শিরোনাম – কিছু কথা কলমে – ছন্দা চট্টোপাধ্যায়
উপন্যাসিকা –
পর্ব-২
কাকলির কথা।
মাঝরাতে বেজে উঠলো ফোন। এ সময়ে ফোন বাজলে ভীষণ অমঙ্গল আশঙ্কা হয়।ধানবাদের এক অভিজাত পরিবারের বড়ো বৌ আমি। শ্বশুরমশায় লব্ধপ্রতিষ্ঠ উকিল। তাঁর চেম্বার বৈঠকখানায় একতলায়। সেখানেই ল্যান্ডফোন।সিঁড়ি বেয়ে ঝড়ের মতো নেমে এলাম। ও পারে শ্রীলার কান্না-‘রাঙাদি, সিগগির এসো মেডিকেলে। তোমার ভাই…’ ।ফোন কেটে গেলো। সেই রাতে কিছুই করার ছিলো না। ভোরের ট্রেনে আমরা দুজন হাওড়া পৌঁছালাম বেলা বারোটায়। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে মেডিকেল কলেজ হসপিটালে। শ্রীর দিদি ইলা, তার স্বামী মনোজ উপস্থিত আছে। ভাইকে ভর্তি করা হয়েছে ইমারজেন্সিতে।
তখন বেলা তিনটে। চারটেয় ভিজিটিং আওয়ার।আমি বললাম,-‘খুকুকে খবর দিয়েছিস শ্রী?’- শ্রী একটু থতমত খেয়ে ওর দিদির দিকে তাকালো। ইলা বললো -‘তাকে খবর দিয়ে কী লাভ? সে তো রেশনের দুটাকা দামের চাল খায়। ভায়ের জন্য দুটি আপেল হাতে করে আসার ক্ষমতা তার নেই।’- আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।কতদূর স্পর্দ্ধা হলে মূমুর্ষু ভগ্নিপতির সামনে এমন উচ্চারণ করতে পারে কেউ! কতটা অশিক্ষিত এবং অহঙ্কারী হলে নিজের বোনকে অপ্রিয় পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে কেউ?এই মূহুর্তে চরম সত্যটা উদ্ঘাটিত হলো। টাকা ছাড়া আর সবাই মূল্যহীন। আমরা
মধ্যবিত্ত এবং শিক্ষিত পরিবারে জন্ম নেওয়া চার ভাইবোন। আমার বড়দার থেকে বারো বছরের ছোট আমি। আমার দুবছরের ছোট বোন খুকু। তার দু বছরের ছোট দীপ। বড়দা বিয়ে করে ফ্ল্যাট কিনেছে গড়িয়ায়।তবে মা যতদিন বেঁচেছিলো মায়ের নামে একটা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছিলো পঞ্চাশ হাজার টাকার মাসে চারশো টাকা মায়ের একাউন্টে পড়তো। বড়ো ছেলে হিসেবে এটাই দাদা কর্তব্য বলে দাদা মনে করেছিলো। বেকার ছোট ভাইয়ের দায় দাদা কেন নেবে?বাবা যেহেতু প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করতেন অবসরকালে কোম্পানি কিছু নগদ দিয়ে বিদায় দেন। দীপের আমাদের মতো পড়াশোনায় মন ছিলোনা।হায়ার সেকেণ্ডারি পাশ করে টিউশনি করতো,কবিতা লিখতো, গিটার বাজাতো আর গিটারের টিউশনিও করতো। এই সময়েই মা একটি সিদ্ধান্ত নেন। প্রখর বুদ্ধিমতী হয়েও মা একচক্ষু হরিণের মতো তাঁর সিদ্ধান্তের বিপজ্জনক দিকটা দেখতে পাননি, বলা যায় দেখতে চাননি। মা একটি হঠাৎ ধনী পরিবারের মাতাপিতৃহীন প্রাইমারি পাশ,সাধারণ দর্শনা শ্রীলাকে দীপের বৌ হিসেবে নির্বাচন করেন।চুক্তি ছিলো তাদের প্রমোটিং কোম্পানিতে দীপকে অংশীদার করে নিতে হবে। আর এখানেই ছিলো সবচেয়ে বড়ো ভুল মায়ের। দীপ বিক্রি হয়ে গেলো, এবং মায়ের বাধ্য ছেলে শালাদের বাধ্য জামাই হয়ে রয়ে গেলো।
মা মারা যাওয়ার পর দাদা একাউন্ট বন্ধ করে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিজের একাউন্টে রিটার্ণ করে। আমার বারাসাতের বাপের বাড়িতে নিজের অংশটি কোন দুস্থ শালার জিম্মাদারিতে রেখেছে। শালা তো দীপকেও
কব্জা করে খুকুর অংশটা লিখে নিয়েছে বৌদির নামে।
ক্রমশ :–