শিরোনাম : দীপা আজও ফেরেনি কলমে : সঙ্গীতা কর

শিরোনাম : দীপা আজও ফেরেনি
কলমে : সঙ্গীতা কর

১০) দীপার মা ও দীপার মা, বলি তোর মেয়েটা কি ফিরলো? পাশের বাড়ি চয়নের মায়ের ডাকে ঘোর কাটে কমলার, গায়ের খসে পরা কাপড়টা ঠিক করতে করতে কমলা বলে ‘আচ্ছা চয়নের মা আমার দীপার এত অভিমান কেন, ও কি সত্যিই আর ফিরবে না?? ‘তা আমি কি জানি বাপু তুই যেমন এক পর ভোলানি মেয়েছেলে, আচ্ছা পেট ফোলানোর আগে কি একবারও মেয়ের মুখটা মনে পড়ে নি লো তোর?? ছি ছি ছি ছি বলি এখন যে তোর কাছ থেকে গিয়ে আমাকে গা ধুতে হবে রে নইলে আবার ছেলেমেয়ের অকল্যাণ হবে হরি হরি’ বলতে বলতে নয়নের মা। খিরকি দরজা দিয়ে বাইরে পা বাড়ায়…
কমলা উদাস চোখের দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখে একজন একজন করে তাকে ছেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ, আত্মীয়স্বজনরা যাক না দূরে কিন্তু তার নিজের মেয়ে, সে কোথায় গেল ডুকরে কেঁদে ওঠে কমলা, হে ঈশ্বর ফিরিয়ে দাও তারে, নইলে যে ভদ্রতার মুখোশ পরা অসভ্য মানুষগুলো শিয়াল কুকুরের মত ছিঁড়ে খাবে, ভাবতে গিয়ে শিউরে ওঠে কমলা, মনে হয় আবার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে। স্বামী দুলাল যেদিন নদীতে মাছ ধরতে যায় সেদিনের সন্ধ্যার টা ছিল ভীষণ মেঘাচ্ছন্ন কমলা বারবার বারণ করেছিল এই ঝড় জলের মধ্যে যেও না, কিন্তু দুলাল সে কথা কানে তোলেনি, গিয়েছিল মাঝ নদীতে বেশি কিছু মাছ যদি পাওয়া যায় তাহলে বউ মেয়েকে পুজোর দিনে কিনে দেবে রেশমের শাড়ি, জামা এই আশায়।
স্বভাবতই গ্রাম্য অশিক্ষিত মেয়েদের মধ্যে কমলা ছিল বেশ সুন্দরী, তাতে দুলালের গর্বের শেষ ছিল না, বউকে সাজিয়ে গুছিয়ে ঘুরতে নিয়ে যেতে বেশ ভালই লাগলো তার, তাই মাছ ধরতে যাওয়ার আগে কমলাকে ডেকে বলেছিল ‘ ওরে চিন্তা করিস না তুই অনেক মাছ নিয়ে আসবো দেখিস’।কিন্তু বিধি বাম, রাতে ঝড় জল বাড়লো, সাহসী মাঝি দুলাল পারলো না নৌকার পাল ঠিক রাখতে, পরদিন সকাল থেকে গ্রামের সবাই খোঁজাখুঁজি করেও পেল না তার কোন চিহ্ন।
শেষমেষ সবাই হাল ছেড়ে দিলেও কমলা কিন্তু রোজই করতে অনুসন্ধান, সারাদিন মাওয়া খাওয়া ভুলে খুঁজে যেত স্বামীকে যদি একবারও ফিরে আসে মানুষটা। একদিন সন্ধ্যার গভীর অন্ধকারের মধ্যে সে দেখতে পেল একটা নৌকা নদী তীরে এসে ভিড়লো, কিন্তু তাতে দুলাল নয় ছিল কতগুলো মদ্যপ যুবক, কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরল তারা কমলাকে, পরপর একজন করে ছিন্নভিন্ন করেছিল তার শরীর, পরের দিন গ্রামের লোক অচৈতন্য মেয়ে মানুষকে নদীর ধারে পড়ে থাকতে দেখে গায়ে চরিত্রহীনার তকমা লাগিয়ে দিল। কতবার কমলার মনে হয়েছে যে এই নদীর জলে সেও প্রাণ বিসর্জন দেবে, কিন্তু পারেনি মেয়ে দীপার কথা ভেবে, নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কি করে বাঁচবে তাহলে তার মেয়েটা!!
বিধাতা মনে হয় অলক্ষ্যে থেকে হেসেছেন, তাইতো যে মেয়ের জন্য সে প্রাণ ত্যাগ করতে পারেনি সেই মেয়েই যেদিন জানতে পারলো তার মা পর পুরুষের ছোঁয়ায় আবার মা হতে চলেছে, মনের অভিমানে সেদিন এসে কাউকে কিছু না বলে, কোথায় যে চলে গেল, কেউ তার কোন খোঁজ পেল না গ্রামের সবাই অপেক্ষা ছেড়ে কানাঘুষো বলতে থাকলো ও মেয়ে ও নিশ্চয়ই মায়ের মতো কিছু ঘটিয়েছে। আর ফিরবে না, কিন্তু অপেক্ষা করে থাকে শুধু কমলা, তার মেয়ে যদি একটিবার ফিরে এসে না বলে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে সেই আশায়…..।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *