গল্প :- স্যাপিও কলমে :- ছন্দশ্রী দাস

গল্প :- স্যাপিও
কলমে :- ছন্দশ্রী দাস

*******

” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তাকে ভালোবাসি ” চিৎকার করে কথাগুলো বলে দত্তা তার মায়ের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। মনিকা কঠিন চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে , “ভালবাসার আর মানুষ পেলি না ? নিজের বয়সের দ্বিগুণ একটা মানুষকে তোর ভালবাসতে হলো! যে পুরুষ বিবাহিত , স্ত্রী ও আঠেরো বছরের একটা মেয়ে রয়েছে তাকে ভালবাসলি! এই সমাজে কি কোনো অবিবাহিত অসংসারি পুরুষ ছিল না?”
দত্তা আয়না দেখে নিজের চোখের কাজল ঠিক করতে করতে বলে , “অবিবাহিত অসংসারী পুরুষ থাকবে না কেন মা! অনেক আছে। প্রেম-ভালোবাসা কখনো ওই সব থেকে হয় না। প্রেম ভালোবাসা দুটি মনের মিলনে হয়। পরস্পরের বোঝাপড়াতে হয়। আমরা দুজনে দুজনকে যত ভালো বুঝতে পারি অন্য কেউ পারেনা।”
মনিকা বলে , “তবে তোর পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত তোর মনের সঙ্গী এই মাও তোকে বোঝেনা বলছিস!”
দত্তা বলে , “সেই বোঝা আর এই বোঝার মধ্যে পার্থক্য আছে । বাবার সব না বলা কথা তুমি যেমন বুঝে যাও , ওমিও আমার সব না বলা কথা বুঝে যায়।”
মনিকা বলে , “বুঝতেই যদি পারতাম তবে তোর বাবা অমন করে অফিস কলিগ সুমিত্রার প্রেমে ভেসে যেত না। আমার সংসারটাও অমন করে ভেঙে যেত না। ”
“মা এটা তোমার ভুল ধারণা। বাবা এই সংসার ভেঙে বেরিয়ে যায় নি। বাবা আগের মতোই কেয়ারিং ।শুধু তুমি বদলে গেছো। মা তোমাদের তো ভালোবেসে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের আগে থেকেই তোমরা পরস্পরের মনকে জানতে , একে অপরের পছন্দ অপছন্দ , সংসারের খুঁটিনাটি সব। তবে কেন তোমাদের বিয়ের দশ-বারো বছর পরে দুজনের মনের বিশাল পার্থক্য এল? কেন তোমরা মনের দিক থেকে একে অপরের থেকে সরে গেলে ? কেন বাবা তার মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পেল সুমিত্রা আন্টির মাঝে!”
মনিকা বলে , “আমি সরে যাইনি দত্তা , সরেছে তোর বাবা। আমি আমার জীবনের সবটুকু এই সংসারে নিংড়ে দিয়েছি। একা হাতে চাকরি করেছি ,ঘরসংসার সামলেছি, তোর ঠাকুমাদাদুর দেখাশোনা করেছি , তোকে বড় করেছি। তোর বাবা তো একবার ফিরেও তাকায়নি। নিজের অফিসের উন্নতি ,নিজের প্যাশন , পার্টি এসব নিয়ে মেতে থাকলো। আর আমি আমার সবটুকু বিসর্জন দিয়ে ঘর সংসার নিয়ে জীবন কাটালাম।”
দত্তা তার মায়ের পাশে বসে বলে ,” মা তুমি একা সব করনি। তোমার প্রতিটি কাজের পাশেই তুমি বাবাকে সমানভাবে পেয়েছ ঠিক আগের মতোই। বাবা আমার স্কুলের প্রতিটি ইভেন্টে তোমার সাথে গেছে ,প্রতি বছর নিয়ম করেই আমরা সপরিবারে বেড়াতে গেছি। আমার যখন প্রবল জ্বর হয়ে মরোমরো অবস্থা ,বাবা হাসপাতালে তোমার পাশে বসে থেকেছে। দাদুর অপারেশনে বাবা থেকেছে। মামা যখন এ দেশের মায়া কাটিয়ে দিদিমাকে একা করে দিয়ে বিদেশে সেটেল হল বাবা তোমার সাথে দিদিমার দেখাশোনা করেছে। প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানে তুমি বাবাকে পাশে পেয়েছ।
কিন্তু বাবা! বাবা কি তোমাকে তেমন করে পেয়েছে তার পার্সোনাল লাইফে? বাবার অফিস পার্টি তোমার পছন্দ নয়। কেননা ওখানে বাবার সব কলিগের বউরা অত্যন্ত উন্নাসিক ও উগ্র সাজসজ্জা করে সারা পার্টি মদের গ্লাস হাতে অন্য পুরুষের গায়ে ঢলে ঢলে পড়ে। তারা নিজেদের জাহির করতে সব সময় ব্যস্ত। আর বাবাও নাকি সেই সুযোগে গান ,হাসি ,মজা ও নিজের স্মার্টনেস দিয়ে সবাইকে নিজের কাছে টেনেছে। এসব তোমার অপছন্দ। তাই তুমি বাবার সাথে পার্টি যাওয়া ছাড়লে আমার লেখাপড়ার দোহাই দিয়ে।
বাবা তোমার প্রতিটি নাচের প্রোগ্রামে যেত ঠিক মনে করে। কিন্তু বাবার যখন ক্লাবের ব্যাডমিন্টন কম্পিটিশন থাকতো তুমি যেতে না। কারণ খেলা তোমার ভালো লাগে না। তার থেকেও বড় কথা অফিসারদের বউদের ওই হট প্যান্ট পরা চেহারা ও ন্যাকান্যাকা ভাব তোমার অপছন্দ। বাবা কখনো তার জন্য অভিযোগ করেনি।
অথচ তুমি কত অবলীলায় বাবাকে দোষী করে নিজের নাচ ছেড়ে দিলে। তুমি জানতে সেদিন বাবা যেতে পারবে না, বাবার খেলা আছে। তুমি জিদ ধরলে ওই দিনেই তুমি স্টেজ শো করবে। তবুও বাবা সব ঠিক করে দিয়েছিল। কিন্তু বাবা কি জানতো ঐদিন সারা কলকাতা সহ শহরতলী পাওয়ার কাট হয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যাবে? তোমার প্রোগ্ৰাম নষ্ট হল। লোকজন স্টেজে জুতো ছুঁড়ে তোমাকে অপমান করল। তার দায় তুমি বাবার উপর চাপিয়ে নাচ ছাড়লে। পরে ওই মারমুখী জনতা তোমার কাছে অনেকবার ক্ষমা চেয়েছিল। তুমি কারোকে ক্ষমা না করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে নিজের চারধারে এক অলঙ্ঘ বেড়া তুলে দিলে।
বাবা বারবার তোমার কাছে আসার চেষ্টা করেছিল। তুমি বাবাকে কেন দূরে ঠেলে দিলে মা?”
” আমি তোর বাবাকে দূরে ঠেলিনি। তোর বাবাই নিজে সরে গেছে। কেন গেছে জানিস!! তার নাকি লজ্জা লাগে আমার মত প্রাইমারি স্কুলের টিচারের সাথে থাকতে। তার কলিগদের বউরা কেউ ইঞ্জিনিয়ার ,তো কেউ প্রোফেসর। কেউ বা ফ্যাশন ডিজাইনার। কেউ বা ইন্টেরিয়র ডেকরেটর। আমার মত সাধারণ গ্রাজুয়েট কেউ নয়।”
দত্তা বলে ,”মা তোমারটা একটা আলাদা পরিচয় ছিল। সেটা কেন ছেড়ে দিলে?নাচই তো তোমার পরিচয়ের মাপ কাঠি।”
“না নাচ সব নয় ”
“তবে সবটা কি মা?”
“তোকে বলা যাবে না”
” কেন যাবে না মা? আমি বড় হয়েছি চাকরি করি!”
” হ্যাঁ বড় হয়েছ , চাকরি করো ,নিজের থেকে দ্বিগুণ বড় এক সংসারী মানুষের সাথে প্রেম করো!”
” মা তোমাকে আবারো বলছি মনের মিল না হলে প্রেম হয় না। প্রেম-ভালোবাসা মানে সব সময় শরীর নয়। প্রেম ভালোবাসা মনের মিলনে হয়। দৈহিক মিলনে প্রেম মরে যায়। ভালোবাসা বুকে থাকে , তা কখনো মরে না ,শুধু সে গভীরে চলে যায়। তাকে দেখা যায় না। যারা মনে করে প্রেম ভালোবাসা মানে দুটি নারী ও পুরুষ শরীরের দৈহিক মিলন , তাদের সেই দৈহিক কামনা-বাসনা মিটে গেলে সেই প্রেম উধাও হয়ে যায়। আমার মনে হয় তোমার ও বাবার যে প্রেম ভালোবাসা ছিল তা কখনো মানসিক স্তরে গিয়ে পৌঁছায়নি। তাই তো বাবাকে নতুন মনের মতো সাথী খুঁজতে হলো। খুঁজতে হলো বলবো না পেয়ে গেল। হয়তো বাবা সুমিত্রা আন্টির সাথে তার মনের মিল পেয়েছে। তার সাথে কথা বলে বাবা যতটা মানসিক শান্তি বোধ করে , তোমার সাথে কথা বলে সেই মানসিক শান্তি আসে না।” মনিকা কঠোর মুখে বলে ,”মন না দেহ !
দত্তা বলে ,”বেশ মানলাম দেহ। সেই দেহ তো তোমারও আছে মা। তবে !! ”
মনিকা বলে , ” সব দেহ সব সময় সাড়া দেয় না। ”
“মা দেহ সাড়া না দিক তোমার মনটাও কি মরে গিয়েছিল? কেন তুমি তোমার মনের বাঁধন দিয়ে বাবাকে বেঁধে রাখলে না! মা নিজের জীবনটাকে এভাবে শেষ করে না দিয়ে আবার নতুনভাবে শুরু করো। দেখবে ভালো লাগবে।”
” ওসব কথা জানিনা। আমি শুধু তোর কাছে জানতে চাই ওই বুড়ো পুরুষমানুষটার কাছ থেকে সরে এসে তুই বিয়ে করবি কিনা ?”
দত্তা বলে , “মা বিয়ে মানে দুটি নারী পুরুষকে একত্রে শারীরিক সম্পর্ক করতে দেবার ধর্মীয় ও আইনগত অধিকার দেওয়া। সেই অর্থে দেখতে গেলে আজকাল ওই ধর্মীয় বা আইনি তকমার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি বেশ ভালো আছি।”
মনিকা ফোঁস করে ওঠে , “ওহ্ তার মানে ওই বউটির সংসার ভাঙার জন্য তোরা সব রকম ভাবে এগিয়ে গিয়েছিস?”
দত্তা বলে ,”সংসার ভাঙেনি মা। আর আমাদের শুধু মনের মিলন হয়েছে। শরীরের মিলন হয়নি। মা বিয়ে তো তোমরাও করেছিলে। আবার আমার ভালোবাসার মানুষটিও করেছিল। তবে কেন দুজন পুরুষ মানুষ বিয়ের বহু বছর পরে আবার নতুন করে প্রেমে পড়ল! তার মানে বিয়ে ,সংসার ,পরিবার ,সন্তান ,সমাজ সব নয়। তার থেকেও বড় কিছু আছে , মন। সেই মনের ঘর যখন শূন্য হয়ে যায় ,তখন সে নতুন সঙ্গী বা সঙ্গিনী খোঁজে। কেউ পায় ,কেউ পায় না। তখন বয়সটা কোনো ব্যাপার নয়। বয়সটা তখন কেবলমাত্র একটি সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায়। মনটাই হয় আসল।
হ্যাঁ মা , বিয়ে আমি করব যদি তেমন কোনো পুরুষমানুষ পাই যে আমার এই মানসিক প্রেমকে মেনে নেবে , তাকেই বিয়ে করব।”
” তেমন পুরুষ কি আছে যে সব জেনেশুনে বিয়ে করবে?”মনিকা জিজ্ঞাসা করে।
” কেন থাকবে না !আছে আছে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় স্যাপিওসেক্সুয়াল মানুষ অনেক আছে। আমিও তেমনি এক স্যাপিওসেক্সুয়াল মানুষ।”দত্তা বলে।
মনিকা বলে , ” স্যাপিওসেক্সুয়াল !সেটা আবার কি?
দত্তা বলে , “দেখো মা মানুষ যখন কারো প্রেমে পড়ে স্বাভাবিকভাবেই তার বাহ্যিক রূপ ও সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেয়। মানুষের সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক বা শারীরিক গঠন বা রূপেই সীমাবদ্ধ থাকে না। একজন মানুষের সৌন্দর্য বুদ্ধিমত্তার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। আমরা বেশির ভাগ মানুষ সেই বুদ্ধিমত্তার দিকটা দেখি না। প্রেমে পড়ার সময়ে কেবল সামনের মানুষটার বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখি। তোমার ও বাবার প্রেম হয়তো কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। তোমরা একে অপরের মানসিক সৌন্দর্যের দিকে সেই ভাবে নজর দাওনি। তাই তোমাদের প্রেম শারীরিক আকর্ষণ মিটে যেতেই কমে গেছে। আমার ও ওমির প্রেম বাহ্যিক সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে বুদ্ধিমত্তাতে আকর্ষিত হয়েছে। আমাদের মস্তিষ্কে প্রেম ও যৌনতার অনুভূতি আবর্তিত হয় বুদ্ধিমত্তাকে কেন্দ্র করে। যারা স্যাপিও হয় তারা বুদ্ধিদীপ্তদের প্রতি মুগ্ধ হয় ও প্রেমে পড়ে। এখন প্রেমের ধরন বদলেছে। মানুষ এখন কেবল সংসার পাতা বা সন্তান উৎপাদনের জন্য প্রেম বা বিয়ে করে না।
আর স্যাপিওসেক্সুয়ালরা কখনো হুট করে প্রেমে পড়ে না। প্রেমে পড়তে তাদের সময় লাগে। তবে দুই ধরনের স্যাপিও দেখা যায়। কিছু মানুষ আছে যারা বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে বেশি আকর্ষণ বোধ করে। আবার অনেকে আছে যাদের কাছে যৌন আকাঙ্ক্ষা মুখ্য নয়। বরং ওই মানুষটির সাথে বিজ্ঞান , মনস্তত্ত্ব , রাজনীতি , দর্শন নিয়ে আলোচনা করতেই ভালোবাসে। একে প্লেটোনিক প্রেমও বলতে পারো। এখানে যৌনাকাঙ্ক্ষা থাকলেও সেটা মুখ্য নয়। ”
“তার মানে তুই বলতে চাইছিস ওই বুড়ো মানুষটির বুদ্ধিমত্তা ছাড়াও তার প্রতি তোর যৌনাকাঙ্ক্ষাও আছে? ”
মনিকার প্রশ্নে দত্তা একটু চুপ করে থাকে। তারপর বলে , “অবশ্যই আছে ,তবে তা গৌণ। তোমাকে তো আগেই বলেছি আমার আর তার ভালোবাসা বা প্রেম হঠাৎ করে হয়নি বা সামনাসামনি দুজনে দুজনকে দেখে রূপে গুণে মুগ্ধ হয়ে হয়নি। আমাদের অনেক দিনের বন্ধুত্ব। একে অপরের বুদ্ধিমত্তা ,মনের ভাব প্রকাশের ভঙ্গিমা ,রসবোধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবোধ , সাহিত্য ,সংস্কৃতি ,রাজনীতি সমাজনীতি ,অর্থনীতি নীতি নিয়ে আলোচনা করতে করতে কবে যে মনের কাছাকাছি চলে এসেছি তা জানি না। যখন জানলাম তখন আর ফেরার কোনো পথ থাকল না। বুঝলাম আমরা একে অন্যকে ছাড়া থাকতে পারবো না। দুজনে দুজনের পরিপূরক। তাই আমাদের মনের প্রেম অটুট। এই প্রেম ভালোবাসা কখনো একে অপরকে ছেড়ে যাবে না। হয়তো সমাজ সংসারের চাপে পড়ে তা কেবল দুজনের মনের অন্তরে সীমাবদ্ধ থাকবে , বাইরে প্রকাশ পাবে না। ”
মনিকা বলে ,”এটা কোনো জীবন নয়। তোরও শারীরিক চাহিদা আছে। তা মেটাবি কি করে ? ”
দত্তা বলে ,”তা এখনও পর্যন্ত ভাবি নি।”
” নাই যদি ভাবিস তবে রোহিতকে ওইভাবে ঝুলিয়ে রেখেছিস কেন নাকে বঁড়শি আটকে ?ওকে ছেড়ে দে!”
“মা আমি রোহিতকে আটকে রাখিনি। ও নিজেই এসে আমাকে ধরেছে‌। রোহিতকে আমি ওমির কথা বলেছি। রোহিত কিছুদিন সময় চেয়েছে ।”
“দত্তা তুই আমাকে সত্যি করে বল তুই কাকে ভালোবাসিস ?রোহিতকে নাকি ওই বুড়োভামকে ?
দত্তা হেসে বলে ,”মা যতই মন্দ কথা বলো ওমির প্রতি আমার মন বিষিয়ে তুলতে পারবে না ।”
“তবে রোহিত সে কি করবে ?”মনিকা জানতে চায়।
দত্তা বলে ,” সে রোহিত জানে। আজ রোহিতের জবাব দেবার দিন। আমরা আজ মিট করব ফ্লোটিং রেঁস্তোরায়। সারাটা দিন তিনজনে সেখানে কাটাবো। তারপর যদি রোহিত মনে করে আমার সাথে সংসার পাতবে , আমরা বিয়ে করবো। ”
মনিকা রাগতভাবে বলে ,”রোহিতকে বলীর বকরা না বানিয়ে তোরা দুজনে নিজেদের মধ্যে জীবন কাটা। আমি কিছু বলবো না। চোখের সামনে একটা তরতাজা ছেলের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে দেখতে পারবো না।” মনিকা উঠে চলে যায়।
সোমদত্তা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। তারপর নিজে তৈরী হয়ে বেরিয়ে যায়।
গঙ্গাবক্ষে ফ্লোটিং রেঁস্তোরায় ডুবন্ত লাল সূর্যের দিকে তাকিয়ে তিনজনে বসে আছে। রোহিত ,সোমদত্তা ,ওমি। তাদের সামনে কফির কাপ ও স্ন্যাকস।
সোমদত্তা রোহিত ও ওমি দুজনের হাতে হাত রেখে বলে , “তোমরা দুজনেই আমার জীবনের অতি কাছের মানুষ। তোমাদের দুজনকে ছাড়াই আমি বাঁচবো না। রোহিত তুমি তো সব শুনলে। এবার তোমার কি অভিমত তাই বল। তুমি যদি আমার জীবন থেকে সরে যেতে চাও আমি বাধা দেব না। তবে তোমার প্রতি আমার যে ভালোবাসা প্রেম তাতে কোনো খাদ নেই ।”
রোহিত চুপ করে থাকে। তারপর বলে , “দত্তা সেই কবে থেকে আমাদের প্রেম ভালোবাসা। আমি এতদিন জানতাম আমি তোমার মনের সবটুকু অধিকার করে আছি। কিন্তু কখনো ভাবিনি তোমার মনের সবটুকু ভরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তাই তুমি তোমার মনের মতো সঙ্গীর দেখা পেয়েছ , তাকে তোমার জীবনে বরণ করে নিয়েছো। ওমি তোমার মনসঙ্গী ,তোমার নর্ম সঙ্গী নয়। আমার সাথে তোমার ভালোবাসা শরীর মন ও দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজের মাঝে। ওমির সাথে তুমি তোমার মনের উজাড় করা ভালোলাগার ও ভালোবাসার কথা বলো। আমার সাথে প্রয়োজনীয় ভালোবাসা , ভালোলাগার কথা। দুজনের জগত আলাদা আমরা কখনোই তোমার মনের জগতে যুদ্ধ করতে যাব না। তাই তোমাকে বিয়ে করে জীবন সাথী করতে আমার কোন দ্বিধা নেই। আমি জানি ওমির প্রতি তোমার ভালোবাসা , প্রেম যেমন সত্য। তেমনি আমার প্রতি প্রেম ভালোবাসাও সত্য। তুমি আমাকে কোনদিন ঠকাবে না। তাই আমি তোমার জীবন সাথী হয়ে থাকবো।”
সোমদত্তা রোহিতকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে।
ওমির মুখে এক স্বর্গীয় ভালবাসার হাসি ফুটে ওঠে। মনে মনে বলে , “দত্তা এভাবেই সবাইকে ভালোবেসে এক সূত্রে বেঁধে রেখো। ”
-: সমাপ্ত :-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *