পত্রসাহিত্য / কলমে – গীতশ্রী সিনহা
পত্রসাহিত্য / কলমে – গীতশ্রী সিনহা
অতিক্ষা
সময় ঘেঁটে দেখতে গিয়ে দেখি বেশ কিছু অতীত গরুর গাড়ির চাকার মতো গড়িয়ে গ্যাছে… ছিঁড়ে -চুষে তছনছ… মিহি কাচে জ্যোৎস্না ফুঁড়ে শুকনো পাতার শব্দে নি:সঙ্গতা রঙ্গতামাশায় ব্যস্ত ! বসন্ত মাখানো পলাশ ছুঁইনি কতোদিন, তুই – আমি ! বিশ্বের সকল ঋতু-ই ছিল আমাদের বসন্ত! ২৩ – এর বসন্তে তোকে আবার মনে করছি রে অতিক্ষা। হঠাৎ ওঠা ঘূর্ণি ধুলোর ঝড়ের কাছে তোর নামে কিছু লিখে পাঠিয়েছিলাম সে-ই পাঁচ সালের… বসন্তে-ই হয়তোবা ! দূরবর্তী নৌকার পালে আটকে থাকা চিঠি আজও আঙুলে ছোঁয়ানো থুতনির মতো বিভ্রান্ত!
বয়সের তুলনায় আমি একটু বেশি পাকা ছিলাম, পাড়ার স্কুলে তুই -আমি হাত ধরে ভর্তি হতে যাই, ক্লাশ থ্রি -তে নিজেরাই। স্বভাব অনুযায়ী তোর নাম রাখলাম অতিক্ষা, আমি অক্ষরা ! ট্যাপট্যাপ করে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকিয়ে ছিলি বড়দিদিমণির অফিস ঘরে। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই ! আমাদের নামের মানে জিজ্ঞেস করলেন বড়দি, আমি তো প্রস্তুতি নিয়েই গেছিলাম !
বললাম, ” বড়দি, ওর তো পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছে তাই ওর নাম অতিক্ষা ! ” হাই পাওয়ারের চশমা কপালে তুলে গোল্লা গোল্লা চোখে তাকিয়ে থাকেন নির্বাক দৃষ্টিতে ! সে-ই অবসরে এবার আমাকে নিয়ে পড়লাম, বললাম — ” বড়দি পড়তে খুব ভালোবাসি… তা-ই তো দেবী সরস্বতীর নাম আমার নাম ! ”
ব্যাস, হয়ে গেলাম ভর্তি, শুধু অভিভাবক এর সই। তাও হয়ে গেল !
মনে আছে রে অতিক্ষা, বইয়ের ভাঁজে আমরা ক্লাশ চলাকালীন চিঠি চালাচালি করতাম —– মনের কথা বানান ভুলে লেখা ! কাটাকুটিতে বেশির ভাগ লেখাই উদ্ধার করতে পারতাম না ! সেটাও ছিল ভারী মজার ! টিফিন পিরিয়ডে খিলখিলিয়ে হাসি—- বেশিরভাগ টিফিনের রুটি-গুড় মাটিতে তখন গড়াগড়ি।
সারসের মতো গলা বাড়িয়ে দিন এগিয়ে চলছিল বেশ। মৌমাছির খুপরিতে ঠিল পড়ে তুই – আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম ! উড়ে যাওয়ার স্বাধীনতা পাইনি, মধু তো অনেক পরের কথা! লুট হয়ে গেল গোছানো সময়। বড় হওয়ার উদগ্র খিদে সময়কে আমূল-পরিবর্তন করে দিলো।
প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, কলমকে এখন বন্ধুকের হাতছানি মনে করি।
অতিক্ষা, আজ অনলাইন ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ — সব যেন মায়ার চাদর ! চিনি না, জানি না — অথচ বন্ধু ! দেখাও হয়তো হবে না কোনো দিন ! তাও তারা কেমন যেন মায়ায় লেপ্টে থাকা আপনজন ! ৫ সালেও যদি ওয়েবসাইট থাকতো, আমি তোকে হারাতাম না রে! ওয়েব পেজের কোথাওবা ধোঁয়ার মতো তুই ভেসে থাকতি ! তা-ই আগের লেখার চিঠিটা একটু এক্সটেনশন করে ছেড়ে দিলাম ” পত্রসাহিত্য ” হিসেবে। এটাই হয়তো আমাদের ডেসটিনেশন ! ফিরে পেতে চাই soul mate – কে। জমে থাকা ধ্বনি -তাল-লয় প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছে অগোছালো বেখেয়ালি সময়ের ধাক্কায়… আর একটা নতুন জীবন চাই শুধু তোর জন্য।
আশায় অপেক্ষায় থাকলাম রে অতিক্ষা।
তোর ছোট্টবেলার সাথী
অক্ষরা।
—————————-