# সীমান্ত # পর্ব – ১৬ কলমে – অরণ্যানী

# সীমান্ত # পর্ব – ১৬
কলমে – অরণ্যানী

নিঃশব্দে জঙ্গলে এসে প্রবেশ করল মাস্টারদা ও তার দলবল। সকলে যুদ্ধের পোশাকে সজ্জিত ও সশস্ত্র। সাঁতরে নদী পার হওয়ার কারণে পোশাক ভিজে। ওরা নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করে কথা বলছিল।
বিজয় – এখানে তো দেখছি একটা আদিবাসীদের দল।
মাস্টারদা – রাজতন্ত্রের লোকেরা যখন জঙ্গলে ঢোকে, তখন আদিবাসীদের ছদ্মবেশ নেয়। সরকার থেকে খবর আছে ওরা জঙ্গলে ঢুকেছে। কান্ডুয়ার জঙ্গলে দু’জন ধরাও পড়েছে।
অলোক – আমার ভীষণ ভয় করছে মাস্টারদা। এতক্ষণে নদীর ঘাটে কী পাওয়া গেছে – – –
অলোকের কন্ঠস্বর কান্নায় জড়িয়ে গেল।
মাস্টারদা অলোকের পিঠে হাত রেখে বললো – শান্ত হ। আমি দলপতিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি।
জবা – আমরাও কি যাব?
মাস্টারদা – হ্যাঁ, সবাই চল।
মাস্টারদারা টর্চ জ্বেলে আদিবাসী দলটির দিকে এগিয়ে গেল। ওরা তখন খাওয়া দাওয়া করছিল, আর আজকের বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল।
বয়স্কা মহিলা – মেয়েটা কেমন আছে দেখে আসতে হবে।
দলপতি – ছেলেটি বড়ই ঠ্যাঁটা। এতবার জিজ্ঞেস করলাম, কিছুই বললো না।
মাস্টারদাদের ওরা দেখতে পেল। মাস্টারদাকে দেখে দলপতি চিনল।
দলপতি – ওদের গাঁয়ের মেয়ে বোধহয়।
সকলে বলাবলি করতে লাগলো — কী হবে এখন?
মাস্টারদা দলপতির কাছে এগিয়ে গিয়ে পরিচয়পত্রটা বের করে মিনুর ছবি দেখাল।
মাস্টারদা – এই মেয়েটাকে এখানে আজ কোথাও দেখেছ? বা তোমাদের দলের কেউ দেখেছে?
দলপতি ছবিটা দেখেই চমকে উঠল। অনেকেই এগিয়ে এসে ছবি দেখার চেষ্টা করল। দলপতি ও দলের সকলের প্রতিক্রিয়া দেখে মাস্টারদা কিছু বুঝতে পারল।
মাস্টারদা – বলো তাড়াতাড়ি। কোথায় দেখেছ, কখন দেখেছ?
দলপতি কিছু বলার আগেই কয়েকজন লোক একটু দূরে মেঘের ঘরের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো — ওইখানে।
মাস্টারদা দেখল, আদিবাসী দলের থেকে একটু দূরে মাচার উপর একটা ঘর।
মাস্টারদা – ওখানে আছে এখন? ওটা কার ঘর?
দলপতি – হ্যাঁ, ওখানেই আছে। ওটা আমাদের দলের কারুর ঘর নয়। অন্য এক শিকারীর।
অলোক ও অন্যান্যরা দ্রুত ছুটে গেল। মাস্টারদাও গেল ওদের সঙ্গে। আদিবাসীরা ভীত ও কৌতুহলী দৃষ্টিতে দূর থেকে ওদিকে তাকিয়ে রইল।

মাস্টারদারা জঙ্গলে ঢোকার পরও মেঘ কিছু টের পায়নি। সে মিনুর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বসে। হঠাৎই মিনুর চোখের পাতা খুলে গেল। অনেকক্ষণ পর জ্ঞান ফেরায় ও কিছু বুঝতে পারল না। ওর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো – মা – – –
মেঘ চমকে উঠল। প্রথমে কী করবে বুঝতে পারল না। তারপর বললো — জল খাবে?
মিনু — জল।
মেঘ তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল জলের কলসিটার কাছে। কিন্তু গিয়েই ভাবলো, ও তো জল খায় কলসি থেকে সোজাসুজি মুখে ঢেলে। এই অবস্থায় মেয়েটাকে কীভাবে জল খাওয়াবে?
মিনু – জল।
মেঘ কলসিটা কাছে এনে, কলসি থেকে নিজের হাতের আঁচলায় জল ভরে মিনুর মুখের কাছে ধরল।
মেঘ – মুখ খোলো।
মেঘের হাত থেকে দু এক ফোঁটা জল মিনুর ঠোঁটে পড়তেই ওর ঠোঁট ফাঁক হয়ে গেল। মেঘ আঁচলা করে আস্তে আস্তে ওর মুখে জল দিতে লাগলো। মিনু খেল।
মিনু আবছা অন্ধকারে মেঘের দিকে চেয়ে।
মিনু – কে?
মেঘ – কোনো ভয় নেই। আমি তোমাকে কিচ্ছু করব না।
মিনু ক্ষীণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো – আমি কোথায়?
মেঘ – আমার ঘরে। খিদে পেয়েছে? কিছু খাবে? মিনু তার ক্ষতস্থানের ব্যথা টের পেল। ওর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো কাতর ধ্বনি – আহ্ – – –
মেঘ – খুব কষ্ট হচ্ছে?
মিনুর কপালে কাঁপা কাঁপা হাত রাখল।
– সেরে যাবে। ঘুমিয়ে পড়ো।
মেঘ মিনুর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মিনু ক্লান্ত চোখে মেঘের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে চোখ বন্ধ করল। আর ঠিক সেই মুহূর্তে অলোক, বিজয়, দেবু, ও জবা একসঙ্গে মাচার উপর উঠে এলো। মাচা নড়বড় করে উঠল।
মাস্টারদা – একসাথে এতজন নয়। তোরা নেমে আয়। সাবধান, এ্যাটাক করে দিতে পারে।
ততক্ষণে অলোক আর বিজয়ের টর্চের আলো গিয়ে পড়েছে মেঘের ঘরের মধ্যে। মিনুর মুখের উপর অলোকের টর্চের আলো। মেঘ হতভম্বের মতো চুপচাপ ওদের দিকে তাকিয়ে মিনুর পাশে বসে। জবা ও দেবু মাচা ভাঙার ভয়ে নিচে লাফ দিয়েছে।
অলোক চিৎকার করে উঠলো – মিনু – – – –
মিনু চিৎকার, মাচা নড়ে ওঠা, টর্চের আলো ও ক্ষতস্থানের ব্যথায় দুর্বল শরীরে ভয়ার্ত হয়ে পুনরায় সংজ্ঞা হারালো। অলোক এগিয়ে গিয়ে মিনুর গায়ের চাদর সরিয়ে দিয়ে যা দেখলো, তাতে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো। বিজয় দু’হাতে মেঘের কাঁধ দুটো পাকড়ে ধরে ওকে টেনে মাচা থেকে নামিয়ে আনলো। অলোক মিনুকে দেখে ধর্ষিতা মনে করল। গায়ে চাদর চাপা দিয়ে বুকের কাছে কান পেতে হৃদস্পন্দন শোনার চেষ্টা করল। এতো উত্তেজিত অবস্থায় কিছুই শুনতে পেল না। নাকের কাছে হাত নিয়ে নিশ্বাস পরীক্ষা করতে লাগলো কাঁদতে কাঁদতে।
বিজয় মেঘকে নামিয়ে এনেছে।
মাস্টারদা – মিনু কোথায়?
বিজয় – এ ধরে এনে মিনুর ইজ্জত নিয়েছে।
জবা দ্রুত উঠে গেল মাচার উপর মিনুর কাছে।
মাস্টারদা মেঘকে সামনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো – বল তুই কে?
মেঘের মুখে কোনো উত্তর নেই। বিহ্বল দৃষ্টিতে সকলের দিকে চেয়ে আছে। মাস্টারদা সজোরে এক ধাক্কা দিয়ে মেঘকে ছুঁড়ে দিল। একটা গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মেঘের কপাল ফেটে রক্ত বেরিয়ে এলো। সে গাছের তলায় লুটিয়ে পড়ল। আদিবাসীরাও ততক্ষণে সেখানে এসে জড়ো হয়েছে। অলোক ও জবা মিনুকে নিয়ে মাচা থেকে নেমে এসেছে। অলোকের কোলে শুয়ে সংজ্ঞাহীন মিনু। মাস্টারদা এগিয়ে গিয়ে মেঘকে টেনে মাটি থেকে তুলে আবার দাঁড় করিয়ে সপাটে গালে একটা চড় কষিয়ে দিল। সেই চড় খেয়ে মেঘ আবারও মাটিতে বসে পড়ল।
মাস্টারদা – এই তোরা ওর ঘর সার্চ কর। দেখ্ কী কী পাওয়া যায়। বিজয় ও তাপস ঘর সার্চ করতে মাচায় উঠে গেল। মাস্টারদা দলপতির কাছে এগিয়ে গেল – এতো বড় একটা অন্যায় হলো, আর তোমরা তার কিছু বিচার করোনি?
বয়স্কা মহিলাটি এগিয়ে এলো মাস্টারদার দিকে।
– ও যখন মেয়েটাকে নিয়ে এলো, তখন মেয়েটার সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। অনেক রকম ওষুধ পালা দিয়ে আমরা আর ওই ছেলেটা ওকে বাঁচিয়েছি। ওই ছেলেটার খুব মায়া পড়ে গেছে মেয়েটার উপর। ও সারাক্ষণ মেয়েটার পাশে বসে সেবা করে গেছে। আমরা যখন জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে, কোনো উত্তর না দিয়ে মেয়েটাকে নিজের ঘরে নিয়ে চলে গেল। দেখে তো মনে হলো মেয়েটার বুকে তীর লেগেছিল। ও ইচ্ছা করে নিশ্চয় মারেনি। তাহলে এতো দয়া মায়া করে বাঁচানোর চেষ্টা করত না। জঙ্গলে ফেলে তো পালিয়েও যেতে পারত। তাহলে তো কেউ জানতই না। হতেও তো পারে, যে আর কেউ মেয়েটাকে মেরে দিয়ে পালিয়েছে। ও সারাক্ষণই এতো ঘাবড়ে আছে যে কিছু বলতেই পারছে না।

বিজয় মেঘের ঘর থেকে ওর ঝুলিটা নিয়ে এসেছে। তার মধ্যে থেকে সেই মেলা থেকে কেনা বাক্সটা বের করে সবাই পরীক্ষা করতে লাগলো। হঠাৎই মেঘ এক লাফে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজয়ের কাছ থেকে বাক্সটা কেড়ে নিল। সাথে সাথে মাস্টারদা লাফিয়ে পড়ল মেঘের উপর। দেবু, শ্যামল, তাপস, সবাই মিলে মেঘকে ধরল। মেঘও সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ওদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করল। ফলে ওদের হাতে আরো কিছু মার খেলো। তাই দেখে আদিবাসী মহিলা কয়েকজন এগিয়ে এলো।
বয়স্কা মহিলা – কী হয়েছে? কী আছে ওর বাক্সে? ওকে তোমরা অত মারছো কেন? ছেলেটা কোনো দোষ করেছে কিনা না জেনেই তোমরা ওকে মারছো?
মাস্টারদা মেঘের বাক্স খুলে তা থেকে সব জিনিস বের করে পরীক্ষা করতে লাগলো। মেঘ সেইদিকে হিংস্র দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। মাস্টারদা অবাক হয়ে দেখল, বাক্সে রঙিন কাঁচের চুড়ি, ফিতে, টিপ, এইসব মেয়েদের সাজের জিনিস। মাস্টারদার চোখ পড়ল মেঘের দিকে। মেঘের দু’চোখ তখন জলে ভরে উঠেছে। জল ভরা হিংস্র দৃষ্টিতে সে মাস্টারদার দিকে চেয়ে। মাস্টারদা একটুক্ষণ বিস্মিত চোখে মেঘকে দেখতে থাকল। দৃষ্টি পড়ল মেঘের কাটা কপাল থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্তের দিকে। মাস্টারদা ধীর পায়ে এগিয়ে গেল মেঘের দিকে। মেঘকে তখন সবাই দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে।
মাস্টারদা – কী হয়েছিল আমায় বল। বাক্সটা তুলে ধরে মেঘকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল – জিনিসগুলো কার? মাস্টারদার কন্ঠস্বর অনেক শান্ত ও নরম।
মেঘ গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিল – আমার। আমি কিনেছি।
মাস্টারদা – কার জন্য?
মেঘ মিনুর দিকে তাকিয়ে বললো – ওর জন্য।
সকলে বিস্ময়ে হতবাক! বিশেষ করে অলোক।
মাস্টারদা – ওর এমন হলো কী করে?
মেঘ – আমি বুঝতে না পেরে হরিণ মনে করে তীর মেরেছিলাম। ও ঝোপের মধ্যে ছিল। ওকে দেখতে পাইনি।
মাস্টারদা – তুমি ওকে চেনো?
মেঘ – হ্যাঁ।
এবার মাস্টারদাও খুব অবাক হলো।
মাস্টারদা – ওর সঙ্গে তোমার দেখা হলো কোথায়?
মেঘ – এই জঙ্গল ছাড়িয়ে নদীর ধারে।
মাস্টারদা – কবে?
মেঘ – আজকে।
মাস্টারদা অবাক হয়ে — আজকেই প্রথম দেখলে ওকে?
মেঘ – হ্যাঁ।
সবাই অবাক হয়ে কথাগুলো শুনছিল।
মাস্টারদা – আজকেই এইসব জিনিসগুলো কিনেছ ওর জন্য?
মেঘ – না, অনেক দিন আগে।
মাস্টারদা আরো অবাক হলো মনে মনে। দেখা হলো আজ – – – আর কিনেছে অনেক দিন আগে! মাস্টারদা বুদ্ধিমান মানুষ। কিছু বুঝল।

মাস্টারদা – যেগুলো ওর বুকে লাগানো আছে ওগুলো ওষুধ?
মেঘ – হ্যাঁ। রোজ লাগালে সেরে যাবে। তারপর আমি ওকে বাড়ি দিয়ে আসবো।
মাস্টারদা – সে কী! আমরা ওকে বাড়ি নিয়ে যাব না? মাস্টারদার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।
মেঘ – না, এই ওষুধগুলো না লাগালে সারবে না। কাটা জায়গা বিষিয়ে যেতে পারে। আর এই ওষুধগুলো জঙ্গলে ছাড়া পাওয়া যায় না।
মাস্টারদা – তুমি কি এই জঙ্গলেই একা থাকো?
মেঘ – হ্যাঁ।
মাস্টারদা – কেন? একা কেন? কেউ নেই? কোনো দলে কেন থাকো না?
মেঘ – দল ছেড়ে দিয়েছি।
ওদিকে কয়েকজন খেয়াঘাট থেকে নৌকো ডেকে আনতে গেছে মিনুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
মেঘের কপাল চুঁইয়ে তখনো রক্ত পড়ছে।
মাস্টারদা – তোমার কপালে ব্যান্ডেজ দিতে হবে। দেখো, আমাকে মারবে নাতো ব্যান্ডেজ বাঁধতে গেলে?
মেঘ – না।
মাস্টারদা – তবে বসো, ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিই। মেঘকে এতক্ষণ বেঁধে রাখা হয়েছিল গাছের সঙ্গে। বাঁধন খুলে দিতে মেঘ বাধ্য ছেলের মতো গাছে ঠ্যাঁস দিয়ে ক্লান্ত শরীরে বসে পড়ল।
মেঘ – আমার বাক্সটা দাও। মাস্টারদা মেঘের ঝুলি ও বাক্স ফেরত দিল। মেঘ বাক্সটা ঝুলিতে ঢুকিয়ে নিল। মাস্টারদা মেঘের কপালের রক্ত মুছিয়ে ওষুধ লাগিয়ে দিল।

নৌকো এসে ঘাটে লাগলো। জবা তাড়া দিয়ে বললো – নৌকো এসে গেছে। তোমরা কী করছ?
মেঘ – ওকে নিয়ে গেলে যদি মরে যায়? গাঁয়ে ওষুধ কোথায় পাবে?
মাস্টারদা – তুমি দিয়ে দাও আমাদের সঙ্গে।
তাপস – ছেলেটাকে মাস্টারদা ছেড়ে দেবে? ও যে এত বড়ো অন্যায় করল?
মাস্টারদা – ইচ্ছা করে তো আর করেনি। অসাবধানে ঘটে গেছে। মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো – শোনো, আর কখনও কিন্তু না দেখে শুনে কাউকে তীর মেরো না। মরে যেতে পারে।
মেঘ – আমি মানুষ মারি না।
মেঘের মনে পড়ল জঙ্গলের সীমান্তে লুটিয়ে পড়া রক্তাক্ত সেনাগুলিকে।
ওরা সকলে নৌকা নিয়ে গাঁয়ে ফেরার তোড়জোড় শুরু করল। মেঘ তাড়াতাড়ি করে কিছু ওষুধ পাতা ও শেকড় তুলে এনে মাস্টারদার হাতে দিল। আদিবাসী দলের অনেকেই ওদের সঙ্গে নদীর পাড় পর্যন্ত এলো ওদের এগিয়ে দিতে। মিনুকে ধরাধরি করে নৌকায় তোলা হলো। সবাই নৌকায় উঠে গিয়ে আদিবাসীদের হাত নেড়ে বিদায় জানালো। আদিবাসীরাও বিদায় জানিয়ে নিজেদের বাসস্থানের দিকে ফিরে চললো। শুধু মেঘ চুপচাপ করুণ চোখে তাকিয়ে রইল নৌকার দিকে। নৌকা ওপারের উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলো। মেঘ ওখানেই উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এ দৃশ্য মাস্টারদার চোখ এড়ালো না।

বাড়িতে অসুস্থ মিনু :-
পরদিন সকালে চোখ মেললো মিনু। ওর চারপাশে বাবা, মা, দাদা, দিদি বসে। আর ওর গায়ের কাছে বসে হাতের মধ্যে থাবা মারছে লুল্লু। লুল্লু একবার ডেকে উঠল – মিঁয়াও।
মিনু তাকাল লুল্লুর দিকে।
মিনুর মা ধরা গলায় বললো – জ্ঞান ফিরেছে। মিনু, কেমন আছিস?
মিনু – লুল্লু – – – আহ্ – – – যন্ত্রণায় কাতরতা প্রকাশ পেল।
মা – খুব ব্যথা করছে? কষ্ট হচ্ছে?
মিনু – আমার লাগছে বুকে। লুল্লু খেয়েছে?
অলোক – ওকে জল দাও। আর একটু গরম দুধ খাইয়ে দাও।
মিনু – আমার কী হয়েছে? লাগছে খুব। লুল্লু – – –
লুল্লু তার নাম মিনুর মুখে শুনে মিনুর গা ঘেঁষে এসে ডাকলো – মিঁয়াও।
মিনু – ও খাবে।
অলোক – যা না ঝিনুক, বিড়ালটাকে খেতে দে।
ঝিনুক – আমরা দিলে ও খাচ্ছে না।
মিনুর মা উঠে গেল দুধ গরম করে আনতে। ঝিনুক লুল্লুর খাবার আনতে গেল। মিনুর বাবা চামচ করে মিনুর মুখে জল দিতে লাগলো। অলোক চুপচাপ উদ্বিগ্ন ভাবে বসে। উঠোন পার হয়ে বাড়িতে ঢুকল মাস্টারদা, বিজয় ও কবিতা।
হীরন – এইমাত্র জ্ঞান ফিরেছে। ওর মা গরম দুধ নিয়ে আসছে।
কবিতা এসে বসল মিনুর পাশে। মিনুর হাতে আস্তে করে হাত বুলিয়ে দিল।
কবিতা – মিনু – – –
মিনু তাকাল কবিতার দিকে। কবিতার চোখ ছলছল।
মিনু – লুল্লু খাবে।
কবিতা – আমি আনছি দুধ-ভাত।
ততক্ষণে ঝিনুক লুল্লুর ডিসে করে দুধ-ভাত এনেছে। মিনুর মা গরম দুধ নিয়ে এসেছে। কবিতা ঝিনুকের হাত থেকে লুল্লুর ডিসটা নিয়ে লুল্লুর দিকে এগিয়ে দিল। লুল্লু মিনুর দিকে চেয়ে। মিনু আস্তে করে হাত উঠিয়ে লুল্লুর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বললো, “খা।” লুল্লু খেতে শুরু করল। মিনুর মা চামচ করে ধীরে ধীরে মিনুকে দুধ খাওয়াতে লাগলো। মিনু খেতে খেতে লুল্লুর খাওয়া দেখতে লাগলো।
মাস্টারদা – আর রক্ত বের হচ্ছে নাতো?
অলোক – না।
(ক্রমশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *