‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি : এক অসম্পূর্ণ জীবন’, ৪র্থ পর্ব : গীতালি ঘোষ
‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি : এক অসম্পূর্ণ জীবন’,৪র্থ পর্ব : গীতালি ঘোষ
কবিগান ছিল এ্যান্টনির নেশা ও পেশা। কিন্তু প্রত্যেক সফল পুরুষের সাফল্যের পিছনে যেমন কোনো নারীর কল্যাণ স্পর্শ লুকিয়ে থাকে, এ্যান্টনি কী তার ব্যতিক্রম হতে পারেন? তার জীবনেও এক কল্যাণী তার মঙ্গল স্পর্শ নিয়ে প্রবেশ করেছিল। লোমহর্ষক সেই গল্প বলি—-
সতীদাহ প্রথা তখন বাংলায় প্রবল ভাবে প্রচলিত।পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বৃদ্ধ স্বামীর মৃত্যু হলে সেই চিতায় সদ্যবিধবা স্ত্রীকে উঠিয়ে তাকে সহমরণে বাধ্য করার মত নিষ্ঠুর আচার পালন করা হত। ভাগ্যহত মেয়েরা জীবন্ত অবস্থায় সেই জ্বলন্ত চিতায় উঠতে বাধ্য হত। তেমনই এক সদ্যবিধবা নারীকে এ্যান্টনি বাঁচান এবং তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেই অশান্ত বিক্ষুব্ধ সময়ে একজন বিদেশীর পক্ষে কোনো ব্রাহ্মণ বিধবার দিকে দৃষ্টি দেওয়া অসম্ভব ছিল। তখন দেশের মননশীল মানুষ এ্যান্টনির প্রতি বিরক্ত ও ঈর্ষান্বিত ছিল, কারণ তখন কবিগানের আসরে তার জয়যাত্রা অব্যাহত ছিল। তাছাড়াও একজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ হয়েও হিন্দু দেবদেবীর বন্দনাগীত রচনা তৎকালীন সমাজের চোখে অত্যন্ত গর্হিত কর্ম ছিল। তারপরেও এ্যান্টনি এক অসহায় ব্রাহ্মণ বিধবার প্রাণরক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েন নিজের জীবন তুচ্ছ করে। এতগুলো অনৈতিক কাজ করার জন্য তিনি ব্রাহ্মণ সমাজের আরো বেশি বিরাগভাজন হয়ে পড়েন।
এই ব্রাহ্মণকন্যার নাম ছিল সৌদামিনী।যে সময় এই ঘটনা ঘটে, সে সময়ে ইউরোপীয় শাসক পুরুষ দ্বারা নানা ভাবে ভারতীয় তথা বাঙালি নারীদের ইজ্জত নাশ হওয়া বা শালীনতাহানি করার ঘটনা প্রায়শই ঘটত এবং এসব ঘটনা কখনোই তাদের কাছে অপরাধমূলক ছিল না। ঠিক এমন এক উত্তাল সময়ে সর্বসমক্ষে এ্যান্টনির মত এক ইউরোপীয় পুরুষের সঙ্গে সৌদামিনী বাস করতে শুরু করেন। এ্যান্টনির উদ্দেশ্য ছিল মহান, কারণ তিনি সৌদামিনীকে প্রকৃতরূপে ভালোবেসে তাকে বিবাহ করেন। তিনি এ ব্যাপারে কোনো বিতর্কের অবকাশ রাখেননি। সকলের বিদ্রূপ সহ্য করে, সকলের নিন্দার্হ হয়েও সৌদামিনীর সঙ্গে সুখী সংসার যাপন করতে শুরু করেন। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণ তথা সমগ্র বাঙালি সমাজের খ্যাতিমান মানুষ বিরোধিতা করতে শুরু করে কিন্তু এ্যান্টনি এবং সৌদামিনীর সংসার কেউ ভাঙতে সক্ষম হয় না। পরম যত্নে এরা সাজিয়ে তোলেন এক সুন্দর সংসার—– যেখানে দারিদ্র্য থাকলেও সুখ ছিল, সমস্যা থাকলেও ছিল অপরিসীম শান্তি। (চলবে)