// এক কাপ চা // পূর্বা মাইতি। দ্বিতীয় পর্ব

// এক কাপ চা //

পূর্বা মাইতি।

দ্বিতীয় পর্ব

“অর্ক রায়ের বাড়ির লোক কে আছেন?”
দূরে বেঞ্চে বসে থাকা রমা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল এ‍্যাসাইলামের রিসেপসনিস্ট মেয়েটির দিকে…
“আপনি ?”
“আমি রমা। রমা পোদ্দার।”
“যা যা আনতে বলা হয়েছিল –সব এনেছেন ?”
“হ‍্যাঁ দিদি।”
“তবে, এই ঘর থেকে বেরিয়ে ওই ডানদিকে করিডর ঘুরে বাঁ দিকে একুশ নম্বর রুমে চলে যান… ওখানে ডাক্তার বাবু আছেন।”
মেয়েটির কথামতো রমা বাম ডান তাকাতে তাকাতে … একুশ নম্বরে পা বাড়ালো …
এরকম অভিজ্ঞতা রমার জীবনে এই প্রথম । তবু কেন জানি রমার কোন অস্বস্তি হচ্ছে না।
নম্বর ঠিকমতো মিলিয়ে দরজার সামনে পর্দা একটু সরিয়ে রমা দেখলো, ডাক্তারের পোশাক পরা একজন আর সাধারণ পোশাকে বাকি কয়েকজন বড়ো একটা টেবিলের চারপাশের চেয়ারে বসা।
রমাকে দেখে ওনারা ইশারায় ঘরে ঢোকার নির্দেশ দিলেন।
রমা ঘরে ঢুকে লোকজনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
এবার রমার সঠিক অনুমান ডাক্তার বাবুই রমার সঙ্গে কথা শুরু করলেন।
“কি কি এনেছেন দেখি?”
রমা কাঁধে ঝোলানো ব‍্যাগ থেকে –রং তুলি কাগজ –সবই সামনের টেবিলে নামিয়ে রাখলো।
রমা — “আমি আপনাদের কথামতো বৌদিকে না জানিয়ে এগুলো গুছিয়ে ব‍্যাগে ভরে সরিয়ে রেখেছিলাম।
মাঝে মাঝে অর্ক দাদা কে এগুলো দিয়ে আঁকতে দেখেছি। তাছাড়া বৌদির মুখেও তো শুনেছি, দাদা কোথায় কোথায় যেন আঁকা গুলো পাঠায়।”
“ঠিক আছে ঠিক আছে।
আচ্ছা এবার আপনি আসতে পারেন।”
ঘাড় নেড়ে রমা এগোতে গিয়েও একটু ঘুরে দাঁড়ালো।
ডাক্তার বাবু রমাকে জিজ্ঞেস করলেন… “কিছু বলবেন ?”
রমা– “অর্ক দাদাকে একবার দেখা যায়? উনি এখন কেমন আছেন?”
কথা গুলো একটানা বলে রমা ডাক্তার বাবুর দিকে তাকিয়ে রইল …
ডাক্তার বাবু :- “না। এখন দেখতে দেওয়া যাবেনা। তবে উনি আগের থেকে বেটার।
বাই দা ওয়ে,ওনার স্ত্রী কেমন আছেন ?”
রমা — “বৌদি? ওই একই রকম… কোন কাজে মন নেই ।”
ডা:–“ওকে। আপনাকে আর একটা কাজ করতে হবে রমা।”
বলুন ডাক্তার বাবু, বলেই রমা বয়স্ক ডাক্তার বাবুর দিকে তাকিয়ে রইল।
ডা: –” মাঝে মাঝে আপনি সেঁজুতি ম‍্যাডামের কাজে কামাই দিন। পরে গিয়ে ওয়াচ করুন,অত‍্যন্ত জরুরি কাজটুকু উনি নিজে করে নিয়েছেন কিনা !
এজন্য ম‍্যাডামকে না জানিয়ে আপনাকে ডেকে এরকম কাজের বন্দোবস্ত করেছি।”
অবাক হয়ে রমা ডাক্তার বাবুকে আমতা আমতা করে বললো…
“ও,ওইজন‍্য বৌদি অর্ক দাদা কে এখানে রেখে গিয়ে আমাকে বলেছিল…আপনারা আর একটা নাম্বার চেয়েছিলেন। তাই বৌদি আমার ফোন নাম্বারটা দিয়ে গেছে।
“ভাবুন,আপনাকে ওনারা কত ভরসা করেন!”
রমা ডাক্তার বাবুর কথা শুনে আহ্লাদি হয়ে মুখটা নিচু করলো।
ডাক্তার বাবু রমাকে আরও একটু আস্বস্ত করলেন …
” আমরা কিছুদিনের মধ্যে অর্ক বাবুর সুখবরটা বোধহয় ম‍্যাডামকে দিতে পারবো।
কারণ এরমধ‍্যেই উনি নিজেকে অনেকটা সারিয়ে তুলেছেন।
উনি যে আঁকতে পারেন, এটা আমরা ম‍্যাডামের কাছেই জেনেছিলাম। তাই এখান থেকে অর্কবাবুকে আঁকার সরঞ্জাম দেওয়া হয়। ওগুলো দিয়ে উনি নিজের ফ্ল‍্যাট,নিজের ঘর…প্রতিদিন একটু একটু করে আঁকছেন। এবার উনি নিজের জিনিস নিজেই হ‍্যান্ডল করতে পারবেন।
আর আমাদের মনে হচ্ছে,উনি নিজের ক্রিয়েটিভিটিটাকে নিজের প্রফেশনে নিয়ে আসতে চান।”
এতক্ষণ রমা কিছুটা বুঝে কিছুটা না বুঝে ডাক্তার বাবুর কথা গুলো গিলছিলো।
এবার বাড়ির পথে।
হেমন্তের এক মুঠো শিশির ভেজা খুশি নিয়ে রমা পায়ে স্পিড বাড়ালো।
আজকের কামাইয়ের জন্য তাকে বাড়ি বাড়ি জবাবদিহি করতে হবে।
হোক গে।
এ জীবনে –একটা ঘর দুটো জীবন সে যদি আবার গড়ে দিতে পারে…এর থেকে আর ভালো কিছু হয় না।
পঞ্চাশোর্ধ রমার এটুকু বুঝতে বাকি রইল না।
এ পুলকটুকু সে হেমন্তের সুর্যাস্তে সঁপে দিয়ে হনহন করে স্টেশন এর দিকে এগোতে লাগল।
এখন তো লোকাল ছেড়েছে।
স্তব্ধ থাকা সভ‍্যতার চাকা আবার চলতে শুরু করেছে।
মাস্কটা আর একবার ঠিকঠাক করে নিয়ে, সদ‍্য ছাড়া ট্রেন টায় উঠে পড়ে রমা ভাবল …
হেমন্তের ওম এখনো বেঁচে…এইটুকুই বা কম কি!
এর সবটুকু সেঁজুতি বৌদির সংসারে ঢেলে দিতে হবে।
অন্তত সকালের এক কাপ চা’য়ে !!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *