আবছায়া ****** শেষ পর্ব

আবছায়া
শেষ পর্ব

এদিকে শৌণক নয়নের সঙ্গে সমানে কথা বলে চলেছে। কথা তো নয়, জেরাই করছে সে! শৌণক যখন জেরা করতে শুরু করে তখন ওর সঙ্গে  যুঝে ওঠা ভীষণ মুশকিল হয়ে ওঠে। ওর কথার জালে জড়িয়ে নয়ন স্বীকার করতে বাধ‍্য হয় যে সুধার প্রেগন‍্যান্সির কারণ ও নিজেই। নিজের সপক্ষে বলে যে এই ঘটনা সুধার সম্মতিতেই ঘটেছে। সুধা একটা বাচ্চার জন‍্য প্রায় পাগল হতে বসেছিল। তাই নয়ন ওকে সেই সুখ দিতে চেয়েছে। জেরার মুখে সে এটাও স্বীকার করে যে ও সুধাকে ভালোবাসে কিন্তু এটাও বলে যে এই জন‍্যে সুধার সংসার ভেঙে যায়, সেটা ও চায় না।
শৌণক বলতে থাকে…
—-  আপনি জানতেন, সুধা প্রেগন‍্যান্ট?
—-  হ‍্যাঁ জানতাম।
—- এই নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো বিবাদ হয়েছিল?
—-  সেটা সুধা আমাকে বলে নি।
—-  এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা, নয়নবাবু?
নয়ন এই প্রশ্ন শুনে একটু আড়ষ্ট হয়ে গেল। আমি তাকে লক্ষ‍্য করছিলাম। আমার মনে হল ও অনেক কথা লুকিয়ে যাচ্ছে। শৌণক আবার প্রশ্ন করে,….
—- আচ্ছা, খুনটা কে করল বলুন তো?
নয়ন কেমন আমতা আমতা করে বলল,
—- কেমন করে বলি বলুন তো? ব‍্যাপারটা ঋভু জানতে পেরেছিল কিনা তাও তো আমি  জানি না! সুধা আমাকে সেকথা বলেনি।
—- আপনিও তো খুনী হতে পারেন?
নয়ন যেন আকাশ থেকে পড়ল!..
—-  আমি? এর পিছনে আমার মোটিভ কি হতে পারে? নয়নের গলা রুদ্ধ হয়ে  আসে। চোখে স্পষ্টতই আতঙ্কের ছাপ ফুটে ওঠে। শৌণক একই গলায় বলতে থাকে,
—- আপনি তো ভাবতেই পারেন যে একথা জানাজানি হলে আপনার সব সুনাম নষ্ট হবে। চাকরি চলে যাবে। কারণ এক্ষেত্রে সুধার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর ঋভুবাবু জানতে পারলে আপনাকে কি ছেড়ে দিতেন? আপনিই বা পালিয়ে কোথায় যেতেন? শেষে তো ধরা দিতেই হত।
নয়নের চোখ তখন আতঙ্কে যেন ঠেলে বেরিয়ে আসছে।
শৌণক তাও বলে চলেছে,
—-  যদি ঋভুকে খুনী বলা হয়, তবে তো সে আপনাকে ছাড়বে না। যে স্ত্রীর জন‍্য ঋভু নিজে এত বড় স‍্যাক্রিফাইস করতেও পিছপা হয়নি, সে যদি বিশ্বাসঘাতকতার জন‍্য নিজের স্ত্রীকে খুন করেও, তবে সিড়িতে বসে কান্নাকাটি করার বদলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই  আপনাকে খুন করতে আসত? তাই নয় কি?
প্রবল জেরার মুখে এবার নয়ন তর্ক করার জোরটাও হারিয়ে ফেলেছে। কি বলবে, কিইবা বলার আছে, বুঝতেই পারছে না।

শৌণক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ফোন করে ফোর্স চাইল।
অফিসার ইন চার্জ এলে নয়নকে তার হাতে তুলে দিয়ে বলল,
—- থানায় নিয়ে  যান। আর জেরা করে বের করুন যে খুনটা কখন কিভাবে করা হয়েছে। খুনীকে আপনার হাতে তুলে দিলাম। আমার মনে হয় ঋভুবাবুকে জেরা করার আর দরকার নেই। ওনাকে ছেড়ে দিন।
অফিসার আর দেরি করলেন না। শৌণককে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে নয়নকে এরেস্ট করে নিয়ে চলে গেলেন।
শৌণক বলল,
—-  আপনারা যান। আমি  ঠিক সময়ে পৌঁছে যাব।

আমি সুনীতা রক্ষিত, দুঁদে ডিটেকটিভ শৌণক চ‍্যাটার্জির এসিস্ট‍্যান্ট…. শৌণকের সঙ্গে  একটার পর একটা কেস করতে করতে রহস‍্যভেদে বেশ সাবলীল হয়ে  উঠেছি! শৌণককে চিয়ার্স করে নিজেও এই রহস‍্য ভেদ করে মনে মনে খুব খুশি হয়ে  উঠলাম। কিছুটা কৃতিত্ব তো আমারও প্রাপ‍্য! অনেক ক্লু আমারই চোখে পড়েছিল। শৌণকের শ‍্যেন দৃষ্টির কিছু ভাগ তো আমিও লাভ করেছি। এমন কতই তো রহস‍্য ভেদ করেছি আগে। সে গল্পও কোনোদিন নিশ্চয়ই শোনাব। কিন্তু আজ মনটা খুব খারাপ হয়ে  গেছে মেয়েটির অমন নিষ্ঠুর মৃত্যু দেখে। সন্তানের জন‍্য প্রবল আকুতিতে জীবনটাই তার চলে গেল। আহা রে, ওর জন‍্য সত্যিই কষ্ট হচ্ছে।।
*************
৪টি পর্বে গল্পটা শেষ করলাম। পাঠকের মতামত জানতে পারলে উৎসাহিত অনুপ্রাণিত হবো।ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *