জীবনবিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু কথা- পর্ব: ৯ ✍️ ডরোথী দাশ বিশ্বাস

জীবনবিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু কথা- পর্ব: ৯
✍️ডরোথী দাশ বিশ্বাস
অতিমারীর দিনগুলিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার একটাই বার্তা- পড়ো আর লেখো- ভালোবেসে তাই…
“Books are keys to wisdom’s treasure,
Books are gates to lands of pleasure,
Books are paths that upward lead,
Books are friends, come, let us read”.
কেমন আছো হাসিখুশির দল ?
তেমন করে দেখা হয় না আর!
হাসির ঝর্ণা ঝরে না অনর্গল।
মাস্কে ঢাকা মুখগুলি সব ভার।
কেমন আছো ফুলবাগানের ফুল ?
দুলছো বুঝি সহায়-বাতাস পেয়ে!
ভুলেও কিন্তু করছো না আজ ভুল,
স্বপ্ন ভাসে, দেখছি দু’চোখ ছেয়ে…
আমি আবারও বলছি— আমার সমস্ত এক্সামিনার বন্ধুদের বাদ দিয়ে জানতে ইচ্ছুক এমন সকলের অবগতির জন্য এ বিষয়ে কলম ধরা। একদিন আমি বৃদ্ধ হয়ে যাবো, মস্তিষ্কের নার্ভ শুকিয়ে যাবে, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাবে, চিন্তাশক্তি রহিত হবে, তখনও এ লেখা থেকে যাবে। এ থেকে যদি কেউ এতটুকুও উপকৃত হন/হয়, সেটুকুই লাভ।
যাঁরা অবাক হন আর বলেন- “খাতা দেখা”- এ আর এমন কি! আমি তো দু’দিনেই ২৫০ টা খাতা দেখে শেষ করবো। তাছাড়া খাতা দেখার জন্য তো টাকা পান।” এবারে বলি, যদি দু’দিনেই ২৫০ টা খাতা দেখে শেষ করা যেত তাহলে পঁচিশ ছাব্বিশ দিন সময় দিতো না বোর্ড। টাকা? এ নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। কখন অ্যাকাউন্টে ঢোকে, কত ঢুকেছে- কোনদিন দেখা বা হিসাব করার কথা মনেও আসেনি।
নির্ধারিত দিনে বোর্ড দ্বারা নির্দেশিত স্থানে গেলাম খাতা নিতে। নিয়ম কানুন মেনে রেফারেন্স নম্বর মিলিয়ে খাতার প্যাকেট আমার হাতে তুলে দিতে গিয়ে তরতাজা তরুণ শিক্ষক বললেন, “বাবা, কি ওয়েট! আপনাকে প্রচুর খাতা দিয়েছে।” আমি দুই হাত দিয়ে তোলার চেষ্টা করলাম। ধরার কায়দাতেই আর তুলতে পারলাম না। অসহায়ের মতো বাইরে তাকাতেই একজন এসে আমার চেনটানা লাল ব্যাগটাতে সাবধানে ঢুকিয়ে দিলো প্যাকেট, সাথে মার্কস ফয়েল সাবধানে, যাতে কোনভাবেই ভাঁজ না পড়ে। তারপর নিজেই তুলে নিয়ে হনহন করে ই.রিক্স স্ট্যান্ড করা আছে যেখানে সেদিকে চললেন। আমি পিছে পিছে। কাঁধের ব্যাগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কলম, মিষ্টির প্যাকেট। মুখে কোন কথা নেই। তখন থেকেই অস্থির আমি, না জানি কতো খাতা চাপিয়েছে। আগেই একটি ঘর ঠিক করে রাখা ছিলো, যার পূব ওয়াল ঘেঁষে মেঝেতে সুতীর চাদর ভাঁজ করে রাখা, সেখানে খাতার প্যাকেট, কাঁচি, স্মুদ লালকালির কলমের প্যাকেট, কালো কালির কলমের প্যাকেট- সব ইউজ অ্যান্ড থ্রো, পেপার ওয়েট, স্কেল রাখা হলো। একটা টেবিল, দুটো চেয়ার। দুটো চেয়ার কারণ সকালে দক্ষিণদিকে জানালার দিকে মুখ করে বসবো, রাতে উত্তর দিকে টিউবলাইটের আলোয় দেখবো। দক্ষিণের জানালা, নারায়ণবাড়ির খোলা জায়গায় গাছগাছালির ভিড়। গলির মোড়ে বাঁশঝাড়, মজা দীঘিতে নলখাগড়ার ঝোপ, চিলতে আকাশ ধরা দেয় জানালায়, ভোর থেকে সারাবেলা শুধুই সার সার ঘোড়ানিম, গামারি, সেগুন, তুন, পীচ, জামরুল,মিষ্টি তেঁতুল, দারচিনি, তেজপাতা, কারিপাতার বনে দোয়েল, শালিখ, ছাতার, বুলবুলি, ফিঙে, ঘুঘু, টুনটুনি, বাবুই, কোকিল, পাপিয়া, কুবো, কাঠঠোকরা, মাছরাঙা, বসন্তবৌরী, মৌটুসি, ইবিস, ইস্টিকুটুম, হরিতাল, ডাহুক,প্যাঁচা, টিয়া, হাঁড়িচাচা, পায়রা এমন কি চিলতে নীলে চিলের ভেসে আসা মনটাকে ভীষণ ভালো করে দেয়। মার্চ- এপ্রিল, বসন্ত কি না— তাই এত পাখির সমাবেশ। দক্ষিণের জানালা ঘেঁষে চওড়া একটা কাঠের বেঞ্চ রাখা, যদি চোখকে বিশ্রাম দিতে হয়, তাহলে মিনিট দশেক চোখ বুজে শুয়ে থাকা যাবে। কাঠের বেঞ্চের একপ্রান্তে জলের বোতল, আর প্যাকেটজাত শুকনো খাবার রাখা। সিলিং ফ্যান, অ্যাটাচ্ড টয়লেট। সব ব্যবস্থা আগেই করা। খাতা দেখতে বসলে আমার মুখের স্বাদ চলে যায়। জানি না কেন। তাই গৃহকর্তাকে বললাম, তোমার কাছে তো কিছু চাই না, এবার চাইছি- আমার জন্য কিছু প্যাকেটজাত খাবার কিনে এনো তো। যদিও সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় আমি এসব খাবার কোনদিন খাইনা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, অথবা ভ্রমণকালে এসব কিছু সঙ্গে রাখি। তো এনেছিলো। অ্যামেরিকান স্টাইল ক্রীম ও অনিয়ন ফ্লেভারযুক্ত লেইস, ঐ একই ফ্লেভারের বিঙ্গো পটেটো চীপস্, প্রাণ পট্যাটো ক্র্যাকার্স, মাখানা (রোস্টেড ইন অলিভ অয়েল), স্নিকার্স (টুয়েলভ্ এক্স ফ্যামিলি ট্রীট), ইউনিবিকের পট্যাটো চীপস্, মুখরোচকের বাসমতি চালভাজা (সুগার ফ্রী, আর জিরো পার্সেন্ট কোলেস্টেরল রাইস ক্র্যাকার), জ্যাবসন্স (রিচ ইন ট্রাডিশন) রোস্টেড পিনাটস্ সিজনড্ উইথ স্পাইসি ইন্ডিয়ান মশালা- আরো কত কি। কত প্রস্তুতি! মেডিক্যাল লিভ নিতেই হবে, কারণ আমার বাড়িতে দু’জন ব্রেইন স্ট্রোকের পেশেন্ট আছেন। একজনের অবস্থা খুবই খারাপ। তাঁদের সুস্থ রাখাটাও আমার চ্যালেঞ্জ। লিভ নেবো- স্কুলে আগেই জানিয়ে দিয়েছি। খাতা এলে যথাস্থানে সেই পলিথিন ব্যাগ খোলার আগেই পুরো ক্ষেত্রফল জুড়ে স্যানিটাইজার স্প্রে করলাম। ওয়েট নিলাম, আট কেজি একশো গ্রাম। তারপর সীল্ড মুখ খুলে প্যাকেট গুনলাম। তিনটা ৭৫ এর বান্ডিল, এতো দিয়েও শান্তি হয়নি। আরও একটা প্যাকেট দিয়েছে, যাতে একটাই উত্তরপত্র। আমার মনে শুধু একটাই শব্দ এলো, “নির্মম”। হা হা হা, এ মন ভীষণ কঠিন মন। ছোট থেকেই নানারকম ভীষণ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, ম্যাক্সিমাম ওয়ার্ক লোড নিয়ে চলেছি সবসময়। তাই এই সংখ্যাটাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম। শিক্ষক কি না— একটা কথাও এ বিষয়ে কোথাও খরচ করবো না, ভেবেই নিলাম।
(ক্রমশঃ)
শব্দ সংখ্যা: ৬৯৮