পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান *** স্বপ্না চ্যাটার্জী ***
পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান
*********
স্বপ্না চ্যাটার্জী
*********
বকুল ও অনিরুদ্ধ, জীবন খেয়ায় পাল তুলে দিয়ে, সুখ-দুঃখ, হাসি কান্না, পাওয়া না পাওয়ার, দোলায় দুলতে দুলতে, আজ জীবনের অপরাহ্ণে এসে পৌঁছেছে ।তাদের মধ্যে ভালোবাসার এতটাই বন্ধন, যা তাদের আজও এক সুতোয় গেঁথে রেখেছে। কিন্তু ভালোবাসা থাকবে অথচ মান, অভিমান থাকবে না, তা কি হয়? তাই জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, সমান্তরাল ভাবে মান অভিমানের পাল্লাও ভারী হতে শুরু করেছে। আমরা, আমাদের জীবনের কতটা মূল্যবান বেলা, বইয়ে দি, এই মান অভিমান সামলাতে সামলাতে। কিন্তু এ কোন অভিমান! যা দুজনের জীবনকেই ছিন্নভিন্ন করে দিল, আসুন দেখে নেওয়া যাক।
জানো অনি, আজও তোমায় ঘুমালে, ঠিক নিষ্পাপ শিশুর মতই ইনোসেন্ট দেখায় ।তুমি জানোই না, তুমি ঘুমিয়ে আছো, আর আমি তোমার কাছে বসে , শুধু অবাক নয়নে, চেয়ে চেয়ে তোমায় দেখে চলেছি। জানো অণি, আজ ,তোমার দিকে চেয়ে সেদিনের ফেলে আসা, খুনসুটির কথাগুলো খুব মনে পড়ছে। মনে আছে অণি, তুমি সব সময় আমায় চক্ষে হারাতে, যখন অভিমানে পাস ফিরতাম, তোমার সঙ্গে কথা বলতাম না, তখন তুমি আমার মুখটা ধরে গাইতে,” অলির কথা শুনে বকুল হাসে, কই আমার কথা শুনে, তেমন করে তুমি হাসো না তো? আচ্ছা অণি !বয়স হওয়ার সাথে সাথে কি, মানুষ ভালোবাসতে ভুলে যায়!নাকি ভালোবেসে ক্লান্ত হয়। জানিনা! যে তুমি, এক সময় সমস্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, বড় বড় ঝড়-ঝঞ্ঝায়, আমাকে আগলে বেড়িয়েছো, আজ সেই তুমি, তেমন করে আর আমায় বাধো না কেন অণি? জানি পারিবারিক পরিস্থিতির চাপে ,তোমার জীবনের অনেক স্বপ্নই পূর্ণতা পায়নি, আমি এও জানি ,তোমার সেই না পাওয়া স্বপ্নগুলোকে তুমি আমার মধ্যে সার্থক রুপে দেখতে চেয়েছো। তার জন্য, তোমায় আমি প্রাণপাত করতে দেখেছি। তবে আজ কেন তুমি কারনে অকারনে এত অবুঝ হও? কেন কারণে অকারণে অভিমানে মুখ ফেরাও অণি? কেন আজ আমাদের দুজনের মধ্যে এত তিক্ততা! আজ আমি যতটুকু, তা তো তোমার জন্যই অণি। তুমি চিরকাল, আমাকে সফলতার শীর্ষে দেখতে চেয়েছ, আর আমিও তোমাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু আজ যখন আমি লেখাপড়া শিখে, একজন শিক্ষিতা মহিলা হিসেবে একটু মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই, তখন তুমি বাধ সাধো কেন অণি? একজন শিক্ষিতা নারী হিসেবে, আমারও তো কিছু দাবী থাকতে পারে, কিছু ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ, কিছু স্বপ্ন থাকতে পারে ,যার সফল রুপ দেখা, সংসারের ফাঁক পূরণ করতে গিয়ে, কখনো সম্ভব হয়নি। আজ আমার মনের দরজা খুলে গেছে, এই মুঠো ফোনটা হাতে পেয়ে। আজ আমার কত বন্ধুবান্ধবী হয়েছে, আমার জীবনের বন্ধ দরজার আগল খুলে গেছে। আজ আমি একটু ভালো আছি। অথচ আজ, এই ফোনটাই, তোমার আমার মাঝে ,এক দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে তুলেছে। তুমি আজ আর আমায় আগের মত করে বুঝতে চাও না কেন অণি? আজ আমি বুঝেছি, কেন কবিগুরুর,” রাহুর প্রেম” কবিতাটা তোমার এত প্রিয়। মনে আছে অণি, বিয়ের কদিন পর, যখন জানতে পেরেছিলাম তুমি খুব ভালো কবিতা আবৃত্তি করো, তখন তোমার মুখে একটা আবৃত্তি শুনতে চেয়েছিলাম। তুমি তখন “রাহুর প্রেম” কবিতা থেকে আমায় শুনিয়েছিলে_____
“রোগের মতন বাঁধিবো তোমারে দারুন আলিঙ্গনে_
মোর যাতনায় হইবি অধীর,
আমারি অনলে দহিবে শরীর,
অবিরাম শুধু, আমি ছাড়া আর কিছু না রহিবে মনে।।
ঘুমাবি যখন স্বপন দেখিবি, কেবল দেখিবি মোরে
এই অনিমেষ তৃষাতুর আঁখি চাহিয়া দেখিছে তোরে।
তুমি, তোমার ভালোবাসাকে বিশ্বের কোন কিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করতে পারো না কেন অণি? এত সংকীর্ণতা কেন হবে ! আমি তোমাকে এইরূপে দেখতে ভালোবাসি না অণি। আমারও তো কাল ধৈর্যচ্যুতি হয়ে, বিবাদ করতে করতে, মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল সেই কটু কথাটা। যে,” মরার আগের দিন পর্যন্ত, আমার সাথে কথা বলবে না”। জানি ,আমার এই কথাটা, তোমায় কতটা আঘাত করেছে। কিন্তু আমারও তো অভিমান হয় অণি। আসলে আমার প্রেমটা অনেকটা গুপ্ত প্রেমের মত, আমি নিজেকে প্রকাশ করতে পারি না। আমি চাই ,আমার ভালোবাসার মানুষ, আমাকে বুঝে নেবে।ওমা! এসব ভাবতে ভাবতে দেখো, কখন রাত ভোর হয়ে গেল ।আমি যে আর পারছিনা। আমি আজ আমার অণির মান ভাঙ্গাবই ভাঙ্গাবো। দাঁড়াও, এক্ষুনি দু কাপ চা করে আনছি তোমার আর আমার।” দেখি তুমি কেমন অভিমান করে থাকো ।ও অণি! চোখ খোলো, দেখো, কি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তোমার জন্য ।এই দেখো না, ও অণি, প্লিজ,চোখটা খোলো দেখোনা একবার।” আজ আমরা সমস্ত মান অভিমান ভুলে আবার আগের মত হয়ে যাব অণি। তুমি চোখ খুলছো না কেন অণি! ও,অনি! তোমার কিসের এত অভিমান! আর কি ফিরে দেখবে না আমায়? অনি! চোখটা খোলো।এ কি অণি!তোমার হাতটা এমন ঠান্ডা কেন? প্লিজ অণি, আমার দিকে তাকাও। প্লিজ, আমার কথা একবার শোনো।এ তোমার কেমন অভিমান অণি? আমার দিক থেকে আর মুখ ফিরিয়ে থেকো না তুমি । প্লিজ চোখ খোলো, তা নাহলে দেখবে, হয়তো তোমার চোখ খোলার আগেই, তোমার বকুল ফুলটা কেমন ঝরে গেছে।অনি,” প্লিজ চোখ খোলো”————————-। “প্লিজ, আর একবার।”