স্পর্শ (৩) ✒️✒️ সুদেষ্ণা সিনহা
![](https://www.dinajpurdaily.com/wp-content/uploads/2021/03/valentines.jpg)
স্পর্শ (৩)
সুদেষ্ণা সিনহা
আম্মু এলেই চেনা হাতটা তার শরীরে ঘুরতে থাকে।উঠে বসে হাতটা চেপে ধরে সে। তারপর নাকের কাছে এনে ঘ্রান নেয়।সেই চেনা স্পর্শ তাকে পাগল করে দেয়। বুকের গন্ধ নিতে নিতে মাকে জড়িয়ে ধরে সে।
“আম্মু,আম্মু আমার?”
“বেটা সারাদিন কি করসো?”
পুলু বলে,” কাম পারি নাই।তাই বয়ে বয়ে দিন কাটে আম্মু?”
” তবে কি করলা সারা দিনমান?”
“এই তো উঠসি বসসি।আর তুমার লগে লগে চিন্তা করসি।”
কোন কোনদিন আম্মুকে আঁকড়ে ধরে সে।”না যাইব না আম্মু।আইজ কামাই দাও আম্মু।”
” হেখানেও এক বুড়া বাপ । তারেও মায়া হয় বাপ।নইড়তে চইড়তে পারে না,অসহায়,বুড়ামানুষ। আমি না গ্যালে সেও স্বস্তি পায় না রে বাপ!”
মাথা নাড়ে পুলু,”ঠিক কতা,আম্মু…”
আম্মু বুড়া দাদুর গল্প শুনিয়েছে তাকে।”বুজছসনি পুলু বড় মাপের চাকরি কইরতেন দাদু।তার পোলা বিদেশে বড় চাকুরী করে। ওই দ্যাশে মেমসাহেবকে বিহা কইরা ওইখানেই বাড়িঘর কইরা থাকছে। এদেশে ফিরব না আর কুনোদিন।বুড়া দাদুর বউ নাই। নিজে ওঠাচলা করতে পারে না। অহন কাজের লোকজন দিয়াই সংসার চালায় তিনি । তর আম্মুর মতো আরেক জন আছে হেইখানে। সে রান্না বান্না করে,বাসন ধোয়। সেই মাসি সবসময় থাইকা যায় বুড়াদাদুর সনে।আর আমি এহন বুড়া দাদুরে খাবার খাওয়াই,জামাকাপড় বদলাই,কখনো কাঁধে বালিশ দিয়া উঠাইয়া বসাই।
বুড়া দাদু তার আম্মুরে মাইয়ার মতো ভালবাসে,বুঝছসনি। তিনি কইছেন,”তুই চিন্তা করবি না। তোর ছেলের চোখের অপারেশনের টাকা আমি দেব। ”
বুড়া দাদু তাদের সংসার নিয়ে অনেক ভাবেন। রাবেয়া পুলুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”অপরেশন হলি তহন সব দ্যাখতি পাবি বাপ।দু চোখ ভইরা দ্যাশটাকে দ্যাখতি পাবি। কি মজা হইব তহন আমার পোলাডার,ক!”
রাবেয়ার বুকের মধ্যে মুখ লুকায় পুলু।আলোর মুখ দেখতে চায় সে।গাছ-পালা,নদী-নালা,আকাশ-বাতাস ,চাঁদ-তারা সব কিছু দেখতে চায় সে। তখন পাড়ার মাদ্রাসাতে ভর্তি হবে সে। আনন্দে,আবেগে তার দু’চোখ জলে ভরে যায়। রাবেয়ার বুকের গন্ধে শ্বাস নিয়ে পুলু জড়িয়ে ধরে তার আম্মুকে। ”আম্মু ও আম্মু কি মজাডা হইবো! আমি সব দেখতি পাব,না? তোমারেও দেখতি পাব ,তাই না আম্মু ।”