দুপুরের গল্প ✒️✒️✒️ ছন্দা দাশ ( চট্টগ্রাম )
দুপুরের গল্প
ছন্দা দাশ ( চট্টগ্রাম )
নিদাঘ দুপুর। তার পরেই মনে হলো এমন কেন মনে এলো ভাবনা ছাড়াই। দুপুরকে আমার চিরদিনই অন্যরকম ভালো লাগে। অন্যরকমটা যদি প্রশ্ন করেন কেমন? তার জবাব আমি দিতে পারবো না। অথচ বুকের মধ্যে তখনও জলতরঙ্গের শব্দ। এসব আমাকে কেউ শেখায়নি। ঐ যে দুপুররোদের বৃষ্টিতে শুকনো পাতা উড়িয়ে গান গাইছে ” শুকনো ঘাসে শূন্য বনে আপন মনে।। অনাদরে অবহেলায় গান গেয়েছিলেম —। কে? কে? কে গাইছে? চিরকাল সে আমার অধরাই রয়ে গেছে। সেই যেন আমার দুপুর রোদের একলা মেয়ে। সেসব দুপুরের গল্প ফেলে এসেছি অনেক কাল। ধোপা পুকুরের পাশ দিয়ে কুমারী সিঁথির মতো পথ। বড় নির্জন। পাঁকুর আর বট গাছেরা কী রহস্যময়তায় বাস করে। ভর দুপুরেও তক্ষকের ডাক। কতোদিন গলা উঁচিয়ে দেখতে চেয়েছি তাকে। বুকের মধ্যে ঢেঁকি পাড়ের শব্দ। মা বলেছে ঘুমিয়ে পড়তে। মায়ের চোখ বাঁচিয়ে পা টিপে টিপে বেরিয়ে এসেছি ঘোষ পাড়া দিয়ে। ওখানে সুনীতিদের ধলা গরুটা চোখ বন্ধ করে জাবর কাটছে। আমাকে দেখে হাম্বা করে ডাক দিয়ে আবার চোখ আধাআধি বন্ধ করলো। আমি তার পাশ কেটে যেতে যেতে কেমন একটা গন্ধ পেলাম গরু,খড়, বুনো গাছ আর দুপুরের। এই গন্ধ অন্য সময় আর থাকে না। নিজেকেই নিজে বলি আমি কী অন্যরকম? একটু পাগল ধরনের? ধুর এসব কী ভাবছি। এখানেও একটা পুকুর আছে। জলে শাপলা ফুল ফুটে থাকে সাদা আর লাল। একটুও জল দেখা যায় না। খুব ইচ্ছে করতো জলে নাবতে। গ্রামের সবাই জানে এই জলে ব্রহ্মদৈত্য থাকে। ছোট বাচ্চাদের পেলেই ধরে নিয়ে যায়। মনে মনে রাম নাম জপতে জপতে বগা চরা বিলের দিকে চলি। ঐ যে ভয় তারও ভালো লাগা আছে নিজস্ব অনুভবে। একলা দুপুর শুধু কি আমার একার? এক পায়ে বিলের মধ্যে ঘাড় গুঁজে বক পাখিটা কেন তবে কোন সুখে দাঁড়িয়ে থাকে? আর পেয়ারা গাছের ডাল বেয়ে নাবতে নাবতে কাঠবেড়ালির ছানা যে উৎসুক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে? তার? শিশু গাছের নীচে ঘাসের বিছানায় উদলা গায়ে ঘুমিয়ে থাকা পথিকেরও দুপুর বুঝি!
এখনও দুপুর আসে। তবে আগের মতো নেই তার ঐশ্বর্য। কখন হারিয়ে ফেলেছে একলা দুপুরের সেইসব দিন।