সম্পাদকীয় কলামে গীতশ্রী সিনহা
সম্পাদকীয়
ট্রাম মানেই শহরবাসীর কাছে এক গভীর নস্টালজিয়া। আমাদের সকলের চলার পথের বিশ্বস্ত সঙ্গী। শহর কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা। ট্রাম পরিষেবা প্রথম চালু হয় ঘোড়ার সাহায্যে। পরবর্তীকালে ১৯০২ সালে বিদ্যুতের ব্যবহার করা হয়।
যাত্রা পথের দৈর্ঘ্য ছিল ৩.৯ কিলোমিটার, কিন্তু সেই সময় যাত্রীর অভাবে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি নামে লন্ডন ভিত্তিক কোম্পানি ট্রাম পরিষেবা কলকাতায় শুরু করে। একসময় ১৭৭টি ট্রাম ও ১০০০ টি ঘোড়া ছিল, পরে স্টিম ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয় ট্রাম পরিষেবার জন্য। সেই সময় ট্রাম কোম্পানির ১৯ মাইল ট্রাম লাইন ছিল।
বৈদ্যুতিকরণ শুরু হয় ১৯০২ সালে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আরও অনেক কিছু জানতে পারি —-
কলকাতায় ৭টি ট্রাম ডিপো রয়েছে — বেলগাছিয়া, রাজাবাজার, পার্ক স্ট্রিট, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ, কালিঘাট ও খিদিরপুর আর টার্মিনাল রয়েছে ৯টি —–
শ্যামবাজার,গালিফ স্ট্রিট, বিধাননগর, বালিগঞ্জ,এসপ্ল্যানেড, বিবাদি বাগ ও হাওড়া ব্রিজ।
কলকাতায় ক্রমবর্ধমান ফ্রাইওভার ও রাস্তা উন্নয়নের প্রকল্পে বেশ কিছু ট্রাম রুট বন্ধ হতে থাকে ! ২৫ টি ট্রাম রুটের মধ্যে ধীরে ধীরে মাত্র তিনটি রুটে পরিষেবা সীমাবদ্ধ হয়।
পরিবহন দফতর সূত্র অনুযায়ী, কাঠামোগত সমস্যা এবং মেট্রোর কাজের জন্য ট্রাম চলাচল ব্যহত হয়, এছাড়াও, উল্লেখযোগ্য ঘটনা ২০২০ সালের ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে আক্রান্ত হয়ে এসপ্ল্যানেড -খিদিরপুর রুট বন্ধ রয়েছিল।
পূর্বের তুলনায় জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায় শহর কলকাতায় —– এই সমস্ত একাধিক কারণে ঐতিহ্যবাহী সংযোগ ট্রাম পরিষেবা শুধু মাত্র ময়দান এবং এসপ্ল্যানেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী রুটটি পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য চালু থাকবে।
এক সময় কলকাতার বুকে কান পাতলে শোনা যেত চাকার শব্দ, ঘন্টির ঠংঠং আওয়াজ ! আমাদের সকলের অনেক স্মৃতিপথ মনের চলার পথের আলো হয়ে বেঁচে থাকবে চিরকাল। কবিদের কলমের জোরদার সঙ্গী ছিল এই ট্রাম !
আসুন না আমরা বেঁধে রাখি আমাদের কলমের নতুন নতুন সৃষ্টির দুয়ারে দলিলপত্র হিসেবে, স্বীকৃত পাক ট্রাম ইতিহাস।
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ হাতে ডাব নিয়ে রাসবিহারী এ্যাভেনিউয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রামটি অনবরত ঘন্টা বাজাচ্ছিল। কবি কেন শুনতে পাননি, সেটা এক রহস্য। ট্রামের সামনের ক্যাচারে তাঁর দেহ ঢুকে যায়। ১৪ অক্টোবর দুর্ঘটনা ঘটে। ২২ অক্টোবর কবি হাসপাতালে মারা যান। তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন বলে অনেকে সন্দেহ করেন। কারণ ট্রামের মতো মন্থরগতি যানে এমন দুর্ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক।
ট্রামের ইতিহাসের খাতায় এটাও সযত্নে সংরক্ষণ থাকবে।
শুভকামনা শুভেচ্ছা রইল পাঠক সাথী দের জন্য, সাথে রইল কলম সাথীদের প্রতিও।
নমস্কার —- গীতশ্রী সিনহা।
খুব ভালো সম্পাদকীয়।
ভালো হোক বা মন্দ
কাজে লাগুক বা না লাগুক
হারানোর বেদনা থাকেই
অসাধারণ সম্পাদকীয়, ঋদ্ধ হলাম।