ll ধর্ম ll পূর্বা মাইতি।
ll ধর্ম ll
পূর্বা মাইতি।
মহীশূর এক্সপ্রেস কাটপাডী ষ্টেশনে রাত দশটার
সময় নামিয়ে দিয়ে ঝিক্ ঝিক্ করতে করতে বেরিয়ে গেলো l চারদিক দেখার আগেই অটোওলা ,ট্যাক্সিওলা ঘিরে ধরলো l চারজনের
দল একটা অটো ঠিক করে সি.এম .সি
হসপিটালের কাছে একটা হোটেলে দোতলার
ঘরে ঢুকে গেলাম l ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে ,দুটো রুমে দুজন দুজন করে সে রাতের মতো শুয়ে পড়লাম l
বন্ধ ঘর থেকে বারান্দায় ছুটোছুটির ও খিলখিল হাসির শব্দ পেলাম l ঘুম ভেঙে
গেলো l মোবাইলে দেখলাম সাড়ে পাঁচটা l ধীরে ধীরে উঠে দরজা খুলে দেখি –একটা খুদে আর
একটা একটু বড়ো l ছোটটা ছেলে , এই হয়তো
চার কি পাঁচ, আর বড়োটা মেয়ে ,সাত কি আটের মতো হবে l আমাকে দেখে দুজনে গা ঘেঁসে হাতে হাত রেখে শৃঙ্খলিত হলো l
-এই তোদের নাম কিরে ?
চেয়ে রইলো দুজনে l
– তুমহারা নাম কেয়া হ্যায় ?
-হানি , উয়ো ইসু !
আবার চুপ l
-ইতনা শুভেসে তুমলোগ উঠ সকতে হো ?
– মাম্মি হ্যায় !
বলেই একটা ঘরের দিকে আঙুল দেখালো l আধখোলা দরজায় দেখলাম বড়োরা ফিসফিস করে কথা বলছে l মনে হয় অনেকজন
মিলেই এসেছে l হঠাৎ সালোয়ার পরা একজন মেয়ে বলবো না বউ বলবো ,এসে দাঁড়ালো l তবে কি এদের মা ?মনেতো হয় একটু বেশী বয়সের তফাতের দিদি ! মনটা খারাপ হয়ে গেলো l আমি ঘরে চলে গেলাম l
সকাল বেলায় বেরনোর সময় দেখি হোটেলের নাম –
‘মাসা আল্লাহ’ l রাতে তাড়াতাড়ি ঢোকার সময় খেয়াল করিনি l বাড়ি থেকে বেরনোর সময় দুর্গা -দুর্গা বা নারায়ণ-নারায়ণ বলাটা ছোটবেলা থেকে
ঠাকুমার মুখ থেকে শুনে শুনে অভ্যাস হয়ে গেছে l তাই অভ্যাসমতো যেই শুরু করতে গেলাম — নেমপ্লেট’র দিকে চোখ পড়তেই দেখি সেটা আর কমপ্লিট করতে পারলামনা l অগত্যা হসপিটাল l এর আগে যতো বেসরকারি হসপিটাল গুলোতে গিয়েছি — সুবেশিতো ইষ্টদেবতাকে দেখে কপালে হাত ঠুকেছি l এখানে জ্যোতির্ময় যীশুকে দেখে মুখে নারায়ণ বলে কপালে ধীরে ধীরে হাত ঠেকে গেলো l
এই হলো আমার দেশ …. আমার ভারতবর্ষ l
পরধর্ম সহিষ্ণুতা নিয়ে রচনা লিখে বাহবা পাওয়া
যায় – রাতে আশ্রয় চাওয়া যায় – রোগমুক্তির জন্য হাত বাড়ানো যায় — কিন্তু অন্তর খুঁজে চলেছে সব জায়গায় নিজের ধর্মের অস্তিত্ব l