শ্রীরাধিকা জাগো —– গীতালি—–
শ্রীরাধিকা জাগো
—– গীতালি—–
ঐ যে দূরে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি… রুক্ষ চুলগুলো উড়ছে, কবরী থেকে খসে গেছে ফুলের মালাটি, আনমনা…. বারবার দীর্ঘনিশ্বাসে শরীর তার কেঁপে উঠছে। কোনদিকে তার দৃষ্টি? পথের ধারে তমাল গাছটির গায়ে মৃণাল হাত দুখানি রেখে কী খুঁজে বেড়াচ্ছে সে? পৃথিবীর অন্য কোনো দিকে তার দৃষ্টি নেই… একনিষ্ঠ নজরে কাকে সে বন্দী করে রাখতে চায়? প্রাণের গোপনে যে তারে তার সুললিত ছন্দ ছিল, সেই তারে যে এক ভঙ্গুর কাঁপন দেখা যায়।
রাজার দুলালী হয়ে যে গোপবালকের সঙ্গে তার প্রাণের লেনাদেনা, সেই কস্তুরীগন্ধ সমন্বিত পুরুষটির অপসৃয়মান শরীরটির দিকেই আজ তার বিভ্রান্ত দৃষ্টি। কিছুক্ষণ আগেই সেই প্রাণপ্রিয় প্রেমিকটি যে চিরদিনের মত নিজের নারীটিকে ছেড়ে চলে গেছে কর্তব্যের হাত ধরে। ওই ধূলি ধূসরিত পথের প্রান্তে অশ্রুমতী নারীটি তার জীবনের সব সম্বল হারিয়ে রিক্ত নিঃস্ব হয়ে প্রস্তর মূর্তির মত নিথর হয়ে রয়েছে। শ্যামপ্রিয়া শ্রীরাধিকার এই দীর্ণ রূপটি কী সেই শ্যামকান্তি বংশিবাদকের চোখে পড়ল না? রাজকর্তব্য তাকে এতোই নিষ্ঠুর করে দিতে পারল? যে প্রিয়া সমাজ সংসার ভুলে বারবার শত অপমান সহ্য করেও মোহনবাঁশির সুরের আকর্ষণে ছুটে ছুটে প্রেমের কাছে ধরা দিয়েছে তাকে কেমন করে ভুলে গেল সেই প্রেমিকপুরুষটি। নারীর অনুরাগ উপেক্ষা করে, যৌবনের সংরাগ অবহেলা করে নূতন পথের আকর্ষণে এমন করে চলে যেতে হয়? এ কী সঠিক বিচার?
রাধা, তোমার চোখের অশ্রু তুমি এবার মুছে ফেলো। আগুনপাখি বাসা বাঁধুক তোমার মনে। যে প্রিয় তোমার জীবনকে উপেক্ষিত অবহেলায় ভরে দিল, তার জন্য তোমার দুচোখে শ্রাবণ নামিও না। তুমি তো জানো, এর পর থেকে কৃষ্ণের জীবনে তুমি ব্রাত্য। কারণ তাকে তো মহাভারতের মহানায়ক হতেই হবে! ধর্মের জয়পতাকা তাকে তুলতেই হবে! শুধু কৃষ্ণের জীবনে তো না, বিশ্ব সংসারে তুমি ব্রাত্য হয়েই থাকবে। আর কোনো বৈষ্ণব কবি তাদের সুললিত লেখনীতে তোমার জীবন-বেদন আঁকবেন না। অথচ তোমার জীবনের অনেকটা সময় এখনো বাকি। কেমন করে কাটাবে তুমি তোমার নিঃসঙ্গ জীবন? যে রাধিকার কথা আর কেউ বলবে না, তাকে তো নিজের মুখেই উচ্চারণ করে নিজের কথা জানাতে হবে। তাই আগুনে হৃদয়কে অভিষিক্ত করো রাধিকা। তোমার প্রতি ঘটে যাওয়া এই অবিচারের জন্যই তোমাকে জেগে উঠতে হবে, মুখে যথাযথ ভাষা আনো, বিশ্বে ছড়িয়ে দাও তোমার একান্ত অভিমানের জ্বলন্ত আগুন।।
(সম্পূর্ণ কাল্পনিক রম্যরচনা)