* বৈদেহী * ✒️✒️ গীতালি

* বৈদেহী *

গীতালি

প্রজানুরঞ্জনের জন‍্য?
শুধু কি তাই?
আর কোনোই কি কারণ নেই?
আমি জনক দুহিতা….
জীবনের জটিলতায় আমি ছিন্নবিচ্ছিন্ন!

যে বৈবাহিক সম্পর্কে আমি আবদ্ধ,
সেই সম্পর্কের জোয়ার – ভাঁটায়
আমার নৌকাখানি টলোমলো আজ।
কোন কূলে যে ভিড়বে
আমার এই ক্ষুদ্র তরীটি,
তার হদিশ পাইনে।

কতকাল কেটে গেল বনবাসী হয়ে…
রাজদুহিতার বিলাস – ব‍্যসন বিরহিত,
পর্ণকুটীরে অতিবাহিত জীবন,
মনের কোনো কোণে ছিল না
এতটুকু দ্বিধা!
স্বয়ং স্বামী ছিলেন আমার সাথে।
সবুজের মাঝে বনচারণে অভ‍্যস্ত আমি
রাজবিলাস বিস্মৃত হয়েছিলাম।
সুখে দুখে আনন্দে বিষাদে
দিন কাটত।
লক্ষ্মণ ভাই আমার রক্ষক হয়ে
সদাসতর্ক ছিলেন।
স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্যে তিনি
তার কর্মে অটল ছিলেন।
হয়তো তার মনের কোথাও ছিল
নবোঢ়া বধূটির জন‍্য আকুলতা।
কোনোদিন স্পষ্ট দেখিনি,
কখনও কখনও
তাকে দেখেছি বাদল মেঘের দিকে
আনমনা হয়ে চেয়ে থাকতে।
কিন্তু তাকে প্রশ্ন করে
বিড়ম্বনায় ফেলতে চাইনি।

স্বামী সাথে
বনচারিনী হয়ে
রঙিন জীবন আমার বহমান ছিল।
কেমন করে যেন কেটে যেত আমার
দিন-রাত্রি!
সে ছিল এক অপরূপ মোহময় জীবন!
ধীরে ধীরে ভালোবেসেছিলাম
বনবাসের দিনগুলোকে।
মনের অজান্তে তুচ্ছ ক্ষুদ্র ইচ্ছে-পাখি
ডানা মেলেছিল।

তারপর?…..
সর্বনাশা বিপদের হাতছানিতে
ডুবে গিয়েছিলাম সেদিন।
বিগত জনমের নির্ধারিত ভাগ‍্যচক্রে
লঙ্কাপুরীর বন্দিনী হয়ে,
রাবণের মৃত্যুরূপা অভিশপ্ত জীবনের পথের
যাত্রী হতে হল এই সীতাকে।
জনকনন্দিনী অনার্যকুলের বন্দিনী!
জীবনের এই অধ‍্যায়টি আমার
কলঙ্ক বিহীন ছিল।
কোনো রক্ষিনী আমার অনাদর করেনি,
তারা আমার চারিদিকে
এক নিরাপত্তার বলয় এঁকে দিয়েছিল।

আমি মনেপ্রাণে কলঙ্কবিহীন এক নারী।
সতীত্বের অহংকার আজও আমার গর্ব।
রামচন্দ্রের স্ত্রী হয়ে এখনও আমি পতিব্রতা!
কিন্তু অযোধ‍্যার রাজদরবারে
আমার কলঙ্কমোচনের ডাক পড়েছে?
এ কী অসংগত দাবী মানুষের?
আমি নারী,
আমি নিজেকে
কেমন করে এই দীনতার মাঝে আনব?
জনকদুহিতা আমি, ধরিত্রীর কোলে জন্ম।
নারীত্বের অহংকার আমার অধিকার!
তাকে আমি খর্ব হতে দেব না।

কিন্তু এ দাবী কী শুধুমাত্র প্রজাদের?
প্রজানুরঞ্জনের কারণেই
আমার অগ্নিপরীক্ষার আয়োজন?
না, রাজা, না।
এতদিন লঙ্কাপুরীতে আমার বন্দীজীবনের জন‍্য
তোমার মনে ক্ষণিক অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে!
পুরুষের অধিকারে নারীর লজ্জাকে
তুমি হরণ করেছ রামচন্দ্র!
আমি এই পরীক্ষার বিরোধী।
আমি জানকী, ভূমিপুত্রী।
আমাকে আমার পথে ছেড়ে দাও…
বেঁধে রেখো না কোনো শর্তের ডোরে।
নিঃশর্ত হৃদয়ে যেদিন আমাকে আকাঙ্ক্ষা করবে,
সেইদিন তুমি দেখা পাবে সীতার।
আজ নয়, অন‍্য কোনো দিন।
************************* গীতালি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *