অ্যাম্বার চোখ ✒️✒️ রেশম লতা

অ্যাম্বার চোখ
রেশম লতা

ইতোমধ্যেই আমাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য তার কাছে ভালো ধরনের ব্যাখ্যা তৈরি হইছে। হোক। জানি এইটা তার প্রথম কিংবা দ্বিতীয় পক্ষের বুদ্ধি। আর আমার আছিল অতিউচ্চমাত্রার আবেগপ্রবণ বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শনের মারাত্মক অভ্যাস। কালের খরা এইখানেই বাঁধছে। বাঁধুক, ওগোরে দিছি ন্যাংটা রাস্তা। উদাম ঘন্টা।
রাতের রাস্তা ক্রমেই ফাঁকা হয় ওরা ওয়াইন নিয়া মাতে।আমি স্যাটেলাইটের আলোয় এক কাপ নুডুলস সেঁকে বড়দিন উদযাপন করি। আপাতত আমার কোনো ব্যক্তিগত আনন্দ নাই। বহু বছর আগে যে কথারা কথা দিছিল তা প্রথম পক্ষের দুই ওয়ারিশের নামে খাস দলিল দিয়া আইছি। আঘাত কিছু মনে করি নাই শুধু অনুভব করেছি কীভাবে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। কয়েক লিটার তাজা বাতাস খাওয়ার পর বুঝলাম আমি আসলেই একজন দেবদূত। ওহ্ কি এক বিরল দয়ালু হৃদয় নিয়ে তাকে খাদ হতে বাঁচিয়ে ছিলাম। অকৃতজ্ঞ। বিশুদ্ধ শাস্তিস্বরূপ চায়না তালা দিছি লটকায়া। এবার সান ডিয়োগোতে দেখা সী স্লাগ ডিম আমার মাথা আউলায়া দিছে ভাবি এরচে কচুর লতি কখনোই ভালো অইবার পারে না। জৈত কলা কিংবা আইট্টা কলার ভান ধইরা ডার্বি খাওনের লোক আমি না। তাও একটা ধরা ছুঁইছে ছুঁইছে ভাব। ওন্থে সামান। অ্যাম্বার চোখ। ওহ্ কি লোভনীয় চোখ। সম্মোহন কাটাইতেই পারি নাই। প্রেমে পড়তে বেশি সময় অপেক্ষা করিনি। তারও আছিল দেশে ফেরার তাড়া। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। সম্ভবত সে কারনে রাজনীতি ভালো বুঝে। সদ্য স্বাধীন দেশে পা রাহনের প্রবল ইচ্ছা। আমিও তাল মিলাই। আমারে কয়, কর্পোরেট চাকরী পুন্দায়া দিন রাত এক কইরা জীবনে কি করলা? আমি অবাক তার ভাষা শুইনা। বস্তুত এটাও একটা কারন ওর ঠোঁটের একমাত্র অধিকার নেয়ার লাইগা। ভেকেশনে যহন গেছি তহনের শুরু থাইকাই ওর সাথে লাইগা রইছি। বাঙালি আর অস্ট্রের ষোলো কলার সব দেখাইছি। নিজের করা পিএইচডি থিসিসের নব্বই শতাংশও। প্রবল জানলেওয়ালা পুরুষ আমার পছন্দ। তার পছন্দ বুদ্ধিদীপ্ত বাঙালি মেয়ে। কিন্তু আমার যে আবেগওয়ালা মাথা আছে এইটা সে এহনও জানে না। জানে না আগের বিতিকিচ্ছার রামলীলার কাহিনি। দু-তিন বস্রী হিস্যা।
যাইহোক, কর্পোরেট চাকরি বাদেও আমি যে কবিতাও লিখি এইটা সামানের হৃদয় খুলে যাওয়ার কারন। কবিতার মোহে সে ঝাঁঝড়ায়া গ্যাছে—

“সেনাপতির অভাবে ভগ্নদশা হতে
মড়কের কবল হতে তুলে এনেছি একটা সাদা পিঁপড়ে
ওমা! এতো লাল পিঁপড়ের দল
ছ পায়ে কেমন আমারেই ঘায়েল করতে চায়
সরল স্বীকারোক্তির জেরে এইমাত্র পোর্টালে লিখছি, ভুলের রক্ত এহন হুল হইয়া বিঁধছে বুকে।
আহা সুখের দিনের একটা বাষ্প রুটিন তোরা দে__
ক্যালেন্ডারে নীল দাগ বসায়া আমারে পাহারাদারের পোশাক পড়ায়া দে__
একটা টর্চ আর হাতে একটা গোন্ডন ওয়াচ বসায়া দে__
ব্যস, বেবাক দেখবার খেমতা পামু!
তোগোর টেকার অংক ছুঁইতে আমার পথ হারানোর অংক কষার দশা।
সেনাপতির অভাবে ভগ্নদশা হতে
মড়কের কবল হতে তুলে এনেছি একটা সাদা পিঁপড়ে।”

ওন্থে সামান প্রাণী প্রেমী। তার পূর্বপুরুষরাও নাকি এমন প্রেমী। বাবা সৈনিকদলের প্রধান। অন্য দেশে হামলা করে, সৈন্য পাঠায় যুদ্ধ করতে। জিগাইলাম ক্যামনে কি? উত্তরে সামান আমারেই প্রশ্ন করে আচ্ছা, দেশে রোহিঙ্গাদের প্রতি তোমাদের মানসিকতা এখন কেমন?
আমি কইলাম সমস্যামূলক। আর মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা কেমন চলছে ? আসলে খুব একটা ভালো না।
হুম, তোমাদের রাজনৈতিক ইস্যুতে মিডিয়া স্ট্রাটেজি নিয়ে ভালো করে ভাবতে হবে। ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট যদি ঠিকঠাক করতে পারে তাহলে ভালো কিছু ঘটবে। এবং চলছেই আলাপচারিতা। অতঃপর, ঠিকই বলেছ তবে শোনো সামান জনগন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষমতার কাছে, পলিটিক্সের কাছে অসহায়। আর আমি অসহায় ভাগ্যের কাছে। এবার সামান চুপ হৈছে। ইদানীং ওর রাজনৈতিক প্যাঁচাল মার্কা গপ্প আমার কাছে অসহ্য লাগে। তয় আমারে সে ভালোই বুঝে। চোখের ভাষাও পড়তে পারে। কিন্তু আমার আত্মারে ছুঁইতে পারে নাই। পারব ক্যামনে আগেকার বন্যজীবনরে ছাইড়া দিলেও এখনো তার প্রতি আমার অদ্ভূত রকমের দূর্বলতা কাজ করে এটা বুঝতে দেই না।
কৌশলে এড়িয়ে চলি। বহুদিন হয় সামানের লগে যোগাযোগ নাই। দেশে আবারো গন্ডগোল। আমার চাকরিটা চইলা গেছে। ক্যান গেছে, ক্যামনে গেছে নিজেও জানি না। জানবার চেষ্টা করছি। ব্যর্থ। বাদ দিছি। আজকাল সামানের চোখগুলারে ভীষণ মনে পড়ে। কইছিলাম কোনো এক সন্ধ্যায় চার্চের সামনে এভিন স্ট্রিটের নর্থে দাঁড়ায়া সামানের হাতে হাত রাইখা তোমাকে যদি নাও পাই তোমার চোখদুটো আমার। এ আমি পাবই পাব। এ তো পবিত্র ইচ্ছে। অ্যাম্বার চোখ। ওহ্ কি সম্মোহন!

এককালে গান শিখাইতাম। এক ছাত্রের বড় ভাই ড. তাসিম। দেখতে শুনতে মন্দ না। সম্বন্ধটা হিরণকাকীমা আনছে। পরে জানছি পরিচয়। ছোটকাকা সবটা জানতো। তার সেজো ছেলে যে আমারে চায়। কিন্তু কাকীমা চায় না। হের লাইগা উনি কষ্ট কইরা টানা সপ্তাহ সম্বন্ধ আনতাছে। আনুক। আমার সামান আসবে ওর দুটো চোখে আমায় দেখবে। এ বিশ্বাস আমার ১০৫ ডিগ্রি জ্বরেও থাকবে। গোপনে জানছি, ড. তাসিম আমার জন্যই আইবুড়ো। সেই কলেজ থেকেই নাকি আমার পিছে। মায়া হইছে। যেখানে গান শিখাইতাম সেইখানে একটা এপয়েন্ট নিলাম। সব ঠিকঠাক আগের মতই শুধু আমিটাই নাই অথচ এইসব আমার হাতে গড়া। পুরু চশমার ফাঁকে কালো চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। কিছুটা কাঁপছে। আমি চেয়ে আছি। এমন হ্যাবলা মানুষ এখনো দুনিয়ায় আছে! ৩-৪ টা কথা বলে বিদায় নিই। সামনের কথাও বলছি। বেচারার চোখের পানিতে গাল ভিজে একাকার। সান্ত্বনা দিই নাই, এ আমি কোনো কালেই দিতে পারি না। সামনের মাসে সামান আইবো। আমি গেলাম আনতে। বহুদিন পর দেখা। অ্যাম্বার চোখ। কইলাম এই প্রথম দেশে আসলা নির্মল হাওয়া পাচ্ছ, মাটির ঘ্রাণ পাচ্ছ, সবুজ দেখছ নিশ্চয়ই খুব খুশি। এই খুশিতে আমারে কি দিবা? তোমার চির চাওয়া আমার দুটো অ্যাম্বার চোখ। হঠাৎই কিছু একটা ঘটল। গত একমাস হয় আমি নাকি আইসিইউতে। বুঝলাম এক্সিডেন্ট। ওন্থে সামান কোথায়! ঝাপসা চোখে কাউকে দেখলাম। ড.তাসিম। ভয় নেই। আপনি এখন সুস্থ। ওন্থে সামান, ওন্থে সামান কোথায়? একটু আয়নায় আসুন প্লিজ। অ্যাম্বার চোখ? আমার চোখে অ্যাম্বার চোখ! ওন্থে সামান স্পট ডেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *