‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি : এক অসম্পূর্ণ জীবন’,৩য় পর্ব : গীতালি ঘোষ
‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি : এক অসম্পূর্ণ জীবন’,৩য় পর্ব : গীতালি ঘোষ
চলার পথ তার কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বরং সাংঘাতিক কন্টকাকীর্ণ পথেই এ্যান্টনি যাত্রা করেছিলেন। প্রতিটি পদক্ষেপেই ক্রমাগত নানাভাবে তাকে অপমান করা হয়, হেয় করা হয়। একজন বিদেশী কেমন করে বাঙালি সংস্কৃতি ভাবাপন্ন হয়ে উঠতে পারেন এই ভাবনা মেনে নিতে বাঙালিদের বড় জ্বালা ছিল। তার বাঙালি পোশাক নিয়ে সকলেই রঙ্গ-রসিকতা করত। শিক্ষিত বাঙালির মত তার স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণ তথাকথিত বাঙালির মনে ক্রোধ ও ঈর্ষার উদ্রেক করেছিল। বাংলা ও বাঙালিকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা একজন বিদেশীর পক্ষে যেন বিষম অপরাধের বস্তু ছিল, এ কথাই তাদের আচার আচরণে প্রকাশ পেত। কিন্তু এ্যান্টনি কোনো কিছুতেই পিছু হটেননি। আপন প্রচেষ্টায় তিনি নিজস্ব কবিগানের দল তৈরি করেন। এবং ধীরে ধীরে ভোলা ময়রা, নীলু ঠাকুর প্রমুখ খ্যাতনামা কবিয়ালের সঙ্গে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন। এর পর থেকেই তার জয়যাত্রা শুরু হয়।
কবিগানের আসরে এ্যান্টনি সর্ব প্রথমেই ঈশ্বর স্মরণ করতেন এবং উপস্থিত দর্শক দের সম্মান জানিয়ে তার আসর আরম্ভ করতেন। এই আচরণ তিনি সবসময় বজায় রেখেছিলেন। শুরুর দিকে তার হয়ে গান বেঁধে দিতেন গোরক্ষনাথ নামক এক কবিব্যক্তিত্ব। কিন্তু এ্যান্টনি একনিষ্ঠ ভাবে বেদ পুরাণাদির পাঠ গ্রহণ করেন তাই অচিরেই তিনি আসরে নিজের গান নিজেই বাঁধতে সমর্থ হন।
খ্যাতিমান কবিয়ালদের সঙ্গে তার কবির লড়াই সেকালে খুবই প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। তেমনই ভোলা ময়রার সাথে একটি লড়াইএর ছোট্ট একটি অংশ দেখা যেতে পারে। ভোলা বারবার এ্যান্টনিকে তার বেশবাস ও সাধনা নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রূপে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। কিন্তু এ্যান্টনি সংযত হয়েই তার জবাব দেন।
ভোলা যখন বলেন :
“সাহেব কবি যে কুর্তি ছেড়ে সঙ সেজেছ….
চড়ুইকে তুই কালো রঙে চুবিয়ে দিলি নয়
তারে পায়ে ধরে সাধিলেও কোকিল সে কী হয়?
মিথ্যেই তুই কেষ্ট পায়ে মাথা মুড়োলি
তোর পাদরী সাহেব জানলে পরে গালে দেবে চুনকালি।”
এ্যান্টনি তার উত্তরে সংযত হয়ে গান ধরেন :
“খ্রিস্টে আর কৃষ্ণে প্রভেদ কিছু নাই
নামের ফেরে মানুষ ফেরে এ কথা তো শুনি নাই।” সর্বসমক্ষে এই কথা বলে দর্শক শ্রোতার মন অচিরেই জয় করেন তিনি।
এমনি করেই কবির লড়াইএ অংশ গ্রহণ করতে করতে এ্যান্টনি বাংলা কবিগানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন, বহু মানুষের বিরোধিতা সত্ত্বেও। কত না অপমান সয়েছিলেন তিনি, কত লোকের চক্ষুশূল হয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপন প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠার বলে ধীরে ধীরে কবিগানের আসরে তার স্থায়ী আসন পাতা হয়, বাঙালির হৃদয়ে তিনি এ্যান্টনি কবিয়াল বা এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি নামে বিরাজ করতে থাকেন। তার কবিগানের সঙ্গে মিশে থাকত তার হৃদয়-জাত আধ্যাত্মিকতা। এরপর একটু একটু করে তার জয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে, কবির লড়াইয়ে অন্যতম বিজয়ী সম্রাট হয়ে ওঠেন তিনি। (চলবে)
https://www.facebook.com/share/p/5CEZ5eiiit8P5Zdp/?mibextid=oFDknk
প্রথমপর্বের লিঙ্ক : ‘এ্যান্টনি…….
https://www.facebook.com/share/p/vvQ6gEPuANTtnEPJ/?mibextid=oFDknk
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক : ‘এ্যান্টনি…..