হোকপ্রতিবাদ ✒️✒️ #মৌসুমি

হোকপ্রতিবাদ

#মৌসুমি

মূর্তিতে নাই,

“হ্যা গো, তোমাকে কি এবছর যেতেই হবে, তোমার বাবার বাড়ি? মহাদেবের কথা শুনে গৌরী ভুরু কুঁচকে বলল,”প্রতি বছর তুমি এমন করবে, সারাবছর তো তোমার সংসারের জন্য খাটি,তা বলি আমার কি চারটে দিনও ছুটি নেই।।গৌরী ভাতের হাঁড়ি নামাতে নামাতে বলল কথাগুলো।। “তার জন্য নয় গৌরী, আমি ভাবছি আমার কমলা আর সরস্বতীর কথা।। ওরা বড় হয়েছে,।। চারপাশের অবস্থা যা খারাপ, মেয়েরা ছোট হোক অথবা বড় বাবা মায়ের চিন্তায় ঘুম চলে গেছে।।আর জি কর,জয়নগরে যা হলো তারপর মেয়েদের ছাড়তে ইচ্ছে করছে না” । গৌরী বলল,”অত ভেবে কাজ নেই,যা হওয়ার হবে।। হায়না দের ভয়ে মেয়েদের ঘরে নিয়ে বসে থাকবো।ভয় কে ভয় পেলে,ভয় আরও চেপে বসে।। যাক গে খেতে বসো।।।কাল ওদের নিয়ে ভোরে ভোরে বেরিয়ে যাবো।।।

মহাদেব বাছার পেশায় কামার।। তাঁর স্ত্রী গৌরী তাঁকে সাহায্য করে কাজে।। তাঁদের দুই ছেলে।। কার্তিক আর বাপ্পা।।দুই মেয়ে, কমলা আর সরস্বতী।। গৌরী ভাত বেড়ে সবাই কে ডাকছে হঠাৎ শোনে ভাই বোনে ঝগড়া লেগেছে।।একতলা বাড়ি দুটো ঘর।। পাশের ঘরে গিয়ে দেখে ভাই বোনের ঝগড়া হচ্ছে।। গৌরী রেগে বলল, ঝগড়া করছিস কেন? অমনি বড় ছেলে কার্তিক এগিয়ে এসে বলল,দেখ না মা, বোনেদের বলছি মামা বাড়ি গিয়ে আমাদের না বলে কোথাও যাবি না, সরস্বতী অমনি রাগ দেখাচ্ছে”।। গৌরী সব শুনে বলল, আচ্ছা, ওদের টা ওরা বুঝবে এখন খেয়ে ঘুমিয়ে পর।।

বাপের বাড়ি যাওয়ার পর গৌরী মায়ের হাতের রান্না খেয়ে বিশ্রাম নিলো কিছুক্ষণ।। ছোট বোন এসে বলল,”দিদি, সন্ধ্যা বেলা পাড়ার পুজো মন্ডপে যাবি।।” গৌরী বলল, যাবো না কেন, ছোট থেকে পাড়ার পুজো দেখতে খুব ভালো লাগে।। সন্ধ্যা বেলা চার ছেলে মেয়ে নিয়ে ভাই বোনের সাথে গৌরী পাড়ার মন্ডপে গিয়ে বসলো।। গৌরী কে দেখে পাড়ার মেয়ে বৌয়েরা এসে গল্প জুরলো।। সকলের সাথে কথা বলতে বলতে আর পুজো দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেল।। হঠাৎ লক্ষ্য করলো কমলা আর সরস্বতী দুজন নেই।। সারারাত চারিদিকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাওয়া গেল না তাদের।।

গৌরী তো অঝোরে কাঁদছে, এবার কী বলবে সে মহাদেব কে।। বারেবারে বারণ করেছিল,সে শোনেনি।। খুঁজতে খুঁজতে ভোর হয়ে গেল।। পুজোর মেলা বসেছিল যেখানে তার পাশে একটা ঝোপ আছে।। পাড়ার লোকে সেই ঝোপে ঢুকে চিৎকার করে উঠলো,খুন!খুন! পাড়ার তিনটে মাতাল সেন্টু,ভোলা আর নান্টু খুন হয়েছে।। কিন্তু কমলা আর সরস্বতী কোথায় গেল।। গৌরী ছুট্টে গেল মা দুর্গার কাছে,মা গো আমার মেয়ে দুটো কে ফিরিয়ে দাও।।

পুলিশ এলো,তিনটে দেহর পাশে দুটো ধারালো ছুরি।।কে খুন করলো ওদের।। কোথাও কোন প্রমাণ নেই।।
কার্তিক আর বাপ্পা বোনেদের খুঁজতে খুঁজতে মন্ডপে এসে বসলো।। কার্তিকের চোখ পরলো লক্ষ্মীর মূর্তির পেছনে লাল জামা।। সকলেই যখন ব্যস্ত,তিনটে খুন নিয়ে কার্তিক মূর্তির পেছনে গিয়ে দেখে কমলা আর সরস্বতীর পেছনে ওরই ছোট বোন সরস্বতী।। ওদের সেখান থেকে তাড়াতাড়ি নামিয়ে ছুটে চলে এলো মামাবাড়ি।। গৌরী ওদের দেখে অঝোরে কেঁদে উঠলো।। কোথায় গেছিলি তোরা মা? কমলা হেসে বলল,”তিনটে অসুর মেরে এলাম মা।।” গৌরী শুনে অবাক,কি দিয়ে?‌ কমলা হেসে বলল,কাল রাতে বাবা যে দুটো ছুরি ধার দিয়ে রেখেছিল আমি আর বোন লুকিয়ে লুকিয়ে ব্যাগে ভরে নিয়েছিলাম “।। গৌরী চোখের জল মুছে কার্তিক কে বলল,দেখ বাবু !তোর বাবা কে বলেছিলাম ওদের টা ওরা বুঝে নেবে”।।

ওদিকে পুলিশ খুনিদের খুঁজতে খুঁজতে পাড়ার পুজো মন্ডপে এসে দেখে, লক্ষ্মী সরস্বতীর মূর্তির হাতে রক্ত লেগে।।

#মৌসুমি

#হোকপ্রতিবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *