ঋতুভাষ ️️️ শান্তময় গোস্বামী

ঋতুভাষ

শান্তময় গোস্বামী

 

বসন্ত একটা অসম্ভব শুকনো খটখটে ব্যাপার। তাকে ঘিরে থাকে অনন্ত পাতাঝরা কিছু বাগান। গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতিগুনে। জলের আঘাতে আছাড় মেরে ফেলে বর্ষা চলে গেছে মালিনীপুরে। নিজের করে বলার মতন কবিতার একটা পঙক্তিও সাজাতে পারে না নিঝুম ওই দেহাতি বস্তিপাড়া। দেখতে দেখতে খড়ি উঠবে হাওয়ার গা থেকে। চলে যেতে চাওয়া শীতের কামড়ে গোড়ালি আর মন দুইই হু হু করে ফাটবে। তবু একটাও রা কাড়ে না ওই দুটো বাড়ি তফাতে এক মলিন পর্দা। আশি বছর ধরে উপেক্ষায় থাকা মেয়েটা যখন তার করুণ বেণী দুলিয়ে আশরীর সাদা শাড়ি… তখন পাতলা কুয়াশায় পৃথিবীতে ভেসে থাকে একাকীত্বের প্লুতধ্বনি, কানাকানি …. ঘুমঘোরে দেখে এক মায়াবী নৌকার অবয়ব। হাতছানি দিয়ে ডাকে। যাপনের অনন্ত খরাতেও চোখের বুজে আসা শুকনো খটখটে খাত, অশ্রুগ্রন্থিতে প্লাবন আসে। জায়মান সেই পারানির ভূত-ভবিষ্যৎ কিছুই জানা নেই… কীভাবে কাঁদবে সে… কীভাবে?

#

দুই বেজন্মা ঋতুর মাঝে শুধু অন্তরমুখ সময়। কান্নার গর্ভাধান ভেঙে দুপুরগুলো উড়ে যেতে থাকে গোধূলির অভিমানে। ঝরে পড়ে পলাশ পাতা। মনখারাপের গালিচা ছাড়িয়ে পাতাবাহারের লাল-হলুদ উচ্ছ্বাস। এসময় হলুদ নিমপাতাও বড় মধুর ভ্রম হয়। নুয়ে পড়া বাঁশঝাড়, ভিজে মাটির গন্ধ, মন খারাপের বিকেল, স্কুল বাসের ফিরতি হর্ন, ইচ্ছের গোপন থেকে নিমফুলের মত ঝরে পড়ে। সেই সময়েই নদীজলের একটান ভালবাসা গায়ে জড়িয়ে হেঁটে আসে লাল-হলুদ ফ্রকের মেয়ে। মিষ্টি আলুর রঙ সেদ্ধ হচ্ছে তার গায়ে। তার এই মৃদু স্খলিত হেঁটে আসার সঙ্গী দু-এক ছড়া হলুদ ধানশীষ। ধানের বুকে দুধ জমেছে। এইসময়েই সচরাচর তার দিব্য ডালিমদুটি পেকে ওঠে মধ্যবর্তী উদ্বেলতায়। আনন্দ মুহূর্তেরা জানায়… এ বছর পলাশের বনে দাবানল জ্বলে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *