গল্প-: “খেলাঘর” কলমে-: সুলতা পাত্র

গল্প-: “খেলাঘর”

কলমে-: সুলতা পাত্র

প্রথম পর্ব

*************************

অশোক ও রনিতা থাকেন রানী কুঠিতে নিজস্ব বাড়িতে। এক ছেলে অমলেশ ও রাইমা কে নিয়ে সুখের সংসার। অশোক টেলিফোন অফিসে চাকরি করতেন। ছেলে অমল স্টেট ব্যাংকের ম্যানেজার, বৌমা সুমনা স্কুল মিস্ট্রেস, মেয়ে ইন্সুরেন্স অফিসার।

বৌমাকে পেয়ে অশোক ও রনিতা খুব খুশি। সুমনা বাড়ির কাজকর্ম নিজে হাতে করতে পারে না ঠিকই। তবে শ্বশুর-শাশুড়ির শরীরের প্রতি নজর রাখা, ননদ রাইমার কোন প্রকার অসুবিধা যেন না হয়, স্বামীর অফিস যাবার সময় হাতের কাছে সবকিছু এগিয়ে দেওয়া এসব দিকে নজর থাকে সুমনার।

অমলেশ টালিগঞ্জ ফাঁড়িতে স্টেট ব্যাংক এর ম্যানেজার। সকাল দশটায় গাড়ির ড্রাইভার অমলেশকে নামিয়ে দিয়ে, চেতলা গার্লস স্কুলে সুমনাকে পৌঁছে ফিরে আসে। আবার বিকেলে প্রথমে সুমনাকে আনতে যায়,পরে অমলেশ কে নিয়ে বাড়ি আসে।
রাইমা তার বাবার গাড়ি করে অফিস যায় ও বাড়ি ফেরে। অশোকের বন্ধু বিনয় তিনিও এক সময়ে টেলিফোন অফিসে চাকরি করতেন, বর্তমান উনার ছেলে প্রদীপ যাদবপুর কলেজের প্রফেসর। বিনয় ও উনার স্ত্রী রনিতা বেশ কিছুদিন আগে অশোকের বাড়িতে এসেছিলেন, সাথে ছেলেকেও এনেছিলেন।
বাড়ি ফিরে বিনয় ফোন করে বলেন,-‘তোমার মেয়েকে আমার ছেলের খুব পছন্দ হয়েছে। যদি ওদের বিবাহিত সম্পর্কে আবদ্ধ করা যায় কেমন হয় অশোক’?
‘এ তো খুব ভালো প্রস্তাব দাদা। আমার ছেলেমেয়েরা কেউ প্রেম করতে পারল না। সেটাই আফসোস থেকে গেলো এই আর কি’।

‘হা-হা-হা। সে তো আমার ছেলে ও পারল না বিনয়। কি আর করা যাবে বলো। রাইমা সত্যি খুব মিষ্টি মেয়ে। আমার গিন্নি তো তোমার মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেদিন একা যেভাবে আমাদের টিফিন পরিবেশন করলো, আমরা তো দেখে অবাক হয়ে গেছি। তারপর কফি তৈরি করে এনে দিলো। কফির কাপে চুমুক দিয়ে,সকলে সত্যি খুব তৃপ্তি পেয়েছি’।
‘দাদা রাইমা চমৎকার রান্নাও করতে পারে’।
বিনয় বলেন, -‘ তাই নাকি’?………..

এই বিয়েতে রাইমার ও মত ছিলো। বিয়ের আগে প্রদীপের সাথে কয়েকদিন দেখা হয়েছিলো, আর মাঝে মাঝে হতো ফোনে কথোপকথন। কথাবার্তায় রাইমার ভালোই লেগেছিল প্রদীপকে।

দুই বাড়ি থেকে নির্বাচিত দিনে বেশ ধুমধাম করে প্রদীপ ও রাইমার বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ি ভবানীপুরে বেশ কয়েক মাস ভালো কাটলেও তারপর দিনগুলো বা সময়গুলো কিন্তু মানষিক অশান্তিতে কাটছিলো রাইমার।
বিয়ের পর সে চেয়েছিল তার সন্তান আসুক তাদের জীবনে। বিয়ের ছয় মাস পর রাইমা প্রেগন্যান্ট হয় এবং সানন্দে সেই খবর প্রদীপকে ও রনিতাকে জানায়। প্রদীপ খুশি হলে ও খুশি হতে পারেননি রনিতা।

রনিতা বলেন, -‘ তুমি এখনই বাচ্চা নেবে আশা করিনি। আমার এত কম বয়সে আমাকে কেউ ঠাম্মি বলে ডাকবে এটা কি মানা যায়? আমি মহিলা সংগঠনের প্রধান, সকলে যখন জানবে কি বলবে আমায়? তুমি বাচ্চাটা নষ্ট করে দাও, কয়েক বছর যাক তারপর বাচ্চা নিও’।
রাইমা শাশুড়ির এহেন মন্তব্যে অবাক হয়ে যায়। বলে, -‘তা হয় না মা এ কোন পাপের ফসল নয়। আমার সন্তান যে আসছে, তাকে তার মা চায়। এর ওপর অন্য কারো কোন প্রকার সিদ্ধান্ত আমি মানবো না’।
একদিন প্রদীপ বলে রাইমাকে,-‘কেন এত অশান্তি করছো বলোতো? মা যেটা চায় সেটাই তো করতে পারতে। আমরা মায়ের মুখের উপর কেউ কথা বলি না। বাবা শুনলে ও একই কথা বলবে আমি যা বলছি’।
‘ছিঃ প্রদীপ তোমার মুখে এই কথা শুনবো আমি আশা করিনি। তুমিও চাও না আমি মা হই’!
প্রদীপ উগ্র আধুনিক মায়ের সন্তান, এবং মাতৃভক্তিটা তার মধ্যে বহুল পরিমাণে বিদ্যমান। তাই তার পক্ষে এমন কথা বলাটাই স্বাভাবিক। একবার যদি প্রদীপ ভেবে দেখতো, রাইমার মনের অবস্থাটা কেমন হবে এই কথা বলার পর, তাহলে নিশ্চয়ই এই ধরনের মন্তব্য করত না।

রাইমা প্রদীপকে জানিয়ে দেয়, -‘তোমরা যে যাই বলো না কেন, আমার সন্তান ঠিক আসবে এই পৃথিবীর আলো সে দেখবে’।
বিনয় সবকিছু শুনেও না শোনার ভান করে আছেন। কারণ রনিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো ক্ষমতা বা ইচ্ছে ওনার নেই। স্ত্রীর সাথে সংঘাত ওনার ঠিক পছন্দ নয়। তাই স্ত্রীর সম্পর্কে কোন অভিযোগও নেই।

*************************

ক্রমশ আগামী পর্বে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *