্সিন, সাইটোকাইনিন-সাইটোকাইনেসিস গুলে খেয়েছে গো!
একটা বিষয় দারুণ লক্ষ্য করেছি: তা হলো- পৃষ্ঠা (লুজ শীট) নিতে শুরু করলে বুঝতে হবে সে ৪১ নম্বর তুলে ফেলেছে বা সর্বোচ্চ ৫৩-৫৫ পাবে। দুটো পৃষ্ঠা নিলেই সে নির্ঘাত ৬৩+১/২ ….।
৩.৪ নং প্রশ্ন- উদ্ভিদের বৃদ্ধি সংক্রান্ত কোন্ কোন্ কাজ অক্সিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তার একটি তালিকা তৈরি করো:- করছি তালিকা প্রস্তুত- এর মধ্যে যে কোন দুটি লিখলেই ১+১=২। উত্তর- ১৷ কোশের আয়তন বৃদ্ধি, ২৷ কোশ বিভাজনের হার বাড়ায়, ৩৷ প্রাথমিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, ৪৷ গৌন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, ৫৷ ভাজক কলার ক্রিয়া বাড়ায়, ৬৷ক্যালাসের বৃদ্ধি ঘটায়, ৭৷ ক্ষত নিরাময় করে, ৮৷ মূলের কোশ কম অক্সিন ঘনত্বে সক্রিয়, ৯৷ বর্ধনশীল অঞ্চলের বৃদ্ধি, ১০৷ ফলের আয়তন বৃদ্ধি।- কিন্তু কি লিখেছে সবাই? এসবের ধারেকাছেও নয়। লিখেছে -“অক্সিন ট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে” – এই এক উত্তর, যা দেখতে দেখতে চোখ ক্লান্ত।
নকল কি আর শুধুই নকল? নকল কাকে বলে? কে যে পন্ডিত, কে পথপ্রদর্শক, কে কাকে অনুসরণ করেছে সেসব স্পষ্ট নয়, তবে সব্বাই সিরিয়াসলি ৪.৬ নং, ৪.৬ নং বিকল্প- দুটোই লিখে যাচ্ছে আর আত্মবিশ্বাসের সাথে দুটোতেই শূন্য পাচ্ছে। নকল বলে নকল? ফ্লেক্সর, এক্সটেনসর, অ্যাবডাকটর, রোটেটর- এই পেশিগুলোর সংকোচনের ফলে কি কি ঘটনা ঘটে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে- প্রত্যেকে উত্তর শুরু করেছে, “যে প্রক্রিয়ায় …” দিয়ে। অর্থাৎ সেই প্রক্রিয়াকে বলে। এই হলো উত্তর।
২.২৬ নং প্রশ্নটি হল: ইন্টারফেজের কোন্ দশায় বেমতন্তু গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়? উ: G2 দশায়/গ্যাপ-2 দশায়। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম যে ২২৬ জনের মধ্যে একজনও এই উত্তরটি পারেনি।
আরো একটি মজার ঘটনা: ৩.১২ নং প্রশ্ন ছিলো ‘অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে ফিনোটাইপিক ও জিনোটাইপিক অনুপাত অভিন্ন হয়’- বক্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করো:- সেখানে ‘অসম্পূর্ণ প্রকটতা’- হঠাৎ করে একজনের খাতায় ‘সম্পূর্ণ প্রকটতা’-য় পরিণত হয়েছে, হয়তো ভুলবশতঃ হয়ে থাকবে। তারপর থেকে দেখলাম ধারাবাহিক ভাবে বারো জন ‘সম্পূর্ণ প্রকটতা’-ই লিখে গেছে।- এও হয়।
বলি, ৩.২ নং প্রশ্নটা কি খুব কঠিন ?
মায়োপিয়ার কারণ: ১৷ অক্ষিগোলক স্বাভাবিকের তুলনায় আকারে বাড়ে, ২৷ বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনাতে না পড়ে আগেই গঠিত হয়, ৩৷ দূরের দৃষ্টি ব্যাহত হয়।
হাইপারমেট্রোপিয়ার কারণ: ১৷ অক্ষিগোলক ছোট হয়, ২৷ প্রতিবিম্ব রেটিনার পিছনে গঠিত হয়, ৩৷ কাছের দৃষ্টি ব্যাহত হয়। এই যে তিনটি করে কারণ আছে, এর মধ্যে একটি একটি কারণ লিখলেই ১+১=২.
মায়োপিয়াতে লেন্স ও কর্ণিয়া কার্ভড হয়। এটা মনে রাখতে হবে।
আরও একটি মজার ঘটনা:
২.৬ নং প্রশ্ন: হিমোফিলিয়ার জন্য দায়ী জিনটি প্রচ্ছন্ন হওয়ায় একমাত্র _ অবস্থায় এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়- উত্তর হবে হোমোজাইগাস। সবাই লিখেছে ‘ক্ষতস্থান’- জানিনা কেন। হঠাৎ এদের মাঝখানে একজন ‘হোমোজাইগাস’ লিখে কেটে আবার ‘ক্ষতস্থান’ লিখেছে। মানতে হবে, কোন সে পন্ডিত, যার মস্তিষ্কপ্রসূত এই ‘ক্ষতস্থান’। একজন আবার একটু বেশি চালাকি করে লিখেছে ‘আঘাতপ্রাপ্তস্থান’। না পারলে ছেড়ে দিতে হয়। ভুল বা অর্থহীন উত্তর লিখে কি লাভ!
৩.১৩ নং প্রশ্ন ছিলো- “বংশগতি সংক্রান্ত পরীক্ষায় মেন্ডেলের সাফল্যলাভের দুটি কারণ লেখো:- এর উত্তরে “মটরগাছ সর্বধর্মআধিকারিক” – এই কথাটি একটি লটে প্রায় সব্বাই লিখে গেছে যার অর্থ আমার জানা নেই। অপর ৭৫ এর বান্ডিলে পর পর বেশ কিছু ছাত্র লিখে রেখে গেছে- ‘মটরগাছ কোন ব্যতিক্রমী গাছ নয়।’ কে এই ভাষা শেখালো এদের???
এরপর এলো কোনো প্রশ্ন নম্বর ছাড়াই উঃ- ‘বধ্যমস্তিষ্কের কাজ’। আমি তো গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসলাম, এটা কোন প্রশ্নের উত্তর? তবে কি যেটা লিখেছে সেটা মধ্যমস্তিষ্ক হবে? আবার পনের পৃষ্ঠা ধরে ধরে পড়লাম। কোথাও তো মধ্যমস্তিষ্কের কাজ আসে নি। তাকিয়ে থাকলাম দক্ষিণের জানালায় সবুজ বনের দিকে।
৪.৩ নং প্রশ্নের বিকল্প প্রশ্ন: বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন, দৃষ্টিক্ষেত্র, গভীরতা- এই তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে দ্বিনেত্র দৃষ্টি ও একনেত্র দৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য লিখ:- উত্তর তো কেউই সম্পূর্ণ সঠিক লেখেনি। তার মধ্যে প্রশ্নেই আছে যে বানান ‘প্রতিবিম্ব’, সেটা সবাই লিখে রেখেছে ‘পতিবিম্ব’। উত্তরে ‘প্রতিবিম্ব’- শব্দটিকে এড়ানো যেতো। যে লিখেছে (এমন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা খুব কম) ‘একনেত্র দৃষ্টি- এই প্রকার দৃষ্টিতে দুই চোখে দুই প্রকার জিনিস দেখা যায় …’পরীক্ষক তাকে সম্পূর্ণ নম্বর দেবেন। যদিও বইএর ভাষা নয়, কিন্তু পরিস্কার বুঝিয়ে দিতে পেরেছে… এই ছেলে খাতা চ্যালেঞ্জ করলে মহামান্য আদালত নম্বর দিয়ে দিতে বলতেও পারেন।
৩.৫ নং প্রশ্ন: বেমতন্তু গঠন ও সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতি- এই দুটি বৈশিষ্ট্যের নিরিখে উদ্ভিদকোশের মাইটোসিস ও প্রাণীকোশের মাইটোসিসের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো: ‘বেমতন্তুর গঠন’ – দেখেই পরপর সবাই লিখতে শুরু করেছে, ‘উদ্ভিদদেহে বেমতন্তু গঠন হয়না, প্রাণীদেহে বেমতন্তু গঠন হয়।’ আমি চোখ বুজে ভাবতে শুরু করি, আর বিড়বিড় করে আওড়াই লাইনদুটো। কি অবস্থা আমার! ঐ গল্পটা মনে পড়ে গেলো: ব্রাহ্মণের ছাগল নিয়ে যাওয়া আর তিন বন্ধু পরপর ওটাকে কুকুর বলে নির্দেশ করায় যা হয়েছিলো শেষমেশ। পরে অবশ্য আমার স্পাইনাল কর্ডের আশীর্বাদে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার সুফল পেলাম, স্বস্তি পেলাম।
‘য়’ এ হ্রস্ব-উ, ঠিক যেন ‘রু’ এর মতো। বেটার মগজ আছে। কারণ ‘য়’ ও ‘র’ – এই দুইএর নীচেই ফুটকি আছে।
৩.১৪ নং প্রশ্ন: ‘গমনের একটি চালিকাশক্তি হলো প্রাণীর বিস্তার’- উপযুক্ত উদাহরণের সাহায্যে বক্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার করো। সবাই প্রথমে উদাহরণ দিয়েছে মাছ। এরপর আর কোনদিকে না তাকিয়ে একমনে(?) লিখে গেছে মাছের গমন কৌশল। অথচ উত্তরটা হবে: কোন জীব অনেকগুলি শাবকের জন্ম দিলে শাবকগুলি বড় হওয়ার জন্য খাদ্যসংগ্রহ, প্রজনন- ইত্যাদি কারণে প্রতিযোগিতা এড়িয়ে যেতে অন্য কোনো স্থানে নতুন বসতি গড়ে তোলে অর্থাৎ নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণে বলা হয়, ‘গমনের একটি চালিকাশক্তি হলো প্রাণীর বিস্তার।’ যেমন: মৌমাছি, প্রেইরি কুকুর, বাঘ, প্রজাপতি, পাখি, স্যামনমাছ, হাতি, বেবুন- প্রভৃতি।
মজা আরো আছে: ২.২ নং প্রশ্ন: প্রতিবর্ত ক্রিয়া দ্রুত, স্বতঃস্ফূর্ত এবং __ । উত্তর: অনৈচ্ছিক/ তাৎক্ষণিক। এই ‘তাৎক্ষণিক’ শব্দটিই বিবর্তিত হতে হতে ‘তৎকালীন’ হয়ে গেছে। এইরকম ভাবেই ‘অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন’ হয়ে গেছে ‘আমন্ত্রিত কোশ বিভাজন’। মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রের নাম (স্বাধীন সঞ্চারণ সূত্র) পরিবর্তিত হয়ে গেছে সবশেষে জনা পাঁচেক ছাত্রের খাতায়, তা হলো- স্বাধীন সঞ্চালন সূত্র।
2.21, 2.23, 2.28 – কি হলো ব্যাপারটা ? 2.28 না 2.24, থমকে গেলাম। আরে, ওটা 2.24 হবে। 2.28 বলে তো কোন প্রশ্ন নম্বর নেই। কি হারে ব্রেইন ওয়ার্ক, থুড়ি, ব্রেইন টর্চার!
মেন্ডেল তো প্রতিবছরই মেন্ডলিফ হয়ে যান। কিছুতেই মনে থাকে না- মেন্ডেলের বংশগতি সূত্র, মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণী।
৪.৬ নং প্রশ্নের বিকল্প প্রশ্ন: মেন্ডেল কর্তৃক নির্বাচিত মটরগাছের বীজসংক্রান্ত তিনজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য সারণীর সাহায্যে দেখাও। উত্তর হবে: বীজের আকৃতি- গোল ও কুঞ্চিত। বীজের রঙ- ধূসর ও সাদা, বীজপত্রের রঙ- হলুদ ও সবুজ। অথচ এই উত্তরের ধারকাছ দিয়ে না গিয়ে প্রত্যেকে মেন্ডেলের এক সংকর জনন ঢালাও লিখে গেছে। কি হলো এতো পাতার পর পাতা লিখে- অটোম্যাটিক একটা বিগ জিরো।
“অপর পৃষ্ঠায় দেখো”- দেখরো রে বাবাসোনা, নম্বর দেবার জন্যই তো বসে আছি। একেবারে শেষ পৃষ্ঠা অবধিই যাবো, প্রতিটি পাতাতেই লাল স্বাক্ষর রেখে যাবো।
চিঠি লিখেছিস,
স্যার/ম্যাম
আমার বাবা নেই, আমি ৭৫% প্রতিবন্ধী, মা আর আমার বোন নিয়ে কষ্টের সংসার। আমি খুব কষ্ট করে লেখা পড়া করি। আমাকে দয়া করে পাশ করিয়ে দেবেন। প্রণাম নেবেন।
হায় রে হায়, কি করি! তোর যে সর্বসাকুল্যে ১৩ উঠেছে। ওহ্! আবার দেখতে হবে প্রথম থেকে। কোন জায়গা নেই নম্বর বসানোর, আর দুটো নম্বর দেবার কোন সুযোগ নেই। কি করি! হাফ হাফ হাফ হাফ করেও যদি চারটি জায়গায় বাড়িয়ে দিতে পারতাম! নিউরণটাও ঠিক মতো আঁকা হয়নি। কিসব হিজিবিজি করে রেখেছিস। তোর এমন আঁকায় যদি নম্বর দিই, তাহলে যাদের নিউরণ অক্টোপাস, বা লেজ বিশিষ্ট স্টার ফিস, যারা রানভিয়র পর্ব চিহ্নিত করে লিখেছে রাইনোভিয়াল পর্দা, তাদেরও আবার খুঁজে নিয়ে নম্বর দিতে হবে। ঠিক আছে, তাইই হবে। অন্ততঃ তুই ১৫ তো পেয়ে যা। স্কুল নিশ্চয়ই দয়া করে দশটা নম্বর দিয়েই দেবে। এই হলো ২৫। তার মানে তুই পাশ করে গেলি।
২২৬ জনের মধ্যে একটি ছেলেকেই পেয়েছি যার হাতের লেখায় ফুটে উঠেছে দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস, প্রশ্ন বুঝে টু দ্য পয়েন্ট উত্তর লিখেছে। অতিরিক্ত চেষ্টা যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপচেষ্টা বলে মনে হয়, তাও করেনি। যা পারেনি, লেখেনি। যতটুকু পেরেছে ততটুকুই, নির্ভুল, অত্যন্ত গুছিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে লিখেছে যা কাটতে পারিনি। খাতাটিতে সততার পরিচয় মেলে। পেয়েছে ৬৫। পারিবারিক বা গৃহশিক্ষা আছে, তাও বোঝা গেলো। জ্ঞান, বোধ, প্রয়োগ, দক্ষতার যথাযথ প্রকাশ ঘটেছে না বলে বোধের বিকাশ ঘটেছে- এটুকু অন্ততঃ বলা যায়। আমার মতে সেরা ছেলে সে-ই, যেখানে ৯০ তে ৮৬- ৮৭ অনেকেই পেয়েছে, তবুও। ৬৫ এর সাথে ১০ যোগ করলে ৭৫, খারাপ কি ? অন্তরালে থাকরে বাবা। ঈর্ষাকাতর সকলের চোখের আড়ালে বেড়ে ওঠ। কারণ এ গাদা নম্বরের যুগে তুই কমা। মনে মনে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবে তোকে, ভালোই তো। ঈর্ষার আগুন তোকে ছুঁতে পারবে না। পোড়াতে পারবে না। তুই তোর মতো করে বেড়ে ওঠ। আশ্চর্য! তোর খাতার চারটি পাতা এখনো সাদা। যদি সব উত্তর লিখতিস, তাহলে এই চারটে পাতাই লেগে যেতো। ক্যারিয়ারিস্ট তো নোস্, প্রতিযোগিতার বাজারে অনেকদূর না যেতে পারলেও, না খেয়ে মরবি না অন্ততঃ।
সবশেষে সকল ছাত্রছাত্রীর উদ্দেশ্যে বলি, বার বার বলি, ধীর স্থির হও, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো। ধৈর্য্যসহকারে প্রশ্ন বারবার পড়ো, বুঝে নিজে উত্তর করো। একটা কথা মনে রেখো, বন্ধুরা কেউ তোমার চেয়ে বেশী পন্ডিত নয়। টু দি পয়েন্ট আনসার করতে শেখো। ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক কথা লিখে পাতার পর পাতা ভরিয়ে কোন লাভ হয় না। প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী লেখো। অতিরিক্ত প্রশ্নের উত্তর করলে লাভ নেই, সব Caging এ ধরা পড়ে যায়।
মানুষ খুঁজি, মানুষ কোথায়, সব শোষিত আর শোষক,
প্রাণে প্রাণ ছুঁইয়ে বলি, “শতপুষ্প প্রস্ফূটিত হোক।”
ভাঙুক রাত্রি, আসুক সকাল, ভাঙুক ঘুম,ভাঙুক জড়তা।
ভাঙুক যতো সংজ্ঞা,সূত্র, ভাঙুক প্রচলিত প্রথা।
প্রস্তুত হও, একমুখী হও, হও দৃঢ়চেতা, অধ্যবসায়ী
উর্বরা করো মানবজন্ম, পিছল পথে যেও না সাথী।
পড়ো আর লেখো, ভালোবেসে তাই, কিসের সংখ্যা, কিসের মান ?
“প্রথম””দ্বিতীয়” না বলে মানুষ মূল্যবোধের দাও প্রমাণ।
ছাত্রসমাজের প্রতি একজন শিক্ষক হিসেবে আমার বার্তা এরকমই।