ছোটো গল্প “বিসর্জন” কলমে –অনীতা প্রামানিক

ছোটো গল্প
“বিসর্জন”

কলমে –অনীতা প্রামানিক

 

আমার ছোট্টো নাতি পরান, পাঁচ বছর বয়সে তার মাকে নদীর জলে ভেসে যেতে দেখেছিল। তখন থেকেই পরান খুব চুপচাপ কিজেনো খুঁজে বেড়াতো বাড়িময়,
পরান কখনো শহরে আসেনি। তার এখন বয়স সাত বছর। আমার পেশা ঢাক বাজানো নয়, আমি চাষি, দুটো বাড়তি পয়সার জন্য ঢাক বাজায়। মা মরা ছেলেটারে আনন্দ দেওয়ার জন্য,আমার ছেলে দ্বিতীয় বিবাহ করেনি। এখন বাইরে কাজ করে,তাই আমার নাতি আমার সঙ্গী। তার খুব ইচ্ছে শহরের প্যান্ডেলে বসে হাজারো মানুষের ভিড়ে সে কাঁসর বাজাবে কোমোর দুলিয়ে দুলিয়ে, শহরের জাঁকজমক তাকে মুগ্ধ করেছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আলোর রোশনাই এর দিকে। কত শত মানুষের ভিড়ে সে ভুলে গেছে আত্তা মায়ের কথা (ঠাকুরমা)। সে তার আত্তামায়ের সোহাগ আদরে অতীত ভুলে গেছে। এখানে এসে মন্ডা মিঠাই ভোগের কতকিছু দুবেলা পেটপুরে খাচ্ছে এতেই সে খুশি। এখানকার কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা ছোট্টো পরানের কাঁসর বাজানো দেখে কিছু টাকা পুরষ্কার হিসাবে দিয়েছেন। যা সে পড়াশোনার কাজে লাগাতে পারবে। কালকে বিজয়া দশমী সকালে সিঁদুর খেলেছে সকল মা , বোনেদের সঙ্গে পরান। এক জামা গেঞ্জিতেই পুজো কাটিয়ে দিল সে।এখানে এসে আমি সহ পরান নতুন জামা প্যান্ট পেয়েছি। তার সেদিকে লক্ষ্য নেই, ঘট বিসর্জন দিতে ঘাটের ধারে দাঁড়িয়ে তার অদূরে লক্ষ্য, একটি জাহাজের দিকে। জাহাজ দেখে সে চিৎকার করে বলে উঠলো “দেখ দেখ দাদু কত্তো বড়ো জাহাজ!” তার বিস্ময়কর চোখে অনাবিল আনন্দ ছবিতে দেখেছিল জাহাজ আজ সচক্ষে দেখলো। এই অবধি ঠিক ছিল। প্রতিমা বিসর্জন দেখে দীর্ঘদিন পর তার চেতনায় জেগে উঠেছে দুবছর আগের কথা, প্রতিমা বিসর্জনের সময় সে দেখতে পায় তার মাকে আস্তে আস্তে তলিয়ে যেতে! হঠাৎ তার আর্তচিৎকারে স্তব্ধতা ভাঙে, সশব্দে সব আলো নিভে যায়।আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনি মা ——ফিরে আয় মা আমারে নিয়ে চল তোর সঙ্গে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *