••• নাটক : পোলিশ_ফাইলস্ ••• কলমে : রাজ দত্তগুপ্ত

••• নাটক : পোলিশ_ফাইলস্ •••

কলমে : রাজ দত্তগুপ্ত

(চরিত্র : মিসেস রুদ্র, রঞ্জিতা রুদ্র, সমর ভৌমিক, ভরত মিশ্র)

(একটি সন্ধ্যা, লো ভলিউমে টিভি চলছে। সোফায় বসে মিসেস রুদ্র, তার বৌমা রঞ্জিতা চা খাচ্ছে, গল্প করছে)

মিসেস : চা টা খুব ভালো করেছ রনি

রনি : (সামান্য হেসে) : আচ্ছা মা, তোমার ছেলে কবে আসতে পারবে তোমাকে কিছু বললো?

মিসেস : বললো তো সেদিন, সেপ্টেম্বরের আগে বোধহয় আসতে পারবে না, সেই কোন্ দুবাই তে পড়ে আছে। এখন নাকি ব্যাবসার খুব চাপ….তা তোমাকে কিছু বলেনা?

রনি : আর বোলো না, জানতে চাইলেই খালি হাসে, আর বলে এতো তাড়া কিসের?

(কলিং বেল বাজে)

রনি : এ সময় আবার কে এলো?

মিসেস : তুমি টিভিটা বন্ধ করো, আমি দেখছি ।

(টিভি বন্ধ হয়, গেট খোলার আওয়াজ হয়। অচেনা এক আগন্তুককে কোলাপসেবল গেটের বাইরে দেখা যায়)

মিসেস : আপনি?

আগন্তুক : নমস্কার…আমি Inspector সমর ভৌমিক, এই যে আমার আই-কার্ড, লেক গার্ডেনস্ থানা থেকে আসছি

রনি : কিন্তু আমাদের বাড়িতে কেন?

সমর : একটু বিশেষ দরকারে। যদি আসতে অনুমতি দেন…

মিসেস : বেশ আসুন

(কোলাপসিবল গেট খোলার আওয়াজ, আবার তালা লাগানোর আওয়াজ, দরজার ছিটকিনি লাগানোর আওয়াজ)

মিসেস : বসুন

(তিনজনই সোফায় বসে)

সমর : মিসেস রুদ্র এবং মিসেস রঞ্জিতা রুদ্র, আমি সত্যিই দূঃখিত, এই অসময়ে এসে আপনাদের বিরক্ত করবার জন্য। আপনার ছেলে অরণ্য রুদ্র একা দুবাইতে থাকেন ব্যাবসার ব্যাপারে, আমি সবই জানি, আর আপনার স্বামী তো বছর তিনেক আগে এক car accident এ মারা গেছেন….তবু আসতে হল, কারণ বিষটা এতোটাই…

(কথা কেড়ে নেয় রনি)

রনি : প্লিজ আসল কথায় আসুন…

সমর : হ্যাঁ মাডাম আসছি। বলতে আমারও খারাপ লাগছে, কিন্তু কি করি বলুন…ডিউটি যে।….(একটু থেমে) আমরা ফিরে যাই মাস সাতেকের একটি ঘটনায়।

মিসেস : মানে?

সমর : আপনাদের এখানে একজন সিকিউরিটি গার্ড কাজ করতেন সন্ধ্যা সাতটা থেকে পরের দিন সকাল সাতটা পর্যন্ত…কিছু টুকিটাকি কাজ, যেমন মাঝে মধ্যে একটু বাজারও সে করে দিত

মিসেস : হ্যাঁ, ভরত মিশ্র । সে তো ছয় মাস আগেই কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে ওর বাড়ি হরিয়ানায়।

সমর : না, তা তো নয়। ও কাজ ছেড়ে যায়নি। আপনারা ওকে ছেড়ে দিয়েছেন, বরখাস্ত করেছেন

রনি : (রেগে) মানে, কি বলতে চাইছেন আপনি?

মিসেস : রনি, একটু চুপ কর। পুরো ব্যাপারটা শুনতে দাও। হ্যাঁ তারপর?

(একটা গমগমে আওয়াজ শুরু হবে)

সমর : কেমন লোক ছিলেন ভরতবাবু, যদি একটু বলেন

মিসেস : তা এমনি তো ভালোই ছিলেন

সমর : কিন্তু তবুও আপনারা তাকে কিছু মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন….সে নাকি আপনাদের টাকা পয়সা হাতিয়েছিল বাজার করার সময়। একদিন রাতে নাকি সে আপনাদের এই মেইন গেটের তালা খোলার চেষ্টা করেছিল, এরকম কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা ওনাকে বরখাস্ত করেছিলেন

রনি : দেখুন মিস্টার, আমরা ঠিক যতটা দেখেছি বা বুঝতে পেরেছি, ঠিক ততটাই সাবধানতা নিয়ে ওনাকে এখান থেকে সরিয়ে দিয়েছি ।

মিসেস : ঠিক তাই, ভবিষ্যতে যে আরো বিপদ হতে পারতো না, তার কি গ্যারান্টি আছে, বলতে পারেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, এই ছয় মাস আগের একটা সামান্য ঘটনার সঙ্গে আপনার আমাদের বাড়িতে আসার কি প্রয়োজন?

রনি : ঠিক তাই

সমর : প্রয়োজন আছে ম্যাডাম, না হলে কেন আসবো, বলুন তো…. গত ২৭শে ডিসেম্বর ভরতবাবু গলায় দড়ি দিয়ে সুইসাইড করেছেন নিজের বাড়িতে, এবং তার পকেটে পাওয়া গেছে এই স্বীকৃতি, সম্পূর্ণ আপনাদের against এ লেখা। (একটি কাগজ মিসেস রুদ্রকে সমর দেয়, রনিও পড়তে এগিয়ে আসে)। দেখুন আপনারা ভালো করে পড়ে, বারবার আপনাদের নাম উল্লেখ করা আছে। কি কি দুর্ব্যবহার তার সাথে করেছেন, দেখে নিন।এক অমানসিক যন্ত্রণা নিয়ে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন । আর নিচে তার signature ।

(সবাই স্তম্ভিত, গমগম আওয়াজটা ইকো হবে…সবাই কিছুক্ষণ চুপ)

সমর : নিশ্চয়ই চিনতে পারছেন ভরতবাবুর হাতের লেখা

মিসেস : না, মানে, আমাদের তো কোনও দিন দরকার হয়নি উনার হাতের লেখার। তা আপনি যখন বলছেন হবে নিশ্চয়ই ।

রনি : একটা কথা কিন্তু আমার কাছে এখনো পরিষ্কার হল না, হরিয়ানার ঘটনা লেক গার্ডেনস্ থানায় investigation এর কারণ?

সমর : কারণ, আপনাদের এই বাড়ির ঠিকানাটা লেক গার্ডেনস্ থানার আন্ডারে।

মিসেস : এখন উপায়? মানে, আমাদের নামে কি arrest warrant বেড়িয়ে যাবে?

সমর : সে তো যাবেই, কিছু তো করার নেই

রনি : আমার কেন জানি না, ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত লাগছে। তা আপনি কিছু ব্যাবস্থা নিশ্চয়ই করতে পারবেন । প্লিজ… দেখুন না একটু

সমর : (কিছু চিন্তা করে) তাহলে কেসটা তো অনেক ঘুরিয়ে সাজাতে হবে…. ছেড়ে দিন ম্যাডাম, অনেক ঝামেলা, হবে না মনেহয়

রনি : এখনো তো কেসটার সবে investigation শুরু হয়েছে, আর ব্যাপারটা আপনিই দেখছেন…যদি কিছু, মানে বলছিলাম…

মিসেস : দিয়ে দিচ্ছি এখুনি…কত পড়বে বলুন না, এতো ইতস্তত করার কি আছে, এসব ছোটোখাটো ব্যাপার তো কতই চাঁপা পড়ে

রনি : আমি কি তোমার ছেলেকে একটা ফোন করবো মা?

মিসেস : না না রনি, ওকে এখন এসব কিছু জানিও না । ও আর কি বলবে? ম্যানেজ করে নিতেই বলবে।

রনি : যাক গে, কত পড়বে বলুন তো। এই সব সামান্য ঝামেলা আর ভালো লাগছে না

সমর : যতটা সোজা ভাবছেন, ততটা নয় ম্যাডাম….অনেক জায়গা ম্যানেজ করতে হবে। সব মিলিয়ে….তা লাখ দুয়েক তো পড়বেই, আরো বেশিও হতে পারে…

মিসেস : রনি, তুমি এক্ষুণি ভিতরের লকার থেকে নিয়ে এসো, আঃ দেরি কোরো না।
(রনি ভিতর ঘরে চলে যায়) বুঝতেই পারছেন সমরবাবু, এ পাড়ায় আমাদের একটা ভীষণ সম্মান আছে। আপনার যা লাগে নিয়ে যান, শুধু কেসটা….

(আবার কলিং বেল বাজে)

মিসেস : এ সময় আবার কে এলো? আপনি বসুন সমরবাবু

(মিসেস দরজা খোলো, আবার দরজা বন্ধ করে, মেইন গেটে তালা লাগায়, সব আওয়াজ থাকবে)

মিসেস (অবাক) আপনি !!!

(প্রবেশ করে আজকের নায়ক ভরত মিশ্র, যাকে সমর চেনেই না, পরবর্তী কথোপকথনে যা বোঝা যায়)

ভরত : হ্যাঁ বৌদি, আপনার কাছে এলাম একটি দরকারে

মিসেস : আসুন আসুন, একটু এদিকে আসুন তো

(মিসেস রুদ্র ঘরের এক কোণায় নিয়ে যায় ভরতকে । তারা খুব আস্তে আস্তে কিছু কথা বলে, যা শোনা যায় না। শুধু শোনা যায় ভরতের মুখে “আচ্ছা ঠিক আছে, আমি দেখছি”। রনি একটা খাম নিয়ে ফিরে আসে)

মিসেস (ভরতকে) আপনি বসুন

ভরত : (রনিকে) কেমন আছেন ম্যাডাম?

রনি (থতমত খায়) হ্যা, না মানে…. ভালো আছি, আপনি!!!

(চারজনে চারটি সোফা দখল করে। ভরত সমরকে একটু ভালো করে দেখে, হাত বাড়িয়ে দেয় করমর্দনের জন্য)

ভরত : সরি, এতোক্ষণ খেয়ালই করিনি। আপনার পরিচয়টাই জানা হয়নি

সমর : আমি সমর ভৌমিক, লেক গার্ডেনস্ থানার Inspector। আপনার পরিচয়টা জানা হল না তো

ভরত : ও, nice।….আপনার আই-কার্ডটা একটু দেখতে পারি, যদি অসুবিধা না হয়

সমর : ও সিওর, এই নিন (কার্ড দেয়)

ভরত : তা এই বাড়িতে, মানে বিশেষ প্রয়োজনে নিশ্চয়ই

সমর : না না, সেরকম কোনো ব্যাপার না, পাড়ার কিছু ছেলে কিছু বাড়িতে খুব জুলুম করছে নানা কারণে, তাই একটু দেখতে আসা… আপনার পরিচয়টা কিন্তু এখনো পেলাম না

ভরত : আমি? (একটু হাসে), খুব সাধারণ একজন, নাম ভরত মিশ্র অফ্ হরিয়ানা…

সমর : (গলা শুকিয়ে যায়) মানে?

ভরত : মানে…. অতি সোজা….এই এতোক্ষণ যাকে নিয়ে এই দুই মহিলার কাছে বিশাল গল্প ফেঁদেছেন, বেশ কিছু টাকা হাতানোর ধান্দা করছিলেন, আমিই সেই অধম, Special Branch

সমর : না মানে…

ভরত : এই নিন, আমার আই-কার্ড।…… ভালো করে দেখুন মিষ্টার সমর ওরফে অমর ভৌমিক।….তা বেশ সুন্দরভাবে scan করে laminate করিয়েছেন কিন্তু আপনার আই-কার্ড

সমর : স্যার…

ভরত : অনেক দিন ধরেই আপনাকে আমরা খুঁজছি। আহা, কি সুন্দর গল্পটা সাজিয়েছিলেন। বাহবা দিতে হয় আপনাকে, শুধু আমার ছবিটাই যোগাড় করতে পারেননি, তাই…

মিসেস : আমরা তো আপনাকে দেখে অবাক হয়ে গেছি ভরতবাবু

রনি : আমার ভীষণ মাথা ধরেছে মা। এ সব কি হচ্ছে কিছু বুঝতেই পারছিনা

ভরত : কারো ভয় পাবার কিছু নেই। এই লোকটি বহুদিন ধরেই এসব কাজ করে বেড়াচ্ছিলেন। খবর ছিল আমাদের কাছে। আর এই যে একটু আগে বলছিলেন, পাড়ার কিছু ছেলের কথা…সবই এই মহামান্য বাবুর কারসাজি। And now, your game is over Mr…..

সমর : আমাকে ছেড়ে দিন স্যার, আর এই ভূল হবে না

ভরত : (কোথাও ফোন করে) হ্যাঁ Mishra speaking স্যার, হি হ্যাজ্ কট, ফোর্স পাঠান immediate । হ্যা কি বলছিলেন যেন, হ্যাঁ হ্যাঁ ছেড়ে তো দিতেই হবে আপনাকে। আর একটু wait করে যান, ফোর্স এই এসে পড়লো বলে…. ম্যাডাম, টাকাটা ভিতরে রেখে দিয়ে আসুন

মিসেস : কিন্তু আপনার চাকরির ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না তো ভরতবাবু

ভরত : দিনে তো চাকরিটা করতে হয়, আর সন্ধ্যায় আপনার এখানে ডিউটি

রনি : যাঃ বাবা….

(বাইরের রাস্তায় পুলিশ ভ্যানের হর্ণ শোনা যায় । গমগমে আওয়াজটা থেমে যায়। কলিং বেল বাজে)

ভরত : আসুন মিস্টার ভৌমিক, আপনাকে ছেড়ে দিই….আসি বৌদি, বাকি কথা আগামীকাল হবে।

(মিসেস, রনি হতভম্ব, গেট খোলার আওয়াজ, গেট লাগানোর আওয়াজ। ভরত, সমর বেরিয়ে যায়। দূরে মিলিয়ে যায় পুলিশের গাড়ির আওয়াজ)

রনি : (হাঁপাতে হাঁপাতে) তখনই বলেছিলাম মা, ওকে একটা ফোন করি, তুমি তো…

মিসেস : শিগ্গির অরণ্যকে ফোন কর, রনি ।।

_____________ যবনিকা ____________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *