ট্রমা // কলমে কৃষ্ণা সেন।

ট্রমা //
কলমে কৃষ্ণা সেন।

দিনের আলো যখন অপসৃমান ঠিক তখন অন্ধকারে জেগে ওঠে অতি লৌকিক, আদি ভৌতিক, অতি দৈবিক, চেতনা গুলো ।
ষড়ঋপু প্রবল হয়ে ওঠে ভয়ংকর ভাবে জেগে ওঠে আর এক চেতনা, যার নাম ভয়।
ভয় নামক” ট্রমা।”
শরীরের সমস্ত শক্তি এক লহমায় গ্রাস করে। নিজের ইচ্ছা শক্তি কাজ করে না। আদি ভৌতিক বা অতি দৈবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণে তখন তুমি।

ঈশ্বরকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি । বাতাসের মতো তার অনুভব ।তাকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাই না। পাশাপাশি অতি দৈবিক বা আদি ভৌতিক ধারণা গুলিকেও অস্বীকার করতে পারি না। অবশ্য প্রমাণ সাপেক্ষ।

গতকাল রাতে একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখছি।
জানি বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত । তবুও লিখছি । নিজের মাথাকে হালকা করার জন্য।।

আমি যেখানে বাস করি সেটা পঞ্চায়েত এলাকা অতএব তথাকথিত গ্রাম। বর্ধিষ্ণু গ্রাম বলা যেতে পারে ।
বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ অবসরে এখানে এসে বাসস্থান গড়েছেন। বহু পুরাতন কিছু বাড়িও আছে এখানে। আমি অবশ্য চুঁচুড়াতেই জন্মেছি।

এ শহরে ফ্ল্যাট কালচার অনেকদিন আগে থেকেই বিদ্যমান। তবে আমার এলাকা নিস্তব্ধ নিশ্চুপ। ভোরে পাখির ডাকে আর ফুলের মিষ্টি গন্ধে দুটো চোখের পাতা খুলে যায়। চারিদিকে বড় বড় গাছ-গাছালি। স্টেশন সংলগ্ন।
তাই আপ ডাউন ট্রেনে চলাচলের শব্দ দূর দুরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের এলাকায়
প্রত্যেকটা পরিবারে দু চারজনের বেশি কেউ বাস করে না।
জায়গাটা যথেষ্ট নিরিবিলি।

অনেকেই বাড়িতে বিড়াল কুকুর পোষে আমারও আদরের কুট্টুস আছে। হয়ত আবেগের আতিশয্য আমায় দিয়ে একটু বেশি লিখে নিচ্ছে। অবশ্য আমার লোকেশন টা না বোঝাতে পারলে গতরাতে ঘটনা টা বোঝাতে পারবো না।

এতদিন যাবত তীব্র জ্বালাপোড়া গরমে অতিষ্ঠ সবাই । রাতটা অসহ্য মনে হয়। ঘুম আসে না ।
সারাদিন নিচের তলায় থাকলেও রাতে উপরের ঘরেতেই ঘুমাই।

যথারীতি কাল তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
শুধু জেগে থাকা নয়, মোবাইলের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারি না। রাত কাটে আধ ঘুমে। গতকাল প্রায় দুটো নাগাদ অদ্ভুত একটা হাওয়া বইতে শুরু করলো বেশ সশব্দে ।ফোন করে ছেলেকে বললাম ছাদের জানালা বন্ধ করতে। একটা ঝড়ো হাওয়া সারা বাড়ির চারপাশে কেমন যেন ঘুরপাক খাচ্ছে।
নিম্নচাপের সতর্কতা ছিল কিন্তু বাতাসটা কেমন যেন অদ্ভুত রকম লাগছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরটা ঠান্ডা হয়ে গেল। চাঁপা ফুল গাছের পাতাগুলো সশব্দে নড়ছে, কুন্দ ফুলের গাছটা তিন তলা ছুঁই ছুঁই ।
বুঝতে পারলাম গাছের কিছু প্রশাখা ভেঙে পড়ল। তারপর যেমন আচমকা বাতাস বইল তেমনি আচমকা থেমেও গেল।

কি জানি কেন কিছুতেই যেন ঘুম আসছে না।
একটা মানসিক অস্থিরতা আমাকে পেয়ে বসেছে। মনটা অন্যমনস্ক করার জন্য এত রাতেও মোবাইলটা টানলাম কিছুক্ষণের স্তব্ধতা——-
হঠাৎ বাড়ির কোনাকুনি জায়গা থেকে কয়েকটা শেয়াল সমস্বরে ডাকতে লাগলো ।
হঠাৎ বুকের ভেতর কাপুনি শুরু হল ।কি রকম একটা ভয় অস্থিরতা আমাকে গ্রাস করছে। একটানা একসাথে এত শিয়াল ডাকছে যেন তীব্র আর্তনাদ।
দুটো কান চাপা দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করলাম শব্দ কে প্রতিহত করার।
শুধু ভাবছিলাম এতগুলো শেয়াল আসবে কোথা থেকে?

শিয়ালের ডাকটা তীব্র আর্তনাদের মত সমস্ত পাড়াটাকে ঘিরে ফেলল। যেন শত সহস্র অতৃপ্ত আত্মার হাহাকার।
মনকে অনেক বোঝালাম এ আমার মনের ভুল। কিন্তু না হাত-পা আমার ঠান্ডা বিছানা থেকে জলের বোতল খুলে খাবার শক্তি নেই।

মনে মনে ভাবলাম এ নিশ্চয়ই একটা ট্রমা কাজ করছে গত একমাস যাবত অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ওই একই বিষয়ে ভাবছি। তাই হয়তো আমার এই রকম মনে হচ্ছে।

কিন্তু বিশ্বাস করো বা না কর সত্যি করে বলতে পারি শিয়ালের ডাক হতেই পারে কিন্তু আমি শুনেছি শত সহস্র নারী কন্ঠের আর্তনাদ আর বাতাসে চাপা দীর্ঘশ্বাস।
আমি জানিনা এটাকে কি বলবো?
ভোরের আলো ফুটে উঠতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।
এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস শরীরটাকে কিছুটা ধাতস্থ করল । সূর্যোদয় মনে কিছুটা প্রশান্তি এনে দিল।

21,9,24

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *