বাবার চিঠি

নিউটাউন, কলকাতা
৷৷ ০৭/০৭/২০২৪
স্নেহের সোনামা,
যে চিঠিটা লিখবো ভেবেছিলাম অনেক দিন ধরে, সেটি আজ লিখতে বসলাম।কেন জানি আজ বার বার তোর কথা মনে পড়ছে। নিজেকে প্রশ্ন করলাম কেন মনে পড়ছে? নিজেকে বার বার প্রশ্ন করে গেলে উত্তর ঠিক বেরিয়ে আসে। মনে পড়ে গেল, আজ রথ। মনে পড়ে, সেই ছোট্ট বেলায় বঙ্কিমচন্দ্রের রাধারাণী একটা অংশ তোদের বাংলা বইয়ের পাঠ্য ছিলো। তুই স্কুলের পড়াশোনা অঙ্গ হিসেবে ওটা পড়েছিলি। আর সেবারই আমাদের রামমাধব তলায় প্রথম রথের মেলা বসেছিল।সারাদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টি পড়ছিলো। বিকেলে বৃষ্টি কমাতে সবাই রথের মেলায় যাবার কথা উঠতেই তুই মেলায় যাবিনা বলে বায়না ধরলি। বায়নাটা একদম উল্টো ছিল। বাচ্চাদের মেলায় যাবার বায়না শোনা যায়, তোর না যাবার বায়না। ব্যাপার টা কি, না রাধারাণী রথের মেলায় হারিয়ে গিয়েছিলো। আমার রাধারাণী তাই রথের মেলায় যাবে না। সেই মেয়ে এখন সাত সাগরের পাড়ে, একাই বসত করে।
অনেক দিন তোর সাথে কোন কথা হয় নি।এই চিঠি সেজন্যও বটে।কথা না হওয়াটা তোর কোন দোষ নয়। কারণ তোর ফোনের আশায় বসে থাকে তোর মা। তা তুইও জানিস। ফোনে তোরা অনেক কিছু আলোচনা করিস, তোর মা তোকে সুক্তো রান্না শেখায়, কিভাবে ভাঁপে ইলিশ রাঁধতে হবে, আরও কত কিছু। আমি মুগ্ধ হয়ে তোদের কথা শুনি। কাঙালের মতো অপেক্ষা করি তোর মায়ের কথা শেষ হলে, আমি কথা বলব। তোর মায়ের, না কি তোরই, কথা শেষ হয় না।জানিনা, কিন্তু আমার ও ইচ্ছে করে তোর গলার আওয়াজটা শুনতে । এবার একবার এসে ঘুরে যা মা। তোকে খুবই দেখতে ইচ্ছে করছে।
হোয়াটসঅ্যাপে না,হাতে লিখে চিঠির উত্তর দিস, চিঠির পাতায় তোর স্পর্শ পাই, তাতে তোর গন্ধ লেগে থাকে। ভালো থাকিস, সাবধানে থাকিস।
ইতি
তোর বাবা।

দীপশ্রী রায়
ডাউন টাউন, বোষ্টন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *