টাইম লাইন (ফেসবুক ও জীবন) ✍️পিংকু ব্যানার্জী

টাইম লাইন (ফেসবুক ও জীবন)
✍️পিংকু ব্যানার্জী
________________________________________
জীবনের টাইম লাইনটা যদি ফেসবুক টাইম লাইনের মত হতো – বেশ হতো!
আসল লুকিয়ে নকলে বাজী মাত করা যেতো,
না দেখে, না চিনে শুধু স্ট্যাটাসের মাধ্যমেই মনের আদান প্রদান !
কথা…. যা হতো তা হয়তো messenger এ,
দেখা বলতে গোটা কয়েক কভার আর বেশ কিছু প্রোফাইল পিকচার,!
চেনা বলতে ঠিক যা বোঝায় তা হতো পোষ্টের মাধ্যমে !
যেখানে বছরের পর বছর একসাথে থাকার পরও একজন অপরজন কে ঠিক করে চিনে উঠতে পারে না,
সেখানে ফেসবুক টাইম লাইন আর ফটো দেখে কারো কে চেনা ! তাও আবার ভালোবাসার মত একটা পবিত্র সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে জীবন সঙ্গী করার ভাবনা – জীবন কি এতটাই সহজ?
আচ্ছা জীবনের কি কোন টাইম লাইন থাকে?
ফেসবুক যে সুবিধা দিয়েছে জীবন কি ঠিক সেই সুবিধা দেয়?
এডিট করা ফটোর আড়ালে নিজের মুখ,
যা দেখে নিজেই অবাক হতে হয় – সেখানে অন্য কেউ প্রকৃত চেহারা দেখবে কি ভাবে !!
মণিষীদের কথা কোট করে লেখাতে কি কারো চরিত্র বোঝা যায় !
গুড মর্নিং, খেয়েছো কি না, শরীর কেমন আছে জিজ্ঞেস করলেই কি কেয়ারিং প্রমাণ করা যায়?
প্রতিটা মানুষ নিজের খারাপ গুণ গুলো লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে,
লুকিয়ে রাখে নিজের মুখের খুঁত গুলো, পছন্দ করে চরিত্রের ও মুখের স্বচ্ছতা,
ভিতরে যতই নোংরামি থাকুক – পরিষ্কার ইমেজ কার না পছন্দের?
ফেসবুকে একটা মানুষকে দেখে যতটা সুন্দর বা সহজ সরল মনে হয়- প্রকৃত জীবনে সত্যিই কি সেই মানুষটা অতটাই সুন্দর, সহজ সরল?

কয়েক দশক আগে আমার বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছিল,
অদ্ভুত ব্যাপার বিয়ের আগে তারা কেউ কাউকে দেখেও নি,
হাজার ঝগড়াঝাটি, সব সময় মতের মিল যে ছিল ; তা কিন্তু নয়
কিন্তু দিন শেষে তারা একে অপরের- ডিভোর্সের ব্লক লিস্টে তাদের নাম কখনোই আসে নি,
এমন নয় মা স্বাবলম্বী ছিলেন না,
কিন্ত বিশ্বাসের দু কূল তাদের মধ্যে ছাপিয়ে পড়তো,
বিশ্বাস আর ভালোবাসার কমতি ছিল না তাদের,
সেই সময়ে প্রযুক্তির এত উত্তরণ ঘটে নি – ছিল মনের সব টুকু বিশ্বাস,

এখন প্রযুক্তির বিপ্লব এসেছে বলা যেতেই পারে-যার সুফল অনেক, সুন্দর দিকটা নেবার মানুষ খুব কম,!
প্রযুক্তির খারাপ দিকটা আমাদের বড়ই টানে – আর তার সাথে নাড়িয়ে দেয় সম্পর্কের ভীত,
সময়ের সাথে প্রযুক্তি আরো উন্নত হবে, তার সাথে সাথে আমরা আরো তার খারাপ গুনে সমৃদ্ধ হবো,
সুফল কজন নিতে পারবো জানি না!!
প্রকৃত শিক্ষা যেখানে হারিয়ে যায় প্রযুক্তি সেখানে নিছক মিথ্যের জাল বোনে!

সময়ের সাথে সাথে টাইম লাইন বদলে যায় – প্রকৃত মানুষটার কি কোন বদল হয়?
এরা ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ভোলে না – প্রোফাইল change করে নেয়,!
এদের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড টাইম লাইনে গুরুত্ব দেওয়া মানুষটার নামেই হয়ে থাকে,
জীবনের কোন পাসওয়ার্ডের ধার এরা ধারে না !!
এরা বদলায় না এদের টাইম লাইন প্রোফাইল পিকচার কভার সব বদলে যায় !!
যারা সময়ের সাথে সাথে টাইম লাইন বদল করে- আসলে তারা কারো টাইম লাইন ছেড়ে আসে চাহিদা শেষে,
আবার চাহিদা শেষ হলে অন্য কোন টাইম লাইনে ব্যস্ত হয়ে যায়,
এর রকম মানুষদের সাথে যোগাযোগ না থাকাই ভালো,

ফেসবুকের সবুজ বাতিটার সাথে ট্রাফিক সিগন্যালের সবুজ বাতির একটা ফারাক আছে,
ট্রাফিক সিগন্যাল সবার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের সবুজ হয়ে এগিয়ে যাবার সংকেত দেয়,
কিন্তু ফেসবুক এই সুবিধাটা দিয়েছে যেখানে সবুজ বাতি সবার জন্য অন হলেও শুধু কোন একজনের জন্য চিরদিনের মত অফ করে দেওয়া যায়,
যার প্রতি কেয়ারিং ছিল একটা সময় একদিন তার অজান্তেই তাকে ব্লক লিস্টে জায়গা করে দেয়,
এতদিনের কেয়ারিং মানুষটার ফেসবুকের সবুজ বাতি সে আর দেখতে পায় না,
জীবন তখন এগিয়ে যায় না, থেমে যায় !!
ফেসবুক social media র গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক হতে পারে- গুরুত্বপূর্ণ জীবনের একটা অংশ নয়,
প্রযুক্তিতে ডিলিট বলে একটা অপশন আছে – যেটা যখন খুশি ইউজ করা যায়,
জীবন ওই রকম ডিলিট বলে কোন অপশন দেয় না – যা জড়িয়ে যায় মুছে দেবার কোন উপায় থাকে না।
পিংকু ব্যানার্জী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *