পয়লা বৈশাখের উদযাপন মাঠ ও বইপাড়ায় = জয়দীপ ব্যানার্জী

পয়লা বৈশাখের উদযাপন
মাঠ ও বইপাড়ায়
==================
জয়দীপ ব্যানার্জী
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তার মধ্যে দুর্গা পূজা ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন সবিশেষ মাত্রাবহ।নানা আঙ্গিকে ও বৈশিষ্ট্য সহকারে পালিত হয়। তার মধ্যে কলকাতা ময়দান ও কলেজ স্ট্রিট বই পাড়া অঞ্চলে যে রকম বর্ণময় উদযাপন তার তুলনা মেলা ভার।
বস্তুত কলকাতা গড়ের মাঠ ও কলেজ স্ট্রিট বই পাড়া জগৎ গোটা দুনিয়ার কাছে অত্যন্ত আকর্ষনীয়। কারণ গড়ের মাঠে এতগুলি ডিভিশন , এত ক্লাব নিজস্য টেন্ট ও মাঠ নিয়ে বিরাজ করছে যা সবদিক থেকেই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
কত রকমের স্পোর্টিং ইভেন্ট চলে সারা বছর ধরে। গোটা বাঙালি জাতির স্বাস্থ্য সম্পদ প্রতিফলিত হচ্ছে।
অন্য দিকে বাঙালির মেধা মনন বিভূষিত প্রজ্ঞা ও সৃজনশীল চেতনার বিকাশ ও প্রকাশের ক্ষেত্র মাধ্যম হলো কলেজ স্ট্রিট বই পাড়া।এত ছোট মাঝারি ও বৃহৎ প্রকাশক এবং ডিস্ট্রিবিউটর একটাই অঞ্চলে ডেরা বেঁধে কাজ করছে যার তুলনা মেলা ভার এই জগৎ সংসারে।
এই নিবন্ধে ময়দান ও কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে বাংলা নতুন বছরের আবাহন কিভাবে হয় তার একটি ঝলক উপস্থাপনা করা হলো তথ্য নিষ্ট ভাবে।পইলা বৈশাখ বাঙালির জীবনে এক আবেগ মন্থন কারি দিন। বঙ্গজিবনে নতুন করে বাঁচার আনন্দ প্রেরণার আলোক স্তম্ভ স্বরূপ।
নতুন বছরের শুরুতে একদিকে যেমন কলকাতা ময়দান জুড়ে সাড়া পরে যায় সব ক্লাবে। তেমনি কলেজ স্ট্রিট বই পাড়া তে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী।
শরীর বৃতীয় অর্থাৎ স্পোর্টস গেমস এর সঙ্গে জড়িত মানুষদের কাছে পৈলা বৈশাখ বিশেষ তাৎপর্য পূর্ণ । আবার মেধা মনন এর চর্চা যারা করে অর্থাৎ শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সবাই জড়ো হয় বিভিন্ন প্রকাশকের দফতরে।
ময়দানে সব বিগ ক্লাব এদিন বার বা গোল পোস্ট পুজো করে। মাঠের মাঝখানে পুরোহিত পুরো টিমের খেলোয়াড় কোচ ট্রেইনার কর্মকর্তাদের নিয়ে গোল করে বসে পুজো হোম করে । সারা মরসুম যাতে টিম ভালো খেলে সব টুর্নামেন্টে তার জন্য সপথ গ্রহণ করে । তারপর চলে সদস্য সমর্থক ক্লাব কর্তাদের মিষ্টিমুখ। সব শেষে প্রাক্তন ও বর্তমান সকার স্টারদের মধ্যে প্রদর্শনী ম্যাচ। গোটা একটা দিন এই চাদি ফাটা গরমে নানা আনন্দ অনুষ্ঠান ও খেলার মধ্যে কেটে যায়।
শুধু বড়ো ক্লাবগুলো নয়, ছোট মাঝারি সব ক্লাব এই ভাবেই যাত্রা শুরু করে সারা মরসুমের সাপেক্ষে।
অন্যদিকে কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে সব নামী ও অনামী প্রকাশক এবং ডিস্ট্রিবিউটর এদিন তাদের নিজস্য সংস্থার কবি লেখক শিল্পী দের আপ্যায়ন করে । গল্পঃ আড্ডা জমাটিয়া খানা পিনার মাধ্যমে শিল্প সাহিত্যের রস সিঞ্চন করে। পাঠক পাঠিকা যথেষ্ঠ সংখ্যক আসে অনেক টা বই মেলার মত লেখক প্রকাশক ও পাঠকের মধ্যে ভাব বিনিময় ঘটে দফতরের কুঠুরিতে।
এছাড়া কলেজ স্কোয়ারে চলে বই মেলা। গিল্ড এর উদ্যোগে এই মেলা সব অর্থেই খাটি বই মেলা। বই আর বই অন্য কোনো কিছু এই মেলায় ঠাই পায় না। যথার্থ বই প্রেমী সাহিত্য মনস্ক মানুষজন আসে বই কেনে প্রিয় কবি লেখক শিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। নববর্ষে এটাই বড়ো পাওনা।এর সঙ্গে আর একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় জুড়তে হবে। মাঠ ও বই পাড়া দু জায়গার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নববর্ষে অঙ্গাঙ্গী।
কলকাতা মাঠে ১ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল সব ডিভিশনের সব ক্লাব পছন্দের খেলোয়াড়দের সই করিয়ে নেয়।মোটামুটি টিম তৈরি করে নববর্ষে মাঠে হাজির করায় এবং পুজো করে টিমের যাত্রা শুরু করে।
অন্যদিকে কলেজ স্ট্রীটে হয় নতুন বই প্রকাশের পালা। নামী অনামী লেখক সাহিত্যিক কূল প্রকাশকের ঘর থেকে সদ্য প্রকাশিত বই নিয়ে পাঠকদের মুখোমুখি হয় এবং পার্শ্ববর্তী বই মেলা প্রাঙ্গণে যায় আলোচনা করে।
কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলার পাশাপাশি নববর্ষের এই বিশেষ বই মেলাও সাহিত্য সংস্কৃতি জগতে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞান স্বরূপ।