নরেন
নরেন,
১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে তাঁর পিতা
বিশ্বনাথ দত্ত মহাশয় হঠাৎ পরলোক গমন করেন।
বাড়ির বড় ছেলে নরেন,
সংসারের সব দায়দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হয়।
এই কঠিন সময়ে নরেন কে সংসারে অন্নের সংস্থান করতে গিয়ে
খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।।
পরিবারে সকলের যাতে একটু বেশি খাবার থাকে
সেই আশায় অর্ধেক দিন তিনি নিজে না খেয়েই বেরিয়ে যেতেন।।
চাকরির চেষ্টা করতে লাগলেন, কখনো আইনজীবী ঘরে, কখনো স্কুলে শিক্ষকতায় বা অন্য কোন কাজে,
কোথাও স্থায়ী হলো না।।
পিতার এমন আকস্মিক মৃত্যু নরেনের জীবনে বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনলো।।
মন যখন অশান্ত, শান্তির জন্য আশ্রয় নিলেন
শ্রীরামকৃষ্ণের চরণপ্রান্তে।।
একদিন নরেন এবং নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ একটি গাছের নীচে ধ্যানে বসেছেন,
মশার আক্রমনে গিরিশ কিছুতেই মনঃসংযোগ করতে পারছেন না,
গিরিশ ঘোষ চোখ খুলে নরেনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলেন ,
তাঁর সারা দেহে এত মশা বসেছে যে, মনে হচ্ছে যেন একটা কম্বল তাঁর শরীরে জড়ানো আছে।।
সন্যাসী হওয়ার পর কি জীবন সহজ ছিল?
না তা নয়,বড়ই কঠিন ছিল সেই জীবন।।
স্বামীজী যখন পরিব্রাজক তাঁর জীবনে ভালো মন্দ অনেক কিছুই ঘটেছিল,
অনেক সময়ই তাঁর খাবার পর্যন্ত জুটতো না, ক্ষুধা ও ক্লান্তিতে তিনি অবসন্ন হয়ে পড়তেন।
একবার রাজা মঙ্গল সিং এর সঙ্গে একটি মনোগ্ৰাহী আলোচনা হল।।
রাজা বললেন তিনি মূর্তি পুজোয় বিশ্বাসী নয়,
স্বামীজী তখন হাতে রাজার ছবি নিয়ে দেওয়ান কে থুতু ফেলতে বললেন,
দেওয়ান কিছুতেই থুতু ফেলতে রাজি হলো না।। তখন স্বামীজী বুঝিয়ে দিলেন
ভক্তরা ঈশ্বরের মূর্তি কেই ঈশ্বরজ্ঞানে পূজা করেন।।
স্বামীজী নিজেই অখন্ড ভারতবর্ষের ইতিহাস,
তিনি বলেছিলেন, দুর্বল হবেন না,
নিজেকেই শক্ত,সবল হতে হবে,অনন্ত শক্তি আমাদের সকলের মধ্যেই আছে,
হয়তো আমরা তা বুঝি না, কিংবা উপলব্ধি করতে পারি না।।
এই উপলব্ধিই আমাদের সাথে স্বামীজীর পার্থক্য,
যেদিন এই উপলব্ধি বোধ আমাদের সকলের অন্তর আত্মায় জাগরিত হবে,
সেদিন থেকেই স্বামীজীর স্বপ্নের ভারতবর্ষের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে।।
#মৌসুমী