ঋতুকালীন গলুই এ ওরা আজও জেগে কলমে মলয় চৌধুরী
ঋতুকালীন গলুই-এ ওরা আজও জেগে—///
কলমে–মলয় চৌধুরী
শিয়াল বন-শূয়োর সজারু ডাকা ধুম রাতের ঘুম চিরে রেললাইনে দৌড়াছে রাত দু’টার কু ঝিকঝিক।
হল্লা খবরে আওয়াজ হয় মহৎ’কে জলজ্যান্ত ফণা ছোবলাইছে।
পাতাডুংরী গাঁয়ের তল্লাট কোয়াক ডাক্তার প্রহ্লাদ বাবুর ফটকে।
পড়হা লিখা জানা যুয়ান মরদ বিষহরি দাঁতে একদম ঝিমাই গ্যাছে।
কুথা কুনো ফরম ভরা,দরখাস্ত লিখা কামে উ ই মুদের ভরসা।
টাকা ঘরে (ব্যাংক) লইতন খাতা, জমা খরচের কাগজ সবই উ সামহালতেক।
যা করি হোক উকে বাঁচাইলে বাবু!
ঝাড়ফুঁক ওঝার দিন খতম বুঝে আপন ভটভটি লিয়ে সিধা হাসপাতালে মাঝবয়েসী লড়াকু।
অ্যান্টিভেনিন ইনজেকশন শরীরে চালান লাগবেইক,
কোয়াক বিদ্যায় এটুকুন রপ্ত ……
ঘাম সিনানে গিলত্যে আসা চিড়ল সূরয,
সীতা মাইএর গহনা মতো চারধার ছড়াই পড়ছ্যে ।
পাশ কাটানো শুখা নদী,গাই গরু বলদ মোষদের ছানাপোন্যা গুলান বুক চিতায় হাঁফ টানছ্যেক।
খানিক স্বস্তি মাগনায় সাঁঝের মহিমা দিই রাতের গভীরে।
ক্ষ্যাপা কুনো কালা মেঘ এদিকে তাড়েফুড়্যে আলেও বারিষ নাই এক বুন্দ!
শাল্যিক কাক চট্যা পাখ,ডানা আর ঠ্যোঁট লিয়ে মরা হাজা পুকুর বিল এ বেমতলব চ্যাঁচায় যাছে।
এক প্যাট ভুখ লিয়ে ক’মাসের ভুখা শ্মশানট বুড়হা অশ্বত্থের কোলে ঘুমাই রহে, জিরান দ্যায় ।
জাড় কালে শরীরকে গরম ধরানো চ্যায়ে,
ধরনকালে নিজেকে জাড় ধরানো এইসা কঠিন।
কামিনী ফুলের ঝিরিঝিরি পাতায় সাঁঝ পিদিম জ্বালে মাটিতে শরু পাটির চাটাই বিছাই গোটা গেরাম মস্করা মাতন,
তারপর পুয়াতি রাতের সোহাগে কখুন ঘুমাই পড়ি।
বিছা,কাঁঠপিপড়া,বন বিল্লি হরদম মুদের গায়ের গন্ধ শুঁকে,বিস্তর দাঁত বসানো সাপ গুলা হরিয়ালী বিষ ঢালে আর আমরা ট্যাঁসাই যাছি।
সদর হত্যে বিশ বাঁও দূর গাঁওয়ে হরবখত উঠতি যন্তরনা আসে!
বিপদ বালাইএ নিঃশ্বাসের অস্পষ্ট খিড়কিতে মরণ হামেশা ইশারা দ্যায়, বাঁচা টুকুন ঢের গাঢ়।
ভাগ্যিস প্রহ্লাদ বাবুর হাতুড়ে দাওয়াই ছিল্যেক তাই মোরা শান্তি দ্যেখি।
উঁচা রাস্তায় বড়ো হাসপাতাল য্যায়ে চিকিৎসা খোরাক জুটে নাই,কামকাজে ক পয়সায় পরিবার পালবি, না রোগ যাতনা ঘুচাবি?
দিন কতক আগলি শহর বাবুরা এসে চোঙা ফুঁয়ে বইলতেছিলি,মাটিতে শুয়া বন্ধ করত্যে হবেক।
বছরে ৪৭ হাজার সাপ আর বিছা কামড়ে পটল তুল্যে, দৈনিক হিসাবে ১৩০ টি তাজা প্রাণ গায়েব!
হাতুড়ের কাছে না গিয়ে হাসপাতালে হাজিরায় বক্তৃতা রাখে।
তা খাটিয়ার মাচান,আসমানে ঘুমালে তুদ্যের পারা শিরদাঁড়া, পিঠ ব্যথায় কাহিল হতে অরাজি।
উ আমরা মইরত্যেও রাজি কিন্তু মাচানে নাকডাকা লয়।
প্রহ্লাদ ডাক্তার রইছে, ই গাঁও উ পানে সব মোটাদাগে ভালা-মন্দা মিশাই কাটছ্যে।
দেশীয় মানচিত্রে বারোআনা পল্লী বাংলা,
সেখানে কর্পোরেট শহরের বাতাবরণে পৌঁছে লাইন মোতাবেক ট্রিটমেন্ট সর্বস্তরে সম্ভব নয়।
রোগব্যাধি ঈশান কোণ নিয়ে সীমাহীন অভিযোগ।
নামের আগে অবৈধভাবে ডাক্তার লেখা
,যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক,কঠিন স্থিতিতেও ওকালতি ফলানো, অকাল গর্ভপাতে বিদায়ী যবনিকা!
রোজকার চিকিৎসা পালে প্রশিক্ষিত স্বীকৃত ডিগ্রীর অপ্রতুলতা,স্বাস্থ্য কাঠামোয় কেন্দ্র উপকেন্দ্র আজও দগদগে ঘা।
বিধি মোতাবেক ওরা তথাকথিত চিকিৎসক নহে।
উজান প্রান্তের ঋতু কালীন গলুই-এ অসুস্থতার অকাল বিদ্যুৎ বর্ষণে,বড়ো দুর্যোগে মেঠো পথের কোয়াকই আত্মিক নির্ভরতা,মিতবাক দিনলিপির সেরা আশ্রয়।