|| এও এক মানবিকতা || © মোনালিসা সাহা দে

|| এও এক মানবিকতা ||
© মোনালিসা সাহা দে

সময়ের স্রোত বড় অদ্ভুত। কোন তরঙ্গ যে কোথায় বয়ে নিয়ে চলে তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয় কখনোই। একসময় একটি যান আমাদের মফঃস্বল অঞ্চলের যাতায়াতের নিয়মিত মাধ্যম ছিল। একে ছাড়া আমরা দৈনন্দিন জীবনের কথা ভাবতেই পারতাম না। যতই স্কুটার, বাইক বা চার চাকা থাকুক না কেন, এর প্রয়োজনীয়তা আমাদের কাছে সর্বাধিক ছিল। কতদিন আর? বছর বারো-তেরো আগেও রাস্তায় অহরহ দেখা যেত এই তিন চাকার যানকে। যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে এর চালক ছিলেন। কখনও বা কিছুটা অন্যায্য ভাড়াও নেওয়া হতো নিজের মতন করে। কিন্তু কথাতেই আছে, কোনোকিছুই এ পৃথিবীতে চিরস্থায়ী নয়। আর হ্যাঁ, নিজেদের কখনোই কোনো কিছুতেই অপরিহার্য ভেবে নিতে নেই।

এরপরেই আগমন ঘটলো বর্তমান মফঃস্বলের বিখ্যাত যান টোটোর। যখন প্রথম টোটো এলো শহরে, তখনও মনে হয়নি আমাদের এখানে এর একাধিপত্য এতটা বিস্তৃত হবে। তখনও রিক্সাতে চাপার অনেক কারণ খুঁজে পেত মানুষ… “নিজের মত করে যাওয়া যায়”, “কারও পাশে বসতে হয় না”, “ভাড়া কম পড়ে”.. ইত্যাদি প্রভৃতি। তখন রিক্সার সাথে টোটো রীতিমতো পাল্লা দিয়ে চলত। কিন্তু এখন? এখনকার ব্যাপার আলাদা। বেকারত্বের এই যুগে বহু শিক্ষিত যুবকও তাদের রোজগারের মাধ্যম হিসাবে টোটোকেই বেছে নিয়েছে। রিক্সা তো আর দেখতেই পাওয়া যায় না। যদিও বা দেখা যায় দু-একটা, সেই যানের চালকটি যথেষ্ট বৃদ্ধ এবং দুর্বল হয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। হয়ত অর্থাভাব এবং পরিস্থিতির চাপেই এখনও তাকে এই যানের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হচ্ছে।

কালের প্রবাহে সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। আমরাও ধীরে ধীরে সেই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিয়ে দিব্বি চলতে শুরু করি। এরই নাম জীবন। তবু যদি কখনো মনে হয় আপনার খুব বেশী তাড়া নেই, যাত্রাপথের দূরত্বও কম, যদি কখনো দেখতে পান দূরে এক রিক্সাওয়ালা দাঁড়িয়ে রয়েছে একাকী শুকনো মুখে, তাকিয়ে আছে আপনার দিকে এক বুক আশা নিয়ে, ফিরিয়ে দেবেন না তাকে। অনুগ্রহ করে টোটোর বদলে আপনার সেই অল্প দূরত্বের রাস্তাটুকু রিক্সাতে পারাপার করুন। চারিদিকে কম্বল বিতরণ, খাদ্য বিতরণ, অনেক ধরনের সমাজসেবাতেই তো আমরা অংশগ্রহণ করে থাকি। না হয় ভেবে নেবেন, এও একধরনের সমাজসেবা। যদিও এতে দান নেই কোনো, তবু এক অদৃশ্য আশীর্বাদ অবশ্যই পেতে পারেন আপনি।

এই বা কম কী?

****

ছবি – shutterstock

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *