সূর্যশিশির। # ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।

#উপন্যাসিকা।
# সূর্যশিশির।
# ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।
# পর্ব-২।

দেবর্ষি রায়, সংক্ষেপে ডি.আর স্যার ছাত্র ছাত্রীদের অত্যন্ত প্রিয়। বিশেষ করে ছাত্রীমহলে তাকে নিয়ে যথেষ্ট উত্তেজনা।মধুরা, বৃন্দা, কুহেলী,শ্রীময়ী ছিল ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। একজন করে স্টেডি বয়ফ্রেন্ড চারজনের‌ই আছে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত ভদ্র পরিবারের সন্তান ওরা সবাই। পড়াশোনা শেষ করে যোগ্যতা অনুযায়ী স্কুল কলেজে চাকরি করে সেটল হবার ইচ্ছে সকলের‌ই। আশি-নব্বুইয়ের দশকে শিক্ষার মান ছিল। আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে উঠতো প্রায় প্রত্যেকেরই পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সহবতে। শতমন্যু লক্ষ্য করেছিল,মধুরা একটু বেশি মুগ্ধ হয়ে পড়ছে দেবর্ষিস্যারের প্রতি। কিন্তু স্যারের কঠোর ঔদাসীন্যের পাথুরে দেয়াল টপকানো দুঃসাধ্য!সেটা ফাইনাল ইয়ার। দেবর্ষি স্যারের কোচিংয়ে চার সখী চারজন ফিঁয়াসে সহ ভর্তি হয়। নামেই কোচিং। স্যারের বক্তব্য, তিনি যেহেতু ইউনিভার্সিটির বেতনভুক কর্মী, তাই ছাত্র ছাত্রীদের যেখানে অসুবিধে হবে,সেটা দেখিয়ে দেবেন।বেতন নেয়া সম্ভব নয়। কারণ তাঁর একটা এথিক্স তাঁকে প্রাইভেট ট্যুইশন করতে দেবে না। অত‌এব কোচিংয়ের কোনো রুটিন নেই। সকালে প্রয়োজন মতো তাঁর কাছে এসে যে কেউ পড়া বুঝে নিয়ে যেতে পারে। দেখা গেলো মধুরাই আজকাল ভবভুতি আর হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে বিপদে পড়ছে।প্রায় সকালেই ডি.আর স্যারের বাড়ি যাওয়ার দরকার পড়ছে তার। শতমন্যু বৃন্দাকে বলে,-‘মধুরাকে বোঝা। স্যার কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় অপমান করে দিতে পারেন। উনি মাইনে নেন না। রোজ রোজ তাঁকে বিরক্ত করতে যায় মধু। এটা ঠিক নয়।’- মধুরাও বোঝে এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। মুখে যদিও সে নিজের দুর্বলতা শিকার করে না। অবশেষে সসম্মানে পাশ করে বেরোয় ওরা আটজন। যোগ্যতা অনুযায়ী বৃন্দা ও কুহেলী স্কুলে চাকরি পায়। শ্রীময়ীর বাড়ি থেকে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়।বর প্রবাসী।নিউজিল্যান্ডে চাকুরিরত। শতমন্যু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করে মধুরাকে বিয়ে করে কল্যাণীতে নিয়ে যায়। সমস্যা শুরু হয় মধুরার অসংযমী মনোভাবের কারণে। একদিকে রুচিবান শান্ত,ভদ্র শতমন্যু, অন্যদিকে প্রবল উচ্চাকাঙ্খী, বিবাহিত জীবনে অতৃপ্ত,আর মনের গোপনে দেবর্ষি স্যারের প্রতি দুর্নিবার গোপন আকর্ষণ পুষে রাখা মধুরা,ভেতরে ভেতরে উদগ্র কামনায় দীর্ণ হয়ে যায়। মানুষ যখন অপরাধমনস্ক হয়ে পড়ে, তখন সে তার অপরাধের স্বপক্ষে যুক্তি সাজায়।-‘ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয়’- মনে মনে বলে মধুরা। কুহেলীকে ফোন করে। বলে-‘তুই তো জানিস কুহু, স্যারকে আমি ভালোবাসতাম। আজ‌ও বাসি।’
-‘ভালোবাসার সংজ্ঞা কি রে মধু? জোর করে কাউকে ভালো হয়তো বাসা যায়,তার ভালোবাসা পাওয়া যায় না। মধু তুই আগুন নিয়ে খেলছিস।’-
-‘জ্ঞান দিবিনা কুহু। শতমন্যুর সঙ্গে আমি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছি। ঐ মিনমিনে মানুষের জন্য আমার জীবনটা আমি ব্যর্থ হতে দেবোনা।’-
-‘কিসে সার্থক হবে মধু? তুই কি মনে করিস দেবর্ষি স্যার তোকে বরণ করে ঘরে তুলবেন? তিনি কি কোনদিন তোকে সে ভাবে প্রশ্রয় দিয়েছেন? যতদূর জানি, না… দেননি। তা ছাড়া বিশাখা ম্যাডাম তাঁর স্ত্রী।কারো ঘর ভাঙার চেষ্টা করাটাও অপরাধ।পাগলামী করিস না মধু। তাই ছাড়া তোদের ছেলেটা মাত্র ছয় মাসের, আর কারো কথা না ভাবিস নিজের সন্তানের কথা ভাববি না?’- কুহেলী বলে মধুকে। মধু ঝঙ্কার দিয়ে ওঠে -‘স্যার আমার সবচেয়ে বড়ো প্রায়োরিটি।’- তারপর ফোন কেটে দেয়। কুহেলী বোঝে একটা বড় ঝড় আসতে চলেছে। শতমন্যুকে সবাই ভালোবাসে। নাঃ, সব বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ও দাঁড়াবে শতমন্যুর পাশে। যোগাযোগ করা দরকার সবার সঙ্গে। শ্রীময়ী শুধু দেশে নেই। তবু সময়মতো ওকেও সব জানাবে কুহেলী। শ্রীময়ীর মাথা ঠাণ্ডা, পরামর্শ তো করা যেতেই পারে। আপাতত বৃন্দা, সৃজিত, আর পরমকে সব জানানো দরকার। একটার পর একটা ফোন বাজতে থাকে বন্ধুদের হাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *