‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি…এক অসম্পূর্ণ জীবন’, ১ম পর্ব : গীতালি ঘোষ
আজ থেকে শুরু করলাম এক অপূর্ব জীবন কথা…যা সত্যিই হৃদয় -বিদারক। আগের সংখ্যায় সূচনা পর্বটি দেওয়া হয়েছিল, আজ থেকে ধারাবাহিকের চলার শুরু।কেমন লাগে সকলে জানাবেন বন্ধুরা —-
‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি…এক অসম্পূর্ণ জীবন’, ১ম পর্ব : গীতালি ঘোষ
আজ একটা অশ্রুত জীবনের গল্প শোনাই। এ জীবন কোনো মহাজীবন নয়, খুব সাধারণ এক গায়ক কবির জীবনকথা। নাই বা হল তা মহাজীবন, নাই বা হল তা মহান জীবন—- এক আজন্ম বিদেশীর বাঙালি কবি হয়ে ওঠার অসাধারণ গল্প– যা মর্মস্পর্শী ও মর্মন্তুদ। কবিয়াল এ্যান্টনি ফিরিঙ্গির জীবনের গল্প আজ আমার নিবেদন।
উত্তমকুমার অভিনীত ছায়াছবির কল্যাণে এই ব্যক্তিপুরুষটি সকলের পরিচিত এবং সর্বজনসমাদৃত। কিন্তু রূপালী পর্দায় তার সম্পূর্ণ জীবনকথা উঠে আসে নি। তার কথা জানতে হলে আমাদের যেতে হবে অনেক গভীরে, অষ্টাদশ শতকের মাঝখান থেকে,যে সময়ে, ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আধিক্যে ভারতবর্ষ বিব্রত ও বিপর্যস্ত। স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, ব্রিটিশ, পর্তুগীজ মানুষ তখন ভারতে বাণিজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে শক্তিবিস্তার করার জন্য উদ্গ্রীব। সেই সময়ের কথা……
এক পর্তুগীজ পিতার হাত ধরে কিশোর এ্যান্টনির এ দেশে প্রবেশ। হেন্সম্যান এ্যান্টনির জন্ম হয়েছিল ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালে। ব্যবসায়ী পিতা তার বাংলায় এসেছিলেন ব্যবসার অভিপ্রায়ে, বেছে নিয়েছিলেন হুগলী নদীতীরস্থ বন্দরনগরী চন্দননগরকে, যা ছিল ফরাসডাঙা নামে বিখ্যাত। সেই সময়ে পর্তুগীজরা এখানে টিঁকে থাকার প্রাণপণ প্রচেষ্টায় ডাচ এবং ফ্রেঞ্চদের সাথে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত ছিল। হুগলী জেলা ছিল এদের সকলের কর্মস্থল তথা বাসস্থান। এখানে তাদের শেষতম খুঁটিটিও প্রায় অবলুপ্ত হতে চলেছিল। আনুমানিক ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ডাচরাও আর টিঁকে থাকতে অসমর্থ হয়। যদিও ব্রিটিশরা শেষপর্যন্ত অবিসংবাদী শাসক রূপে আত্মপ্রকাশ করে, তবু কিছুকাল ফরাসিরা নিজেদের টিঁকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়।
পর্তুগালের মানুষ এখানে তাদের শেষ সময়ের অপেক্ষায় ছিল। সে কারণে দেশীয় কেউ সে সময়ে এ্যান্টনির পাশে ছিল না।তার মাথায় ছিল না কোনো উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীর বরাভয় হস্ত। ফলে সেই তরুণ এ্যান্টনি সাধারণ একজন লবণ ব্যবসায়ীর পুত্র হয়ে প্রতি মুহূর্তে বিপরীত শক্তির রোষের মুখে পড়েন। সঙ্গে ছিল অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির আগ্রাসনের ঝড়। সেইসময় জীবন তার পক্ষে একেবারেই মধুর ছিল না। তার পিতা চেয়েছিলেন পুত্র তারই পদক্ষেপে পা ফেলুক, লবণ ব্যবসায়ে মন দিক, কিন্তু ততদিনে বাংলার ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি তরুণ এ্যান্টনির হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করেছে। বিদেশী মনকে সম্পূর্ণ রূপে আয়ত্ব করে নিয়েছে বাংলার জগত ও জীবন। এমন ঐতিহাসিক আগ্রাসনের সময়ে এই তরুণ মানুষটি মনপ্রাণ দিয়ে শক্তির উপাসনায় মন দেন। (চলবে)