এসো তর্পণ করি…… সঙ্গীতা কর
এসো তর্পণ করি……
সঙ্গীতা কর
“হায় হতভাগ্য ওয়াদী পাউস হায়”
শম্ভু মিত্রের কন্ঠে গ্রিক নাটক ওয়াদী পাউসের এই অংশটুকু শোনার জন্য বারবার মন কেমন করে, ভাগ্যের অদ্ভুত পরিহাসে মাংসপিণ্ডের মতো ছোট্ট শিশু শরীরটাকে পাহাড়ের উপর থেকে কাঁটা ঝোপের মধ্যে ছুঁড়ে ফেললেও নিয়তির লিখন রক্ষায় সে শিশু বেঁচে থেকেছে, এবং যৌবনকালে তার দ্বারাই নিহত হয়েছেন জন্মদাতা পিতা, স্খলিত হয়েছে নিজঃ গর্ভধারিণীর সতীত্ব, অতঃপর প্রচন্ড আত্ম গ্লানিতে নিজের দুই চোখ মায়ের চুলের কাটায় বিদ্ধ করে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রায়শ্চিত্ত করতে চাওয়া ওয়াদি পাউসের কী সত্যিই কোনো দোষ ছিলো??
বাংলা সাহিত্যের মহাবীর কর্ণ সারাজীবন দুঃখ কষ্ট অপমান ভোগ করে অবশেষে নিজের ভাইয়ের হাতে প্রাণ হারিয়ে স্বর্গযাত্রা করেছিলেন,অথচ সেখানেও স্বস্তি মেলেনি, স্বর্গ যাত্রার পর কর্ণের আত্মাকে খেতে দেওয়া হয়েছিলো শুধুই সোনা আর ধনরত্ন, কারণ স্বরূপ দেবরাজ ইন্দ্র জানিয়েছিলেন কর্ণ সারা জীবন সোনা দানাই দান করেছেন, পিতৃপুরুষকে জল দান করেননি, আচ্ছা এক্ষেত্রে কী কর্ণের কোনো দোষ ছিলো?? তিনি তো মৃত্যুর কিছুদিন আগে নিজের জন্ম পরিচয় পেয়েছিলেন তাই পিতৃপুরুষকে জল দান করার সুযোগই পাননি, একথা দেবরাজ ইন্দ্র উপলব্ধি করে কর্ণের আত্মাকে আবার এক পক্ষ অর্থাৎ ১৫ দিনের জন্য মর্ত্যে পাঠিয়েছিলেন জল দান করতে এবং সেই থেকে এই পক্ষটি পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত। আপামর জনসাধারণ এই সময় তর্পণ করে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে।
এখন কথা হলো গ্রিক সাহিত্যের ওয়াদি পাউস না জেনে পাপ করলেও তার ফলভোগ থেকে পরিত্রাণ পাননি, আবার দেবতার অংশ হয়েও ‘মহাভারত’-এর কর্ণকেও ভোগ করতে হয়েছে কর্ম ফল সেক্ষেত্রে অবশ্য চরম উদাহরণ স্বরূপ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ উল্লেখ করে গেছেন “আপনি আচরি ধর্ম জীবেরে শিখাই” অর্থাৎ দেবগন নিজেরা দুঃখ কষ্ট সহ্য করে আমাদের শিক্ষা দিতে চেয়েছেন পাপকর্ম থেকে বিরত থাকার,তাই শেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমাদের।পাপ বা ভুল কর্ম থেকে দূরে থাকার এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো মানুষের মঙ্গল চিন্তা করা,অতএব আসুন এই পিতৃপক্ষে তর্পণ করি হৃদয় থেকে সকলের শুভ কামনায় ও ভালো থাকার প্রার্থনায়….।