# দিবস কেন যে এলো না # – ৪ কলমে – অরণ্যানী
# দিবস কেন যে এলো না # – ৪
কলমে – অরণ্যানী
সবুজ আলো জ্বলজ্বল করছে শ্রেয়া, লাবণ্য, সুমনদা, সকলেরই ম্যাসেঞ্জারে। চাইলে ফোনে দুটো কথা বলা যায়। কিন্তু স্মৃতিচারণে কী লাভ? তবুও ফোনটা বেজে উঠল। পূণ্যর ফোন। নীলমের বড় জায়ের বড় জামাই।
— কেমন আছো নীলম আন্টি?
—- ভালো। তোরা ভালো আছিস? ঐশ্বর্যা?
—- হ্যাঁ, তিতাস আর তিতলি? ওরা এসেছে এরমধ্যে?
—– হ্যাঁ, তিতলি এসেছিল।
ফোনে কিছু পারিবারিক খোঁজ খবর চলল কিছুক্ষণ। তিতলি আর তিতাস নীলমের দুই ছেলে মেয়ে। ছেলে কখন কোথায় কী খেয়ালে থাকে ঠিক নেই। অনেক দিন হয়ে গেল আসেই না। গান আর নিজের কেরিয়ারে ব্যস্ত। তবু ভালো, তিন নম্বর বিয়েটা শেষ পর্যন্ত টিকে গেছে। ওরা ভালোই আছে। তিতলিই মাঝে মাঝে এসে মায়ের খোঁজ নিয়ে যায়। যদিও তিতলি তিতাসের থেকেও অনেক বেশি গানের জগতে নাম করতে পারত, কিন্তু তিতাসেরই আগের পক্ষের ছেলেটার দায়িত্ব ওই বয়সে নিজে নিয়ে অতটা আর কেরিয়ার করে উঠতে পারেনি। মেয়েরা কি পারে না স্নেহের টানকে অস্বীকার করে নিজের কথা ভাবতে? নীলমের মাথায় হঠাৎই আবারও সেই একই চিন্তা ঘুরে ফিরে এলো। সমাজসেবী, রাজনীতিক, মনোচিকিৎসক, চিকিৎসক, কত কিছু হিসাবেই তো কাজ করল সেই ষোলো সতেরো বছর বয়স থেকে। তবুও কি কিছু করা হলো? কে আমি? কী করতে পেরেছি? কতটুকু? এইসব নেগেটিভ চিন্তাগুলোই ঘুরে ফিরে মাথায় আসে । সুদীপ্তদা যতদিন ছিলেন, ততদিন অনেক বোঝাতেন পজেটিভ দিকগুলো সম্পর্কে। আজ শুধু স্মৃতি হয়েই আছে তার কথাগুলো। তবুও সেল্ফ কাউন্সেলিং করার জন্য মাঝে মাঝে সুদীপ্তদার কথাগুলোই মনে মনে আওড়ায় আজও। পঁচিশ মিনিট পার হতে চলল ঘড়ির কাঁটা। নীলম রান্নাঘরে ভাত দেখতে চলে গেল।
আজকের দিনটা শুধু নিজের সঙ্গে নিজেরই। অন্য কোনো প্রোগ্রাম তাই ইচ্ছা করেই রাখেনি নীলম। কিন্তু গ্রামের ডাক্তার সে দীর্ঘদিন ধরে। খাওয়া শেষ করে উঠতেই একটি মলিন চুড়িদার পরা মেয়ে এসে দাঁড়াল খোলা দরজার সামনে। নীলম জিজ্ঞেস করল — কিরে চন্দনা, কী হলো?
চন্দনা নীলমের খুব কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলল। বলে উঠতে পারল না। নীলমের অভিজ্ঞ চোখে কিছু ধরা পড়ল। তবুও ভুল হতে পারে ভেবে জিজ্ঞেস করল, কারুর কিছু হয়েছে?
চন্দনা চোখের জল সামলে বলল, আমার।
-— কী?
—- সে আমি নিজের মুকে বলতি পারব নিকো।
নীলম বুঝল ওর আন্দাজই ঠিক। এই মেয়েগুলোকে হাজার বার বুঝিয়েও কোনও কাজ হয় না। সেই একই ভুল! বিরক্তি আসে মনে। তাই তো ভাবছিল, কী করল তবে সে এতদিনে?
মেয়েটিকে পাশের ঘরে বসতে বলে এঁটো বাসন গুলো চটপট মাজতে মাজতে আবারও সেই কৈশোরের দিনগুলোর কথা নীলমের মনে পড়ে গেল। কত অবুঝ ছিলাম, জেনে বুঝে কত ভুল করেছি। আজকাল আমাদের শ্রেণীর মেয়েদের আর এ ভুল হয় না। কিন্তু সত্যিই কি ভুল ছিল সব? ভালোবাসা তবে কী?
(ক্রমশ)