*ট্রামের গল্প —পর্ব –৪ কাবেরী বোস

*ট্রামের গল্প —পর্ব –৪
কাবেরী বোস

কলকাতায় তখন শীত টা ভালোই পড়তো, গয়ারাম ট্রাম কোম্পানির ড্রাইভার , বিহারে বাড়ি সেখানে মা , বাবা, তিনসন্তান আর রামপিয়ারী!! তার বৌ কিছুদিন আগে হঠাৎ আগুনে পুড়ে মারা গেছে!! রামপিয়ারীকে খুব ভালোবাসতো গয়ারাম , কি হয়েছিলো সে জানেনা তখন সে এই কলকাতায় ট্রাম চালাচ্ছে , কত লোক কে ট্রামে বসিয়ে সকাল বিকেল পৌঁছে দিচ্ছে তাদের গন্তব্যে! হঠাৎ তার ছোটো ভাই দুলার এসে খবর দেয় রামপিয়ারী পুড়ে গেছে রান্না করতে গিয়ে!! উসকি মত হো গয়ী হ্যায়!! গয়ারাম সব ফেলে ছোটে তার বাড়িতে বিহারের ছোট্ট গ্রামে তার ঘরে!! বডি চেনা যায়না শুধু ফর্সা পায়ের নুপুর দুটো তখনো পড়ানো পায়ে!! গয়ারাম সেদিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়, রামপিয়ারী কখনো কিছু চাইতোনা শুধু হাসতো লজ্জা লজ্জা মুখ করে! গয়ারাম সব বুঝতো তার মনের কথা কখনো কখনো রামপিয়ারীর চোখ দুটোও খুব কষ্টে ভরা থাকতো , গয়ারাম হাজার জিজ্ঞেস করলেও বলতোনা কখনো! গয়ারাম তিন চার দিন থেকে ফিরে আসতো আবার এই শহরে!! কিন্তু রামপিয়ারী থেকে যেতো বুকের ভেতর! সে চলে যাওয়াতে গয়ারাম জিন্দা লাশ হয়ে গিয়েছিলো!! কিন্তু কি করবে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে তাদের তো মানুষ করতে হবে ঘরে পয়সা দিতে হবে!! গয়ারাম তাই আবার কলকাতায় ফিরে ট্রাম চালাচ্ছে!! বড্ড ঠান্ডা পড়েছে গয়ারাম অনেক মদ খেয়ে ট্রাম ডিপোর দিকে চলেছে এটাই শেষ গাড়ি আজকের মতো! হঠাৎ গয়ারাম দেখলো রামপিয়ারী দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ওপর!! সে চমকে উঠে ট্রাম থামিয়ে দিলো!! প্যাসেঞ্জার কেউ নেই শুধু কন্ডাক্টর অর্জুন নতুন ছোকরা সেও পেছনে বসে ঢুলছে!! গয়ারাম আবার ট্রাম চালাতে শুরু করলো!! এবার সে বুঝলো রামপিয়ারী তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে!! গয়ারাম কোনো রকমে পাশ ফিরে দেখলো লাল শাড়িতে ঢাকা তার পাশে দাঁড়িয়ে রামপিয়ারী!! গয়ারাম এর গলা শুকিয়ে কাঠ !!সে তাও ডাকলো অর্জুন অর্জুন!! কোনো সাড়া এলোনা !! পায়ের নপুর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পায়ে!! ট্রাম আবার দাঁড়িয়ে পড়েছে ডিপোর ভেতর গিয়ে আরো কিছুটা ভেতরে গিয়ে দাঁড় করাতে হবে গাড়ি! কিন্তু গয়ারাম নড়তে পারছেনা!! গয়ারাম বলে,” মুঝে মাফ করতে দে পিয়ারী মাফ করদে মুঝে ম্যায় ম্যায়!!” আর কিছু বলা হয়না আগুন লেগে যায় গয়ারামের শরীরের ওপর দিকে!! রামপিয়ারীকে যে গয়ারাম অত্যাচার করতো সবাই জানে তার বাড়ির লোকও কিন্তু সবচেয়ে বেশী করতো গয়ারাম!! তার মনে হতো তার অবর্তমানে রামপিয়ারীর ভালোবাসা আছে পাশের গ্রামের লখুয়ার সাথে সেইই দিয়েছে ওই পায়ের নুপুর দুটো! অনেক জিজ্ঞেস করাতে রামপিয়ারী বলেছিলো সে পয়সা জমিয়ে কিনেছে কিন্তু গয়ারাম বিশ্বাস করেনি তাই সে সেদিন চুপিচুপি গিয়েছিলো গ্রামে কাউকে না বলে , গোয়াল দিয়ে ঢুকেছিলো রান্নাঘরে রামপিয়ারী রুটি করছিলো আপন মনে সে পেছন থেকে রামপিয়ারী কে চুলার ওপর ফেলে দেয় ধাক্কা দিয়ে!! সিন্থেটিক শাড়ী জ্বলে ওঠে দাউ দাউ করে শরীরের ওপর দিক পুরো পুড়ে যায় !! সে পালিয়ে আসে অন্ধকারে !! পরের দিন গয়ারাম কে পাওয়া যায় ড্রাইভার কেবিনে মৃত অবস্থায় কিভাবে আগুন লাগে কেউ বুঝতে পারছেনা!! অর্জুন কিছু বলতে পারছেনা সে ঘুমিয়ে পড়েছিলো পেছনের সিটে শুয়ে!! অদ্ভুত ভাবে গয়ারামের মুখ আর ওপর দিক পুড়ে গেছে !! ফর্সা পা দুটো বেড়িয়ে আছে ট্রামের কেবিন থেকে!! আর দু পায়ে মেয়েদের নুপুর পড়া!!

#নীলবৃষ্টি
স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *