মস্তিষ্কের মাথা খেয়ে
দুলাল কাটারী
মস্তিষ্কের মাথা খেয়ে আর কত দিন বাঁচবেন!
একদিন সাতসকালে সেজেগুজে
ধুতির কাছা ধরে মাথায় ছাতা ধরে
ই-রিক্সায় চড়ে বসলেন,
সটান চলে গেলেন হাসপাতালে।
সিটি স্ক্যান করিয়ে দেখলেন মাথায় ঘিলু টিলু কিচ্ছু নেই।
ব্যাস্- খবরটা রটে গেলো বর্ধমান থেকে গল্ফগ্রীণ্;
সেখান থেকে হাওড়া হয়ে দিল্লি।
‘মানুষ মস্তিষ্কের মাথা খেয়েছে!’
এর চেয়ে বড়ো খবর আর কী হতে পারে!
ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেলো পর্দায় পর্দায়।
ধর্মতলায় হাজার খানেক লোক অনশনে বসে গেলো তৎক্ষণাৎ।
দিল্লিতে গান্ধী মূর্তির পায়ের কাছেও কিছু লোক বসতে চায়,
সে জন্য আবেদনও পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যেই।
শাসক শিবির হা হা রবে অট্টহাসি শুরু করে দিয়েছে।
তাদের এতো দিনের প্রচেষ্টা সফল হলো,
সুতরাং আনন্দ তো করতেই হয়!
সোনাগাছির পতিতা পল্লীতে খবর দেয়া হলো-
সুন্দরী সুন্দরী রমনীর চটুল নৃত্যে মেতে উঠলো মন্ত্রণালয়।
আবার মস্তিষ্কের মাথা খেয়েছে যারা তাদেরও আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হলো।
সব শেষে তাদের জন্য কিছু ভাতা-টাতা,পুরস্কার ও দানখয়রাতের আয়োজনও করা হল।
এদিকে,
শাসকের বিলাসিতা মেটাতে গিয়ে ট্যাক্সের দায়ে
নিম্ন-মধ্যবিত্তের হাঁড়িতে টান পড়ে গেলো।
অফিস ফিরতি আপনাকে দেখে বন্ধু দুঃখের কাহিনী শোনাতে শুরু করেছে।
বলছে_
‘খিদেয় যারা পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো
তারা কেউই কথা রাখে নি;
অনুর্বর সমাজে সুফসলও ফলে নি;
ছেলেমেয়ে গুলো শহরে পড়তে গিয়ে আর ফেরেনি;
তাদের পায়ের তলার মাটি শক্ত হবে কি-না এখনো নিশ্চিত নয়।
বাবা-মায়েরা দিন দিন বয়সের ছাপে কুঁকড়ে পড়ছে;
গালে থোকথোক ঝুলে যাওয়া চামড়া জমাট বেঁধেছে।
সংসার সেবা অথবা মাদক সেবনে
সুস্থ সবল মানুষ গুলোর চামড়া আর হাড়ের মাঝের পেশি খইয়ে ফেলেছে।
গনতন্ত্রের মেলায় গিয়ে ব্যালটও হারিয়ে ফেলেছে,
ক’দিন বাদে পুকুরের জলে তার হদিশ মিলেছে;’
_এসব অভিযোগ শুনে যেই না আপনার যৌন কেশ প্রজ্বলিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে
অমনি,
হুট্ করে রক্তমাংসের কঙ্কালের মতো আপনি উঠে দাঁড়িয়ে
নিজেকে সংযত করে ধীরেসুস্থে ঠান্ডা মাথায় বলে উঠবেন
‘এসব অহেতুক অযৌক্তিক যুক্তির লড়াইয়ে যেও না,সন্তু;
চলো
আমাদের শেষ গাড়িটা ধরতেই হবে কিন্তু!’