লিভ – ইন ও কিছু কথা ***** ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়
লিভ – ইন ও কিছু কথা
ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়
সাম্প্রতিক একটি শব্দ আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বেশ জায়গা করে নিয়েছে।
লিভ- ইন !
বিদেশে এই লিভ – ইন ব্যবস্থা বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয়।
এখন আমাদের ভারতবর্ষেও তা বেশ একটি পরিচিত নাম ও জনপ্রিয় তো বটেই।
বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে প্রথম পছন্দ লিভ – ইন !
বিষয়টি যে খারাপ সে কথা হয়তো অধিকাংশ মানুষ ই বলবেন না বরং এই সহবাস শুরু করতে বা শেষ করতে কোনো আইনি ঝকমারি থাকে না , যতক্ষণ ভালো লাগলো থাকলাম আর না পোষালে বেরিয়ে এলাম , যাকে বলে “বন্ধুত্ব পূর্ণ সহাবস্থান ” !
কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই লেখা।
ক্রমশ এই লিভ – ইন সংক্রান্ত ব্যাপারে বেশ জটিলতা দেখা যাচ্ছে ।এমন কি এই সম্পর্কের জেরে মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে । সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনা সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে।
কিন্তু, আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় হয়তো অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন আবার অনেকেই হবেন না।
প্রাচ্য আর পাশ্চাত্য যেন আমরা গুলিয়ে না ফেলি। আমি কোন সংস্কৃতির বিরোধিতা করছি না দুটোরই আলাদা আলাদা মাধুর্য্য আছে।
আমি কোন রীতি কে গ্রহণ করতেই পারি কিন্তু তার আগে আমাকে মানসিক ভাবে তৈরি হতে হবে ।
আমি কেন এই রীতি কে গ্রহণ করবো সেটা আগে নিজেকে জানতে হবে নয়তো যে কোন গ্রহণের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।
অর্থাৎ, আমি বিদেশী এই প্রথাকে গ্রহণ করলাম কিন্তু মননে সেই ট্রিপিক্যাল ইন্ডিয়ান ওম্যান থেকে গেলাম। শত অত্যাচার সহ্য করেও সম্পর্ক থেকে বেরোতে পারলাম না । অবশেষে শারিরীক মানসিক নির্যাতন মেনে নিতে না পেরে আত্মগ্লানি অভিমান অবসাদে নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম অথবা সঙ্গী বা সঙ্গিনীর হাতে নিজের জীবন বিসর্জন দিলাম।
তাহলে এই লিভ- ইন এর সার্থকতা কোথায় ????
প্রশ্ন থেকেই গেলো !
আসলে সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনা এই সব প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে আমাদের সমাজকে ।
এখন শিক্ষিত সমাজ লিভ -ইনকে আদর্শ মনে করেন এই কারণে যে রাষ্ট্র ও আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো করে ব্যক্তিগত সম্পর্কে থেকে যাওয়া বা না যাওয়ার গল্পটা নিজেদের ব্যক্তিগত থাকে।
কিন্তু, আমার কাছে এই ধারণাটাই খুব যেন ঘোলাটে লাগে যেন , ” ধরি মাছ না ছুঁই পানি ” — কারণ যে ভাবে গৃহহিংসা উত্তোরোত্তর বেড়েই চলেছে।
যে কোন সম্পর্কেই তা বিয়ে হোক , প্রেম হোক বা লিভ- ইন যদি সুখ , শান্তি , ভালবাসার , নির্ভরতা বা বিশ্বাসের না হয় সেটা কি আর ব্যক্তিগত থাকে ??
এটা একটা প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে সামনে আসে।
আর যখনই সম্পর্কে ভায়োলেন্স শুরু হয় তখন ই প্রশাসনের দ্বারস্থ হই অর্থাৎ সেই রাষ্ট্রের শরণাপন্ন হই।রাষ্ট্রকে তোয়াক্কা না করে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যে সম্পর্কে র সূচনা হলো সেটা আর ব্যক্তিগত থাকলো না!!
আসলে আমি দ্বিচারিতা করতে পারি না তাই এই প্রশ্নের পোকা আমাকে কুঁরে খায়।
এইজন্যই আমি ” প্রশাসনের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও” – না বলে ” প্রশাসনের সঠিক কাজ করাতে বাধ্য করা হোক ” – এটা বলতেই বেশি ভালবাসি।
আইনি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়াটা কি আমাদের কাম্য ???
১৯৭৮সালে সুপ্রীম কোর্ট রায়ে দিয়েছিল ভারতে লিভ – ইন বৈধ তা যদি–
১) পরস্পরের সম্মতিতে
২) পাত্র-পাত্রী সাবালক সাবালিকা হলে
৩) উভয়েই মানসিক ভাবে সুস্থ হলে।
যদিও ভারতে লিভ- ইন সম্পর্কিত কোন আইন আছে কিনা আমার জানা নেই যদি না থেকে থাকে তাহলে বিবাহ সম্পর্কিত আইন গুলো ই মাথায় রাখতে হবে। তবে তা বিচারকের ইন্টারপ্রিটেশনের উপর নির্ভরশীল।
নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে অনুরোধ লিভ- ইন সম্পর্কে যাওয়ার আগে কিছু ভাবনা মাথায় রেখো।
কারণ , নতুন প্রজন্মের ভাবনা কে স্বাগত জানিয়েই বলছি–
লিভ- ইন আদালতে প্রমাণ করার জন্য যা যা প্রয়োজন–
১) যৌথ ফটো
২) পাড়া- পড়শির একসাথে থাকতে দেখা
৩) জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট, বাড়ি ভাড়া বা কোন সম্পত্তি ক্রয় – বিক্রয়ে দুজনের হস্তাক্ষর অর্থাৎ কিছু কাগজপত্র।
তাহলে দেখো যে রাষ্ট্র ও আইনকে কাঁচকলা দেখালে লিভ- ইন জনিত কারণে তোমার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছ থেকে কোন রকম
অন্যায় অত্যাচার হলে সেই আইনের কাছে ই তোমার কাগজপত্র দেখাতে হবে। তাহলে ব্যক্তিগত থাকলো কি ?
এরপর ও একটা প্রশ্ন
তুমি কি কোন বিবাহিত পুরুষ বা স্ত্রীর সাথে লিভ – ইন করছো ?
তাহলে প্রথমেই তোমার লিভ- ইন সম্পর্ক নাকচ হলো তার কারণ একজন বিবাহিত পুরুষ কিংবা স্ত্রী যেই জন্য আর একটি বিয়ে করলে তা অবৈধ হয় ঠিক সেই অর্থে ই তোমার লিভ- ইন সম্পর্কে বৈধতা থাকলো না ।
এমন অবৈধ লিভ- ইনের জন্য কেউ হয়তো শাস্তি পাবে না যতদূর জানি আড্যাল্টারি আইন উঠে গেছে । অবশ্য আমি ভুলও হতে পারি। কিন্তু সেক্ষেত্রে তোমার সম্পর্কটা অবৈধ ই থেকে গেলো।
যেহেতু সম্পর্কে র কোন বৈধতা থাকলো না তাই তোমাদের একে অন্যের উপর ভায়োলেন্স হলে সেটা এমনিই ভায়োলেন্স।ডমেষ্টিক ভায়োলেন্স নয়।৪৯৮ আওতায়ও আসবে না এমনকি ডমেষ্টিক ভায়োলেন্সের আওতায়ও নয়।
সন্তান উত্তরাধিকার এসবের স্বীকৃতি তো দিনের চাঁদ দেখার মতো । হ্যাঁ তোমাদের দুজনের একজনের যদি এই ভায়োলেন্সের জেরে প্রাণহানি হয় সেক্ষেত্রে একজনের জেল হতেই পারে তবে কতটা কি হবে সেটা বলা খুব শক্ত।
আধুনিক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে কারণ ও আদর্শ কে সামনে রেখে বিয়ের বদলে লিভ- ইন বেছে নেওয়া সেটা আসলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
বরং কিছু নিম্ন মানসিকতার মানুষ এই সম্পর্ক কে হাতিয়ার করে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর উপর যথেচ্ছ অত্যাচার করে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
আসলে বিবাহ শুধু দুটি মানুষের নয় দুটি পরিবারেরও তাই পরিবার বেষ্টিত সম্পর্ক অনেক বেশি নিরাপত্তায় থাকে কিন্তু লিভ- ইন দুটো মানুষের ব্যক্তিগত মতামত এবং সেখানে পরিবারের কোনো ভূমিকা থাকে না কিন্তু মজার ব্যাপার এটাই যখন তোমাদের কেউ একজন অত্যাচারিত হও ততক্ষণ তোমরা ব্যক্তিগতই রাখো তাই হয়তো অবসাদ অবসান হয় জীবন ।কিন্তু সেই পরেই পরিবার এসেই পড়ে তখন আর ব্যক্তিগত থাকে না ।
রথ
তাই প্রেম করো লিভ- ইন করো কিন্তু কিছু কথা মাথায় রেখো…
উপরোক্ত কথা গুলো জেনে রাখা
ভালো।
তথ্যসূত্র সংগ্রহীত