সম্পাদকীয় __ রথযাত্রা :- গীতশ্রী সিনহা।
সম্পাদকীয়
রথযাত্রা :-
আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তে হিন্দু ধর্মের এক মহান ধর্মীয় তথা মানবিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয় শ্রীজগন্নাথ দেবের রথযাত্রা কে উপলক্ষ্য করে। ব্রহ্মপুরাণ, স্কন্দ পুরাণ ও কপিল সংহিতায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
এ যেন এক অনন্ত যাত্রা, যেন মানুষকে মনে করাতে চায় যে, জীবনের যাত্রা কখনো থামে না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা চলতেই থাকে। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা যেন সেই সময়ের যাত্রাকেই সূচিত করে, জীবনের চলমানতাকে বোঝায়।
জগতের নাথ তাঁর অগ্রজ বলরাম ও অনুজা সুভদ্রা কে সঙ্গে নিয়ে এবং অবশ্যই আপন সুদর্শনের সাথে রথে অধিষ্ঠিত হয়ে মূল মন্দির থেকে বেরিয়ে গুন্ডিচা মন্দির এর দিকে যাত্রা করেন। পথে তাঁর রথ নন্দীঘোষ কিছুক্ষণের জন্য তাঁর মুসলমান ভক্ত সালবেগের সমাধির পাশে দাঁড়ায়। এখানেই জগন্নাথ দেব সর্বধর্ম-সমন্বয়ের সংকেত প্রদান করেন তাঁর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এর মাধ্যমে। গুন্ডিচা মন্দির থেকে তাঁরা প্রত্যাবর্তন করেন আষাঢ়ের শুক্লা দশমীর দিন।
যাত্রার কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যায়– মন্দিরে আবদ্ধ না থেকে প্রভু বা ঈশ্বর জগত জনের কাছে আপনি প্রকট হওয়ার জন্য মন্দিরে বাইরে আসেন। লক্ষ লক্ষ ভক্তকে দর্শনাভিলাষী ভক্তকে দর্শন দিয়ে তিনি আপন করে নিতে চান মানবকুলকে। কথিত আছে, একদা রাজা কংস বৃন্দাবনে রথ পাঠিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম কে মথুরায় আনার জন্য। অক্রূর ছিলেন সারথি, এবং কংসের উদ্দেশ্য ছিল এই ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রাণনাশ। পরবর্তীকালে সেই দিনটিকেই রথযাত্রার দিন হিসাবে গণ্য করা হয়— জগন্নাথ দেব সেইদিনই রথযাত্রার দিন নির্ধারণ করেন।
রথ যাত্রার গুরুত্ব অপরিসীম! স্বল্প পরিসরে তা জানানো অসম্ভব। তাই সংক্ষেপে বলি, জগন্নাথ দেবের রথ যেন আমাদের মানব দেহ — যার রথী ঈশ্বর স্বয়ং। রথটি তৈরি হয় ২০৬ টি কাঠ দিয়ে, ঠিক যেমন এই মানব দেহ ২০৬ টি হাড়ে তৈরি হয়। রথের ১৬ টি চাকাকে আমরা ধরে নিতে পারি– ৫টি জ্ঞানেন্দ্রিয়, ৫টি কর্মেন্দ্রিয় ও ৬টি রিপুর প্রতীকরূপে। রথের যে সুবিশাল রশিটি থাকে, তা হল আমাদের মন ; এবং বুদ্ধি রূপী সারথি অধিষ্ঠিত থাকেন রথে। জগন্নাথ দেব রথে অধিষ্ঠিত হয়ে ভক্তদের মাঝে উপস্থিত হয়ে তাঁর অপার করুণা বিতরণ করেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, জগন্নাথ দেব মূল মন্দিরে প্রত্যাবর্তনের পরে ওই রথ গুলিকে ভেঙে ফেলা হয়। এরপরে টুকরো গুলিকে রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ঠিক তেমনই, মানুষের মৃত্যুর পরে তার শরীর থেকে আত্মা বা ঈশ্বর বেরিয়ে গেলে তার নশ্বর দেহটিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
জগন্নাথ দেব নিজেই এক পরম বিস্ময়! একদা নীলমাধব নামে পূজিত হতেন যিনি, তিনিই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্বপ্নের কারণে এই বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করে শ্রীক্ষেত্র পুরীতে অধিষ্ঠান করেন বহুকাল ধরে। তার বিষয়ে এত কিছু জানার আছে, যে বলার নয়! এই ছোট্ট পরিসরে তাঁর এবং তাঁর রথ যাত্রার মাহাত্ম্য এই টুকুই রইল।
প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখে আজকের সম্পাদকীয় কলমে আছেন অতি পরিচিত নাম, যিনি প্রতি সংখ্যায় বিভিন্ন চেতনার লেখা নিয়ে আছেন, গীতালি ঘোষ। আমার স্নেহের এবং প্রিয় কলম।
আজ তবে এইপর্যন্ত থাকলো। আগামীতে ফিরছি নতুন ভাবে।
শুভকামনা শুভেচ্ছা ভালোবাসা নিয়ে গীতশ্রী সিনহা।