ধারাবাহিক গল্প ***** ইচ্ছে পূরণ
ধারাবাহিক গল্প
ইচ্ছে পূরণ
পর্ব–৩
অবনী যা অনুমান করেছিল সেটাই হল।দুপুরে খেতে খেতে বাবা বলল–টুবাই জুঁইকে তোর কেমন লাগে?অবনী বলল–জুঁই তো চমৎকার মেয়ে বাবা।নতুন করে বলার তো কিছু নেই।হিমাংশু বাবু বললেন–তাহলে তোর শচীন কাকুকে কাল একবার আসতে বলব?
অবনী বলল–সে তো তোমার বন্ধু মাঝে মাঝেই আসেন।হিমাংশু বলল–তুই তো জুঁইকে পছন্দ বললি।আমি জুঁইয়ের সংগে তোর বিয়েটা ঠিক করতে চাই।–বাবা আমার তো চাকরি একবছরও হয়নি।এর মধ্যে বিয়ের কথা ভাবছ কি করে?এই বাড়িটা শরিকি ঝুরঝুরে পুরনো বাড়ি।আমি অন্তত বছর চারেক চাকরি করে আমাদের বাড়ির অংশটা আগে রিপেয়ারিং করি।
হিমাংশু বাবু বললেন–বাড়ি নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।আমার রিটায়ার করতে আর ছমাস মাস আছে।এককালীন যে টাকা পাব সেটা দিয়েই বাড়ি রিপেয়ারিং করব।বিয়েটা না হয় বছর খানেক পর হবে।
অবনী বলল–বাবা আমি এখন থেকেই কোনো কমিটমেন্ট করতে পারব না।আমি কোনো সরকারি চাকরি করিনা।কোম্পানির চাকরি মানেই অনিশ্চিত চাকরি।আগে আমাকে একটু থিতু হতে দাও।–তাহলে শচীনকে কি বলব?–কি বলবে মানে?তুমি কি আমার মত না নিয়েই কথা দিয়েছো নাকি?–আসলে প্রস্তাবটা শচীন দিয়েছিল। আমি কোনো কথা দিইনি।আমি শুধু তোর ইচ্ছা আর মতামত জানতে চেয়েছি।
অবনী বলল–জুঁই তো এখন লেখাপড়া করছে।ও লেখাপড়াটা আগে কমপ্লিট করুক।এত দীর্ঘ সময়ে অনেক কিছুই ঘটতে পারে বাবা।হিমাংশু বাবু গম্ভীর মুখে খাওয়া শেষ করে উঠে গেলেন।সুলেখা বলল-বাবার মুখের ওপর তো খুব ট্যাঁক ট্যাঁক করে কথা শোনালি।তা কি ঘটতে পারে টুবাই? ঘটতে পারে না কিছু ঘটিয়েছিস?ঝেরে কাশ তো বাবা।–আমি আমার কথা বলিনি মা।জুঁই পরবর্তী সময়ে তার পছন্দের কাউকে তো জীবনসঙ্গী করতেই পারে।তোমরা পুরনো যুগের মতো কথা দেওয়া নেওয়ার ব্যাপারটা বন্ধ করো মা।শচীন কাকু বাবার বন্ধু।সেই সম্পর্কটাই আপাতত থাক না।
পরদিন দুপুরে খাওয়ার পর অবনীর একটু চোখ এঁটে এসেছিল।মাথার কাছে টুবাই দা ডাক শুনে ধড়মড় করে উঠে বসে বলল–তুই?দিলি তো কাঁচা ঘুমটা ভাঙিয়ে?জুঁই হেসে বলল–কটা বাজে খেয়াল আছে?বিকেলের চা খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।এই নাও তোমার চা।আচ্ছা টুবাই দা তুমি নাকি বিয়ে করবে না বলে ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা করেছো?–কে বলল তোকে?জুঁই বলল–কাকিমার কাছে শুনলাম।– তাতে তোর সমস্যাটা কি?তোর না সামনে পরীক্ষা?লেখাপড়া শিকেয় তুলে খেজুরে গল্প করতে এসেছিস?জুঁই বলল–আমার আবার কি সমস্যা।আমি তো বাবাকে বলছি এম এ পড়ব। তারপর চাকরির চেষ্টা করব।কিন্তু বিয়ে করতে তোমার সমস্যাটা কি?তুমি তো চাকরি করছ।
অবনী বলল–আমি যা স্যালারি পাই তাতে কলকাতার মতো জায়গায় বৌয়ের ভরণপোষণ চালানো কঠিন।জুঁই বলল–অনেকেরই চাহিদা খুব বেশি কিছু থাকে না।–তাই নাকি? এমন মেয়ে তোর সন্ধানে আছে বুঝি? –চোখ থাকলেই দেখতে পেতে।অবনী বলল–এই সেরেছে,তুই নোস তো?–আমি কেন হব?দায়িত্ব নিতে ভয় পাওয়া ছেলেকে আমি কখনও বিয়েই করব না।
অবনী বলল–একদম ঠিক বলেছিস।তোর জন্য রাজপুত্র বর এখন থেকেই সাধনা করছে। আচ্ছা তুই একা এসেছিস না কাকুও এসেছে?–আমি বুঝি একা আসতে পারি না?প্রত্যেক দিন একাই তো বাস ঠেঙিয়ে কলেজ যাই।— চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
ফিরে এসে অবনী বলল–মা বাবাকে দেখছি না?–তোর বাবা এইমাত্র তাস খেলতে বেরিয়ে গেল।যা বাবা মাত্র একটা দিনের জন্যে এলাম আর ফাদার বেরিয়ে গেল?ভাবলাম একহাত দাবা খেলব।–হ্যাঁ রে জুঁইয়ের বাড়ি পর্যন্ত যাসনি?–বাবার সংগে আড্ডা মারব দাবা খেলব বলেই তো গেলাম না। ওদের বাড়ি পৌঁছানোর অনেকটা আগেই জুঁই বলল চলে যেতে পারবে। পরের বার ঠিক যাব।–তোর বাবার মন খারাপ বুঝিস নি?
অবনী বলল–আচ্ছা মা আমি কি এমন বাবাকে বলেছি যে বাবার মন খারাপ হবে?আর আমার বয়সটা কি বিয়ে করার বয়স?একটু গুছিয়ে নেওয়ার সময় তো দেবে?–তোর জন্যে পায়েস করেছি।এখন খাবি না রাতে খাবি?–রাতে রুটির সঙ্গে খাব।সংগে হাঁসের ডিমের কারি আর বেগুন ভাজা কোরো।এখন চা আর তোমার স্পেশ্যাল বেগুনি ভেজে দেবে?মা প্লিজ তুমি অন্তত মুখ গোমড়া করে থেকো না।
ঘরে এসে ভাবল বীথিকে একবার ফোন করবে।মনটা কেমন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।জুঁই কি তার সঙ্গে বিয়ের কথা চলছিল জানে? মেয়েটা কি তার প্রতি দুর্বল ছিল?তার কারণে কেউ কষ্ট পাবে এটা ভেবে তার খুব খারাপ লাগছিল।সে তো কখনও জুঁইয়ের সঙ্গে সেভাবে মেলামেশাই করেনি। প্রতিশ্রুতির তো কোনো প্রশ্নই নেই।
একটু পরে মা বেগুনি আর চা নিয়ে ঢুকল।দুবার ডেকে ছেলের সাড়া না পেয়ে কাছে এসে গায়ে হাত দিয়ে বলল–এই টুবাই,কি
এত তন্ময় হয়ে ভাবছিস বল তো?ডেকে সাড়া পাচ্ছিনা।অবনী একটা বেগুনিতে কামড় দিয়ে মার মুখের কাছে ধরে বলল–টেরিফিক মুচমুচে হয়েছে।খেয়ে দ্যাখো।মা বলল–তোর মতলবটা কি বল তো?এতক্ষণ কার ধ্যান করছিলিস?অবনী বলল–তোমার আদর খাওয়াটাই আমার একমাত্র মতলব।কই হাঁ করো।এবার না হাসলে কিন্তু ছোটবেলার মতো কাতুকুতু দিয়ে হাসাব।
সুলেখা হেসে বলল–হয়েছে?এবার ছাড়,আমার কাজ আছে।আজ রাতটা থাকবি তো?–না মা ভোরের ট্রেন ধরে গেলে অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে।আমি রাতের ট্রেনে চলে যাব।
ট্রেনে গোটা রাতটা অবনী ভারক্রান্ত মনে থাকল। তার গল্পবাজ আড্ডাবাজ বাবা যন্ত্রের মতো তার সংগে আচরণ করল।বাবা মার সঙ্গে ছোটোবেলা থেকে তার স্ট্রং বন্ডিং।
প্রতিবার ফেরার সময় বাবা দু রকম মিষ্টি কিনে আনে,মা আচার,ঘি নারকেল নাড়ু এটা সেটা দিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে দেয়।ব্যাগ গোছানোর সময় বাবা নিজে খুঁটিনাটি জিনিস দিতে ভুল হল কিনা দেখে নেয়।এবার বাবা মিষ্টি এনে দিয়ে ধারে কাছে থাকেনি।যাওয়ার আগে শুধু বলল সাবধানে যাস।
ক্রমশ–