*ট্রামের গল্প —পর্ব –৩ কাবেরী বোস

*ট্রামের গল্প —পর্ব –৩
কাবেরী বোস

চিঙ্কি ছুট্টে ট্রামে উঠে পড়লো , বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমেছে , চিঙ্কির ক্লাশ টেন সামনে বার মাধ্যমিক… পড়াশুনোতে একটু কমজোরি সে , পড়া কিছুতেই মাথায় ঢোকেনা… তারওপর রোহন দা !! মানে তাদের পাড়ার নতুন ভাড়াটে ওরা , রোহন দা আর তার বাবা , মা এক দিদি তার বিয়ে হয়েছে সদ্য… টল ডার্ক হ্যাণ্ডসাম !! উফ তাকালেই কেমন যেনো হয় চিঙ্কির , ওই পাড়ার অনেকেরই হয় , মনামি , প্রিয়া, শৈবালী , অরুন্ধতী আরো অনেকেই আছে কিন্তু চিঙ্কি তো রোহন দাকে ভালোবাসে না !! ওরাও কি ভালোবাসে !! না কক্ষোনো না , চিঙ্কির মতো কেউনা চিঙ্কি জানে… রোহন দা কলেজে পড়ে , পড়া শেষে বিদেশে চলে যাবে… চিঙ্কি কে কি মনে থাকবে রোহন দার !! চিঙ্কি চোখ বুজিয়ে ভাবতেই চোখে জল এসে গেলো !! পেছন ফিরে দেখলো রোহন দা তার দিকেই তাকিয়ে আছে !! স্কুল থেকে বেড়িয়ে প্রায় দেখে রোহন দা দাঁড়িয়ে আছে , অবশ্য রোহন দার কলেজ টা কাছেই তাইই হবে হয়তো দেখা হয়ে যায় !! আজ রোহন দাই তাকে পেছন থেকে শক্ত হাতে তুলে দিয়েছে ট্রামে তবেকি !! চিঙ্কির বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটছে!! তাও সে ভয়ে ভয়ে একবার তাকালো পেছন ফিরে রোহন দার দিকে , দেখলো রোহন দা বাইরে বৃষ্টি দেখছে নিচু হয়ে… তবে কি চিঙ্কি কে ভালোবাসে সে !! বুঝতে পারে তার চোখের ভাষা!! আচ্ছা কলেজেও তো রোহন দা র অনেক মেয়ে বন্ধু আছে রোজই নেকিয়ে নেকিয়ে বাই সাই করতে আসে রোহন দাকে!! তাদের কি কেউ ভালোবাসে রোহন দাকে !! আর রোহন দাও !! না না চিঙ্কি নিজেই নিজের মন কে বোঝায় , অবশ্য ইদানিং অরুন্ধতী খুউউব ইন্টারেষ্ট নিচ্ছে রোহন দার প্রতি!! হঠাৎ জামায় আলতো টান অনুভব করে চিঙ্কি তাদের স্টপেজ এসে গেছে !! দুজনেই নেমে পড়ে ট্রাম থেকে,বৃষ্টিও পড়ছে অল্প অল্প তখন!! এর দুদিন পর ওই ফেরার ট্রামেই চিঙ্কিকে রোহন দা বলে ,” চিঙ্কি তার সম্পর্কে যা ভাবে সব ভুল তার গার্ল ফ্রেণ্ড আছে তাই সে যেনো পড়ায় মন দেয়!!” চিঙ্কির কোথাও কিছু সেদিন ভেঙে গিয়েছিলো , এরপর আর সে রোহন দার কথা বলেনি কোথাও কিন্তু রোহন দাকে ভোলেওনি … ওই দিবানাপন আর কোথাও পায়নি সে!! এর বহু বছর পর চিঙ্কির তখন পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবন তার বর নিতান্তই সাধারণ ছেলে অতীশ, তাদের মধ্যে ছোট্ট নকুল এসেছে তাদের সন্তান , তবু এখনো বুকের মধ্যে কোথাও আছে রোহন দা !!অতীশ কে তাই সবসময় মানতে পারেনা চিঙ্কি অসুবিধে হয় অবশ্য অতীশ এর মধ্যে ওই দিবানাপন নেই !! অতীশ কে দেখতেও খুব সাধারণ তবে সাজলে গুজলে ভালোই লাগে, তবু চিঙ্কির চোখ সেইই ডার্ক টল সানগ্লাশ পড়া রোহনে আটক আজো!! পুজো আসছে তাই চিঙ্কি আর অতীশ মার্কেটিং করে এগোচ্ছে বাসের দিকে বাড়ি ফেরার জন্য , সদ্য মোবাইল এসেছে চিঙ্কি কে তার বাবা গিফট করেছে একটা মোবাইল , অতীশ অফিস থেকে পেয়েছে, চিঙ্কির ফোন টা বাজছে , চিঙ্কি ব্যাগ থেকে ফোন টা বার করে কানে দিতেই মার গলা পেলো , মা ব্যাস্ত হয়ে বলছে” চিনু শুনেছিস খবর সেইই রোহন রে আমাদের পাড়ায় থাকতো সেইই যে রে খুব ভালো স্কলার ছিলো !! গুষ্টির পিন্ডি বুঝলি নিজের বৌ কে মেরে অরুন্ধতী কে বিয়ে করেছিলোতো মনে নেই !! হ্যাঁ তাকে ডাউরির চাপে মেরে এখন জেলে বুঝলি !!ছি ছি এরা নাকি ভদ্র ঘরের ছেলে!!” চিঙ্কি ফোন টা কেটে দিলো মনে হচ্ছে এক ঝটকায় সব তার ছিঁড়ে গেছে তার!! হঠাৎ তাদের সামনে ট্রাম টা এসে দাঁড়ালো তাদের বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য !! চিঙ্কি দু হাতে ব্যাগ নিয়ে ট্রামে ওঠার জন্য পা দানিতে পা রাখলো আর বুঝতে পারলো আজ তাকে পেছন থেকে শক্ত দু হাতে ধরে আছে অতীশ তার বর !! চিঙ্কি পেছন ফিরলো এক সেগেণ্ড এর জন্য অতীশ কানের কাছে মুখ এনে বললো ,” ভালোবাসি খুব তোমাকে চিঙ্কু” এইই দিবানাপন টা কে কি বলবে চিঙ্কি !!! ট্রাম টা ছেড়ে দিয়েছে !!

স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *