কিছু কথা। পর্ব-৪ কলমে-ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।
ধারাবাহিক উপন্যাসিকা।
কিছু কথা।
পর্ব-৪
কলমে-ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।
সুভাষের কথা।
আমি এখন কী করে ওকে সামলাবো?কেকার বাপের বাড়ি নিজের বলতে তো ঐ দুবছরের ছোট ভাইটা।রাঙাদি রক্ষণশীল প্রবাসী পরিবারের বৌ।ইচ্ছে থাকলেও সব সময় যোগাযোগ সম্ভব হয়না।আমি কেকাকে বললাম -‘চলো কেকা,এ তো কোন শুভ অনুষ্ঠান নয়,কারো বাড়িতেও যেতে হচ্ছেনা। হসপিটালে ভাইকে দেখতে যাবে। কোনো লৌকিকতা করতে যাচ্ছ না তুমি।’- কেকা বললো-গাছ থেকে দুটো পেয়ারা পেড়ে দাও, ভাই ভালোবাসে ডাঁসা পেয়ারা।’- পেড়ে নিলাম দুটো পেয়ারা। কেকার জন্য আমার বুকের মধ্যে মুচড়ে উঠলো। কী করে বোঝাই অবোধ বৌটাকে আমার, পেয়ারা চিবানোর অবস্থায় এখন আর নেই দীপ! আমি সুভাষ মাইতি। বনগাঁর প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষী পরিবারের ছেলে। মেধাবী বলেন শিক্ষকগণ। সেই জোরেই লেটার মার্কস পেয়ে পাশ করেছিলাম। ভর্তি হয়েছিলাম বারাসাত কলেজে। মুখচোরা, লাজুক গ্রাম্য ছেলে আমি। কলেজে পড়ুয়া সব ছেলেমেয়েরাই তো গ্রাম ও শহরতলীর। কিন্তু যুগের হাওয়ায় সকলেই কতো স্মার্ট,
এ্যাডভান্স। শুধু আমিই পারিবারিক হীনমন্যতায় জড়োসড়ো।আমাকে বোকা মতো দেখে কলেজের স্মার্ট স্টুডেন্টরা যখন টোন-টিটকিরিতে আমার অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলতো তখন এই ডাকাবুকো কেকাই আমার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে তুলোধোনা করে দিতো বিপক্ষকে।
কেকা,খুকু যার ডাক নাম। ডাকাবুকো, প্রতিবাদে মুখর, কোন অবহেলাকে গায়ে না মাখা,কালোকুলো,একমাথা তেলহীন রুক্ষ চুলের আর দীঘল চেহারার মেয়েটার দীঘির মতো গভীর চোখ দুটো আমাকে বড়ো টেনেছিল।কখন যে দুজনেই দুজনের ভালোবাসায় ডুবে গিয়েছিলাম! বি.এ পাশ করে টেট পরীক্ষা পাশ করে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে চাকরিও পেলাম। তবু চাষার ছেলের বদনাম ঘুচলো না। জেদী কেকা ভাদুড়ি এক কাপড়ে কেকা মাইতি হয়ে চলে এলো বনগাঁর শ্বশুরবাড়ি। বাপের বাড়ি বলতে শুধুই দীপ।
দুটো পেয়ারা নিয়ে চলে এলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। স্টেশনে হকারের থেকে একগাদা লেবু লজেন্স কিনলো খুকু। ছোট ভাইটা তার লেবু লজেন্স চুষতে খুব ভালোবাসে।
ক্রমশ :