শ্রুতিনাটক : “পৈশাচিক” নাট্যকার : রাজ দত্তগুপ্ত
শ্রুতিনাটক : “পৈশাচিক”
নাট্যকার : রাজ দত্তগুপ্ত
(চম্পাকলি, ইন্সপেক্টর অমর পাটেকর)
(একটি থানা, একটু রাত। ইন্সপেক্টর অমর পাটেকর একা বসে মদ খাচ্ছে, [শব্দ থাকবে]। চম্পাকলি কাঁদতে কাঁদতে এসে ঢোকে, বিধ্বস্ত অবস্থা তার। অমর পাটেকর তাকে চেনে)
চ – আমাকে বাঁচাও গো দারোগাবাবু, আমার সব্বনাশ হয়ে গেছে। আমি…….
অ – আরে রে রে চম্পাকলি বটে, তুই তো ওই রতনপুরের বস্তিতে থাকিস, তাই না রে ?
চ – হা গো পাটেকর সাব, আমি চম্পাকলি
অ – তা কি হয়েছে তোর বটে, অমন হাপুস হাপুস কাঁদছিস কেনে ? ….দিলি তো আমার নেশাটা ভাগিয়ে
চ – আমি……আমি খুন করে এসেছি গো, তুমি আমারে বাঁচাও গো
অ – ইইই, কি বলছিস বটে তুই চম্পারাণী?
চ – হা গো হা, মিছা বলছি না
অ – তা কাকে খুন করলি বটে
চ – বলছি বলছি, তুমি কাউরে কিছু বলবা না কও
অ – না না, কাউকে কিছু বলবক নাই। এই তোর বুক ছুঁয়ে বলছি বটে
চ – আমি জানি গো, তুমি তো ভালো মানুষ
অ – তা তুই এ কাজ করলি কেনে?
চ – মাঠ থেকে ফসল কেটে ফিরছিলাম। অন্ধকার হয়ে গেল। অনেক রাস্তা আসার পরে মনে হন, কে যেন আমার পিছন লিয়েছে। যতবার ঘুরে দেখতি চাই, আর কিছুই দেখতি পাইনা।
অ – তারপর?
চ – একটু জিরোতে বসলাম, একটা বিড়ি সবে ধরাইছি, কে যেন আমার ঘাড়ে এসে হুড়মুড়িয়ে পড়ে, আমার মুখটা বাঁধি দিল
অ – সে কি রে, বলিস কি বটে
চ – হা গো পাটেকর বাবু, টানি নিয়া গেল পাশের ঐ ভাঙা মন্দিরের ভেতর। চিনতি পারলাম, পাশের গ্রামের ভরত
অ – কে বটে এই ভরত?
চ – অঞ্চল প্রধানের ওই শয়তান ব্যাটা টা গো
অ – ইইইই…..করেছিস কি তুই চম্পা? কি সব্বনাশ করলি রে তুই?
চ – কেন গো বাবু, তোমার কি হল গো
অ – সে অতো তুই বুঝবি না রে। তা ভরতের বডি টা এখন কুথায় ?
চ – ঐ মন্দিরেই পরি আছে
অ – আমার কাজ বাড়ায়ে দিলি, বডিটা সরাতি হবে…..তা খুন করতি গেলি কেনে
চ – কি কইরবো গো, বল দেখি…. জোর করে আমার বুকে, মুখে, পিঠে কামড় বসাইতে লাগলো….. কি ধস্তাধ্যস্তি, কি বলবো গো বাবু তোমারে…..
অ – ছি ছি ছি….এই রকম অবস্থা বটে?
চ – হা গো পাটেকর বাবু, এই দেখো দেখো, আমার পিঠে কতো কামড় বসাইছে…..
অ – থাক থাক, জামা খুলতি হবে না। তা খুন টা করলি কখন?
চ – যখন আমার কাপড়টা তুলতি গেল, তখন আমার এই হেসোটা দিয়ে মারলাম গলায় কোপ, এক কোপেতেই সব শেষ।
অ – তা তুই স্বামীকে তো খেয়েছিস বহুকাল আগেই। তা ভরতের সাথে না হয় একটু খেলে নিতিস……শুধু শুধু খুন খারাপি…..
চ – তুমি এ কথা কেন বলছো গো বাবু?
অ – বলছিলাম, অনেক ঝামেলায় ফেসে গেলি তো। তোর এতো সুন্দর চেহারা, সে তো অনেকেরই লোভ হতি পারে
চ – পাটেকর বাবু, আমাকে বাঁচাও গো
অ – হুম, কিছু তো একটা করতেই হবে তোর জন্য চম্পা। আমি এই বিলাসপুর থানার ইন্সপেক্টর অমর পাটেকর, আমার কথায় বাঘে গোরুতে এক ঘাটে জল খায়…… কিছু তো করতেই হবে…..
চ – বাবু গো…….
অ – তুই একটা কাজ কর চম্পা, থানায় এখন কেউ নেই…… তুই পাশের ঘরে যা, আমি তোকে ওষুধ, মলম সব লাগিয়ে দিচ্ছি….যা যা দেরী করিস না……সব সেরে যাবে
চ – আচ্ছা বাবু গো, যাই…..(চলে যায়)
অ – হু যা, বোতলটা শেষ করে যাই (মদ ঢালা এবং খাওয়ার শব্দ। চম্পার ঘরে প্রবেশ করে অমর)
চ – একি দারোগাবাবু, তুমি এরকম জামাকাপড় খুলে এসেছো কেন
অ – এই মলম আর ওষুধ লাগিয়ে দেবো তো তোর সারা শরীরে, তাই….(হাসে)। জামা কাপড় সব খুলে ফেল্ দিকি। ভালো করে মালিশ করে দিই।
(চম্পা জামাটা খুলে উপুর হয়ে শোয়)
চ – আমি উপুর হলাম, এই নাও দেখো গো বাবু, কি হাল কইরেছে আমার পিঠে
অ – আহা চম্পারাণী, তোর পিঠটা তো খুব নরম রে (মলম মাখায়, হাত বোলায়)। আচ্ছা এবার চিত্ হয়ে শুয়ে কাপড়টা তুলে দে
চ – না…..না……সে আমি পারবুনি
অ – আমি তোর সব জায়গায় এই ওষুধ আর মলম লাগিয়ে দেবো, সব ব্যাথা, যন্ত্রনা তোর সেরে যাবে রে চম্পাকলি (হাসে)। তাই বলছি, তুই সব…..
(এক ঝটকায় চম্পা উঠে দাড়ায়। চেচিয়ে বলে)
চ – তোমার মতলব ভালো না বাবু। অনেক বিশ্বাস লিয়ে তুমার কাছে আসিছিলাম। শেষ পর্যন্ত তুমিও….. (ডুকরে কেঁদে ওঠে)
অ – আহা তুই উঠে পড়লি কেনে? আমাকে তুই ভুল বুঝলি রে চম্পা। আয় আয় কাছে আয়, মলমটা তোর বুকে মালিশ করে দিই, সব যন্ত্রণা তোর কমে যাবে।
চ – থাক, থাক গো বাবু, অনেক করেছো তুমি আমার। যত্তসব শয়তানী মতলব তোমার মাথায়……থুঃ থুঃ……
অ – যাঃ বাবা, কিরকম মেয়েরে তুই চম্পা?
তোকে বাঁচাতে চাইলাম, তোর ভালো করতে গেলাম, আর আমাকেই তুই…..
চ – থাক, আমার আর ভালো করতে হবে না গো বাবু (কাঁদে)। আমি তোমার কাছে আসছিলাম বাবু, তোমাকে ভালো মানুষ ভেবে, বাঁচার জন্য। আর তুমিও কিনা একদম নাঙ্গা হয়ে আমার ইজ্জত……ছি ছি ছি।
অ – দাড়া বলছি চম্পা, আমার কথা শোন্
চ – (চিৎকার) না আমি আর দাড়াবো না, কিছু শুনতে চাই না আর, আমি চললাম আমি তোমার চরিত্র সবার কাছে ফাঁস করে দিতে…..
অ – (গর্জে ওঠে) চম্পা, বেশী বাড়াবাড়ি করিস না
চ – কি করবে আমারে? মারবে? মারো। আমি তো আগেই মরে গেছি (এগিয়ে যায় চম্পা)
অ – আমার মুখের উপরে কথা ?
চ – হ্যা হ্যা তাই। তোমরা পারো শুধু নাঙ্গা হয়ে মেয়েদের শরীর নিয়ে নোংরামি করতে
অ – (চিৎকার করে) চম্পা, তবে তুই মর্, তোর মরণ ই ভালো (ফায়ার করে অমর)
চ – খুব ভালো করলে গো বাবু। তোমরা সব পারো, তোমরা সব……আঃ আঃ (লুটিয়ে পড়ে চম্পা)
অ – এই কে আছিস? বডিটা জঙ্গলে ফেলে দে
জঙ্গলে
(করুণ আবহসুরে নাটক শেষ হয়। ‘বন্দে মাতরম’ সুর ভেসে ওঠে)
—————— সমাপ্ত ——————