ছোটগল্প || গহনা এবং…. || ©মোনালিসা সাহা দে

ছোটগল্প

|| গহনা এবং…. ||
©মোনালিসা সাহা দে

সন্দীপ এক প্রতিষ্ঠিত যুবক। তার জীবনে কোনো কিছুরই অভাব নেই। তবু কয়েকদিন হলো সে চিন্তিত। এর কারণ তার সদ্যবিবাহিতা বউ। যে মেয়ে তাকে সবসময় আনন্দে ভরিয়ে রাখত সেই পল্লবী এখন মাঝেমাঝে গভীর রাতের দিকে কেন যে এরকম বিমর্ষ হয়ে যায় সন্দীপ নিজেও বুঝতে পারে না।

ঘটনাটা প্রথম সে মাস খানেক আগে লক্ষ্য করেছে। অত রাতে তার ঘুম সচরাচর ভাঙে না। তবু একই ঘটনা সে দু তিন বার লক্ষ্য করলো বৈকি! এমনিতে আগে পল্লবী সবসময় খুশীতে ডগোমগো থাকতো। নতুন বিয়ে হলে যেমনটা হয় এই আর কি! কিন্তু এখন গভীর রাতে কেন যে সে মনমরা হয়ে থাকে কে জানে! কেমন যেন অদ্ভুত ভাবে সে নিজের দুই হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। আয়নাতে নিজেকে দেখে! যদিও জিজ্ঞাসা করলে কিছু না বলে চুপ করে শুয়ে পড়ে। মজুমদার পরিবারে খুশীর রেশে কি কারও নজর লাগলো বুঝি?

এই তো কিছুদিন আগেই বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে হওয়ায় সকলে আনন্দে মেতে উঠেছিলো। যদিও বিয়ে হয়েছিল আচমকাই। হুট করে পল্লবীকে বিয়ে করে নিয়ে এসে হাজির হয়েছিল সন্দীপ। লোকাল বাসে আলাপ, যাকে বলে প্রথম দর্শনেই প্রেম! স্বজনহীন, গৃহহীন, মেসে থাকা মেয়েটির দুঃখের কথা শুনে সন্দীপের মনে মায়া চলে এসেছিলো। গ্রামের ভিটে বাড়ি বেচে আসা মেয়েটির অল্প সম্বলে কতদিনই বা চলবে? ফোনে কথা শুরু হলো নিয়মিত।

একদিন দুপুরে…

– এই তুমি এভাবে একা কতদিন থাকবে পল্লবী?

– একা থাকা ছাড়া আমাদের মতো অনাথ মেয়েদের আর কোনো উপায় আছে কি?
পল্লবীর গলাটা সেদিন বড্ড ধরা ধরা শোনাচ্ছিল।আহা রে! মেয়েটার চোখে জল এসেছিলো নিশ্চয়!

– আমাকে বিয়ে করবে তুমি?

ওদিকে অদ্ভুত রকমের নীরবতা নেমে এসেছিল। সন্দীপের মন ছটফট করছে। কি উত্তর দেবে পল্লবী? কিন্তু সন্দীপ যে পল্লবীকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা আর ভাবতেও পারছে না।

বেশ কিছুক্ষণ পরে নীরবতা ভাঙলো।

– তুমি কি ভেবেচিন্তে বলছ?

– হ্যাঁ, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি পল্লবী।

– কিন্তু আমি কি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?

– ভালোবাসা কি অত ভেবেচিন্তে হয় পল্লবী? আর তুমি অযোগ্য, এটাই বা ভাবছো কেমন করে? কোনো কিছু বিচার করেই ভালোবাসা হয় না, তাতে ভালোবাসা আটকে রাখা যায়ও না। ভালোবাসা তো শুধু ভালোবাসার জন্যই হয়।

পল্লবী ফোনে কিছুক্ষণের জন্য আবার নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল।

– কি হলো? কি ভাবছ?

– তুমি আমাকে কতটুকু চেনো সন্দীপ? কদিনের আলাপেই…

– যেটুকু চিনেছি তাই যথেষ্ট। আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে তোমাকেই চাই।

এর পরেও পল্লবী চুপ ছিলো।

– এখনও কি ভাবছো তুমি? আমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করব। আমাদের উচ্চবিত্ত পরিবার, আমি নিজে বড় সংস্থায় চাকরী করি। তুমি এ বাড়িতে রাণী হয়ে থাকবে।

– আচ্ছা তবে তাই হবে!

সন্দীপ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছিলো।
– একটা কথা বলব পল্লবী?

– বলো…

– আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি, কোনোদিন মায়ের অবাধ্য হইনি। তুমি শুধু এমন কিছু বোলো না আমায় যাতে আমাকে মায়ের অবাধ্য হতে হয়! আমি পারব না গো। কারণটা জানো তুমি? শুনলে অবাক হবে। আমার মা আমার নিজের মা নয়, সৎ মা।

– সে কী!

– হ্যাঁ। আমি যখন খুব ছোট্টটি, আমার মা কলেরায় ভুগে মারা যায়। তারপরে বাবা এই মাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। কিন্তু এই এতদিন যাবৎ আমি মায়ের কাছ থেকে যা ভালোবাসা পেয়েছি, তাতে কোনোদিন অনুভুত হয়নি যে এ মা আমার নিজের মা নয়। জানো, মা কোনোদিন আমার জন্য নিজের বাপের বাড়িও যায়নি। আমি জানিও না আমার মামাবাড়ি কেমন। শুধু এটুকু জানি যে আমার মা কোনো এক গ্রামের মেয়ে, যেখানে মা আর কখনো ফিরে যেতে চায়নি। মা নিজের কোনো সন্তানও নেয়নি আমার জন্য। বুঝতে পেরেছ তাহলে, আমি মায়ের প্রতি কতটা অনুগত?

– বুঝেছি।

– চলো তাহলে বিয়ে করি। বাড়িতে বলি তোমার কথা।

– বাড়িতে বলবে, তারপরে বিয়ে হবে?

– সেটাই তো স্বাভাবিক!

– একটা কথা রাখবে আমার? শুধু একটা কথা!

– কি?

– আমাকে এখনই বিয়ে করবে তুমি?

– ও মা, সে কী!

– হ্যাঁ, চলে এসো স্টেশনের উল্টোদিকের বড় মাঠে। সকাল থেকেই একটুও ভালো লাগছিল না, তাই মাঠে হাওয়া খেতে এসেছিলাম। আমি ওখানেই বসে আছি। সঙ্গে শাঁখা, সিঁদুর আনতে ভুলো না যেন। আমাকে এই এক কাপড়েই বিয়ে করে নিয়ে গিয়ে আজ ঘরে তোলো। এই মাঠেই আমাকে বিয়ে করো। হয়তো একটু অবাক লাগছে শুনতে তোমার, তোমার মাকে না জানিয়ে তুমি বিয়ে করবে, কিন্তু বললাম যে জীবনে আর কোনো দিন কোনো কিছু তোমার কাছে চাইবো না।

সন্দীপ পড়ে গেলো দোটানায়। কি করা উচিত তার? এভাবে হুট করে বউ নিয়ে ঢুকলে বাড়িতে সমস্যা হবে না তো! কিন্তু পল্লবী তো বললো আর জীবনে কোনো কিছু চাইবে না সে। কিন্তু মা? মা রাগ করবে না তো! অবশ্য সন্দীপের উপর আজ অব্দি কোনো কারণেই তার মা কোনোদিন রাগ করেনি। আর এও তো তো ঠিক পল্লবীকে সে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে।

– কি হলো, কিছু বললে না যে!

– একটু ভাবি আগে।

– তাহলে তুমি ভাবো, আমি মেসে ফিরে যাই।

– না! ওখানেই থাকো তুমি। আমি আসছি। আমি আজই তোমায় আমার ঘরে বউ করে নিয়ে আসব পল্লবী।

ব্যাস! আর কি! বিয়ে হয়ে গেলো হুট করে। আচমকা বিয়ে হলেও মজুমদার বাড়ি আধুনিক মনষ্ক এবং সংস্কারমুক্ত মনের। তারা রীতি নীতি নিয়ে কোনদিনই মাথা ঘামায়নি। তাই এ বিয়ে তারা খুশী মনেই মেনে নিল। সন্দীপের মা এমন চমক পেয়ে সাময়িকভাবে একটু থমকে গেলেও বউকে ভালোবেসেই মেনে নিলেন। এ বাড়িতে তিনিই গৃহিণী। সন্দীপের বাবাও তার উপর কোনো কথা বলেন না। এমনিতে এ বাড়ি হিন্দু বাড়ি, অথচ পুজোপাঠের চল নেই। এক্ষেত্রে অবশ্য মজুমদার গিন্নী অর্থাৎ সন্দীপের মায়ের ভূমিকাই বেশি। পুজোপাঠে তার কোনদিনই মন নেই। তিনি শুধু সংসার করতে আর সাজগোজ করতে ভালোবেসে এসেছেন চিরকাল।

বেশ কিছু দিন কাটলো। পল্লবী অত্যন্ত সুন্দরী এবং গৃহকর্মী নিপুনা, এমন বৌমাই তো তারা চেয়েছেন বরাবর। ছেলে যে কবে মনে মনে পছন্দ করে বসেছিল একজনকে, তা তারা জানতে পারেননি মোটেই। তাই অনাথ মেয়েকে বিয়ে করলেও তার বংশ পরিচয় নিয়েও মাথা ঘামায় নি মজুমদার পরিবার। সন্দীপ নিজেও আশা করেনি পল্লবী এতটা চটপটে ও কাজের হবে, ঠিক যেন তার মায়েরই প্রতিরূপ। শাশুড়ি মাও আশা করেননি তার বৌমার এত গুণ থাকবে। রাঙা হাতে শাঁখা পলা নোয়া, পায়ে নূপুর ও আলতা যা সুন্দর মানায়, সকলের চোখ জুড়িয়ে যায়। মজুমদার গিন্নী নিজেও শাঁখা – পলা – নোয়া – আলতা, ভারী ভারী গয়না পরতে খুব ভালোবাসেন। আর পল্লবীর বেশী গয়না না থাকলেও রাঙা হাতে শাঁখা পলা নোয়া দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। আসলে পল্লবী নিজেও সাজতে খুব ভালোবাসে। তবে অনাথ হওয়ার জন্য তার বেশি গয়না লাভ হয়নি এখনও। তার স্বপ্ন একদিন তারও অনেক গয়না হবে। এমনিতেও শাশুড়ি মা তাকে খুব ভালোবাসে, তার প্রচুর গয়না। বাড়িতেও অনেক গয়না পরে থাকেন তিনি। অল্পকিছু গয়না তিনি তার বৌমাকে ভবিষ্যতে অবশ্যই দেবেন।

তারপরে এলো সেই দিন। যেদিন এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলো এ বাড়িতে। শাশুড়ি আর বৌমার মনোমালিন্য ঠিক কি নিয়ে ঘটে গেল তা এখনও সন্দীপ বুঝে উঠতে পারেনি। সেই সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে সে বাড়িতে পা দিয়েই অনুভব করেছিল যে তার মা ও বৌ এর মধ্যে কিছু একটা বিষয় নিয়ে মন কষাকষি হয়েছে। যদিও আসল ঘটনা সে জানতে পারেনি এখনও। কারণ সেই সময়টাতে তারা বাবা – ছেলে দুজনেই বাড়ির বাইরে ছিল। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত মানুষ হলেও ঘরে তার মন টেকে না। মাঝে মাঝেই তিনি বাইরে বেরিয়ে যান বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। এদিকে সে নিজে তো এখন অফিসের কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে বলার নয়। এদিকে কেউই মুখ খোলেনি। যদিও সন্দীপ জানার অনেক চেষ্টা করেছিল।

– কি হয়েছে মা?

– কি আবার হবে? কিছু না।

– পল্লবী, তুমি বলো কি হয়েছে!

– কিছু তো হয়নি, কি বলব আমি!

– তোমাদের মুখাবয়ব, বাড়ির পরিবেশ বলছে কিছু একটা হয়েছে, এদিকে তোমরা দুজনেই চুপ থাকবে?

এত কিছুর পরেও সন্দীপের জিজ্ঞাসার কোনো উত্তর না দিয়ে দুজনেই যে যার ঘরে চলে গিয়েছিলো। বাবাকে জিজ্ঞাসা করেও কোনো কিছুই আন্দাজ করতে পারেনি সে। তার পর থেকেই সে আরও বেশী ভাবে খেয়াল করে পল্লবী যেন কেমন পরিবর্তিত হচ্ছে!

**

রাত তখন বেশ গভীর। সন্দীপ অঘোরে ঘুমাচ্ছে। পল্লবী আচমকাই উঠে বসলো। নাইট ল্যম্পের আলোয় নিজের হাত জোড়া মন দিয়ে দেখছিল সে। অনেক অনেক দিন আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আজ তার। ছোটবেলার কথা।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলো সে। ছোট থেকেই তাঁর একমাত্র শখ বিয়ে করে সংসার করার, সুখে ঘরকন্না করার।

– মা, আমার যখন বিয়ে হবে আমি খুব সুন্দর সুন্দর শাঁখা পলা পরব। আর অনেক সোনার গয়নাও থাকবে আমার।

– আচ্ছা রে মা, তাই হবে। বাবা! এইটুকু মেয়ে, কত পাকা পাকা কথা!

– এতে পাকামির কি আছে মা? তোমার হাত দুটো কত সুন্দর লাগে! আমি চাই বড় হয়ে আমার হাত দুটোও ঠিক এমনই সুন্দর লাগুক। কিন্তু তুমি গয়না পরো না কেন মা?

– মামণি, আমার কি আর টাকা আছে গয়না কেনার?

– আমি কিন্তু পরব মা।

– ভাগ্যে থাকলে তুই সুখের সংসার পাবি, সঙ্গে অনেক গয়নাও।

~ মা যে কেন অকালে চলে গেল? তারপরে হুট করে কিনা এমন ঘটে গেলো সেদিন আমার সঙ্গে!-
বিড়বিড় করে বলছিল পল্লবী।

– কি হলো তোমার আবার?
সন্দীপের ঘুম ততক্ষণে ভেঙে গিয়েছে।
পল্লবী কিছু না বলে আবার শুয়ে পড়লো।

সন্দীপ ততক্ষণে মনে মনে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, এ বাড়িতে কারও কুদৃষ্টি পড়েছে নিশ্চয়। কিন্তু তার মা যে পুজো পাঠে বিশ্বাসী নয়। তাহলে সে কি করবে? অবশ্য পল্লবীর মধ্যে যে সব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাতে তার কোনো মানসিক সমস্যা হয়েছে, এমনটা হওয়াও অসম্ভব নয়। তবে কি সে তার বউকে একবার কোন মনোবিদের কাছে নিয়ে যাবে? তিনি যদি কোনো আশার আলো দেখাতে পারেন!

না! আর দেরী নয়। কাল সকালেই একজন ভালো মনোবিদের কাছে গিয়ে নাম লিখিয়ে আসতে হবে।
সন্দীপ আবার পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো।

**

তখন ভোর আগতপ্রায়। ঘন কালো অন্ধকার ধীরে ধীরে অল্প অল্প আলোর স্পর্শে কমলা রঙে রঙিন হতে চাইছে। এদিকে পল্লবী তখনও জেগে। সম্পূর্ণ রাত দু চোখের পাতা এক করেনি সে। কোনো এক ভাবনা তার মনকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কি সেই ভাবনা?

না! এ বাড়িতে আর থাকা যাবে না! থেকে কোনো লাভ নেই। যে স্বপ্ন নিয়ে সে এ বাড়িতে এসেছিল, যে স্বপ্ন নিয়ে সে সন্দীপের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিল, তা তো পূরণ হওয়ার নয়। তার সত্ত্বা এবং তার শাশুড়ি মায়ের সত্ত্বা যে সত্যিটা বুঝতে পারার পরে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে! এক্ষেত্রে স্বপ্নপূরণের আশা করাটা বোকামী। তিনি নিজের মোহের দ্রব্য বৌমাকে কি কোনোদিন দিতে পারবেন?

সেদিন সন্দীপের প্রশ্নের উত্তর তারা দুজনের কেউই দেয়নি। কারণ সেই দুপুরে যে তারা দুজনেই দুজনকে চিনতে ও বুঝতে পেরে গিয়েছিল। তারপরেই ঘটে সমস্যার সূত্রপাত। আসলে পল্লবী সংসার করতে পারলেও শাশুড়ির গা ভর্তি গয়নার ভাগ কোনদিনই পাবে না। সন্দীপও মায়ের অমতে কোনো কিছুই করে না, আগেই বলে দিয়েছিল সে। তাই এমন আশা করাটাও আর উচিত না।

পল্লবী উসখুস করছে। একটু হলেও মায়া পড়ে গিয়েছিল তার বরের উপরে। কিন্তু এ মায়াতে জড়ানো তো তার সাজে না।

পাশেই শুয়ে আছে মানুষটা। অঘোরে ঘুমাচ্ছে। পল্লবী এক মুহূর্তের জন্য সন্দীপের কপালে হাত বুলিয়ে দিলো। সেই মুহূর্তে সন্দীপ এক স্বপ্ন দেখছে। তার স্বপ্নে আসছে ছোটবেলায় ঠাকুমার কাছে শোনা পেত্নী ও শাখচুন্নীদের গল্পকথা। ঠাকুমা বলতো, যেসব গহনাপ্রিয় মেয়েরা অবিবাহিতা অবস্থাতে সংসার করার বাসনা নিয়ে অপঘাতে মারা যায় তারা মৃত্যুর পরে শাখচুন্নি হয়ে ওঠে। এরা এমনিতে যে কারো বিশাল কিছু ক্ষতি করে, তা কিন্তু না। তবে এদের মূল উদ্দেশ্য হলো সংসার জীবনে সুখ পাওয়া, এবং গয়না লাভ করা।

সন্দীপ শাখচুন্নির গল্প শুনেছিল বটে, কিন্তু বাস্তবে ঠিক কেমন তারা, তার সম্পূর্ণ নিখুঁত ধারনা সকলের নেই। গল্পের সাথে বাস্তবের কিছুটা ফারাক থাকে বৈকি। তাই তো সন্দীপ এতোদিনেও তার মাকে চিনতে পারেনি! অবশ্য এতে ওকে দোষ দিয়ে লাভ কি? পল্লবীকেও তো সে চিনতে পারেনি। পল্লবীর মা মারা যাওয়ার কিছুদিন পরেই বাবাও চলে গিয়েছিল। তার পরেই তো রেললাইন পার হতে গিয়ে সে নিজেও একদিন…

বিবাহিত জীবনে গা ভর্তি সোনার গয়না পরার মোহ-মায়া পল্লবীকে আবার নতুন করে অন্য সংসার শুরু করাতে চাপ দিচ্ছে আজ। যদিও তেমন সংসার পাওয়া খুব কঠিন, তবু চেষ্টা করে যেতেই হবে! এ মায়ার কাছে যে অন্য সকল মায়া তুচ্ছ। সন্দীপ বরং স্বপ্ন দেখুক, ভোরের স্বপ্ন।

দিনের আলো ফোটার আগেই জানলা দিয়ে উড়ে বেরিয়ে গেলো পল্লবী।

(সমাপ্ত)
© মোনালিসা সাহা দে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *